Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই সন্তানের সঙ্গে আচরণ যেমন হবে

প্রথম সন্তান একাই সব মনোযোগ ও আদর পায়, যত দিন তার ছোট ভাই বা বোন না আসে। দ্বিতীয় কেউ এলে স্বাভাবিকভাবেই সে কিছুটা সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। মা–বাবার কাছ থেকে মনোযোগ ও আদর ভাগাভাগি, মায়ের কাছাকাছি ছোটটির অবস্থান তাকে কখনো হিংসাত্মক কিংবা বিষণ্ন করে তোলে। দুই সন্তানের চাওয়া-পাওয়া, সময় দেওয়া, লেখাপড়া, খাবার, খেলাধুলা সব মিলিয়ে মা–বাবা নতুন টানাপোড়েনে পড়েন। কখনো কখনো প্রথম সন্তানকে মা-বাবা যেভাবে বেড়ে তুলেছেন, দ্বিতীয় সন্তানকেও ঠিক সেভাবেই বেড়ে তুলতে চান। মা-বাবা হিসেবে তাঁদের চাওয়াটা কতটা যৌক্তিক?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ মনে করেন, প্রথম সন্তান জন্মের সময় একজন মায়ের মানসিক পরিপক্বতা এবং অভিজ্ঞতা দুটোরই ঘাটতি থাকে। সন্তানকে বড় করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর সঙ্গে বুঝে কিংবা না বুঝেই বিভিন্ন আচরণ ও অভ্যাস গড়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারেন, কোনটি শিশুর জন্য ভালো আর কোনটি খারাপ। আর সেই সঙ্গে অন্যদের অভিজ্ঞতা, গুরুজনদের পালন করা রীতিনীতি থেকেও মা শিখে বা জেনে নিতে পারেন ।

যেমন আচরণ বা অভ্যাস তিনি বড় সন্তানের সঙ্গে করেছেন, ঠিক একই রকম ছোট সন্তানের সঙ্গে করার অবকাশ নেই। যে আচরণ বড় সন্তানের জন্য কোনো ভালো প্রভাব ফেলেছে, সেটি ছোটটির জন্য প্রয়োগ করা যেতেই পারে। কিন্তু যে আচরণ বড় সন্তানের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, সেটি না করাই উচিত। মাকে সচেতন থাকতে হবে, বুঝে নিতে হবে কোনটি করা উচিত।

খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর সঙ্গে আচরণ যেন স্বাভাবিক ও সাবলীল হয়। সব শিশুর বিকাশ একই রকম হয় না। শিশুর বিকাশ, আচরণ, চঞ্চলতা, রাগ, জেদ, মেধা, অভিমান ও ব্যক্তিত্ব আলাদা। কাজেই ঢালাওভাবে একই আচরণ দুজনের জন্য করা ঠিক না।

নতুন ভাই বা বোন আসায় অনেক সময় বড় শিশুর ভেতরে হিংসাত্মক বা আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা দিতে পারে। সেটি এড়ানোর জন্য গর্ভাবস্থা থেকেই মাকে জানাতে হবে তার ভাই বা বোন আসছে। তাকে আদর করা, কোলে নেওয়া, ছোট ছোট কাজ যেমন মুখ মুছে দেওয়া, খাবার এগিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কাজে তাকে লাগাতে হবে। শিশুটি যেন পরিবারে তার গুরুত্ব বুঝতে পারে, তাহলে তার নিজেকে মানিতে নিতে সুবিধা হবে। কিন্তু কোনোভাবেই অনেক কাজের বোঝা চাপানো যাবে না।

ছোট শিশু জন্মের পর বড় শিশুকে কম আদর করা একেবারেই ঠিক না। ভাই বা বোনের কাছাকাছি তাকে যেতে দিতে হবে। আদর করতে দিতে হবে। মায়ের অসুস্থতা, মানসিক চাপ, ঘুম কম হওয়া, অস্বস্তি কিংবা যত সমস্যা হোক শিশুর সঙ্গে বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। শিশুর সঙ্গে হাসিখুশি থাকতে হবে এবং বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের আচরণ আদরমাখা হতে হবে। শিশু বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেবে।

একই কথা বলেছেন ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি আরও মনে করেন, কিছুটা বড় শিশুদের ক্ষেত্রে যারা দুজনই বিদ্যালয়ে যায় এমন শিশুরা মানসিক চাপ ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে। বিদ্যালয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করা, অন্য বন্ধুরা বাড়িতে চলে গেলেও অপর ভাই বা বোনের ছুটি না হওয়া, অভিভাবক দেরিতে আসা, বিভিন্ন কারণে এমনটা হতে পারে। আদর করে বুঝিয়ে বললে এই সমস্যা থেকেও মুক্তি মিলবে।