Thank you for trying Sticky AMP!!

দোলনচাঁপায় চেপে

দোলনচাঁপা বাসে যাত্রীরা। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

‘কেনাকাটা শেষে আম্মু আর আমি বেশ কিছুক্ষণ সিএনজি ধরার চেষ্টা করি। না পেয়ে পরে বাসে ওঠার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু ভিড় ঠেলে উঠতে সাহস হয়নি। হঠাৎ দেখি, একটি বাসের পেছনে লেখা দোলনচাঁপা মহিলা বাস সার্ভিস। কোনো কিছু না ভেবেই দৌড়ে বাসে উঠে পড়ি।’

এভাবেই নারীদের জন্য চালু হওয়া বেসরকারি বাসে চড়ার অভিজ্ঞতার কথা শোনান ঢাকা কমার্স কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আনিকা তাবাসসুম। তাঁরা মিরপুর ১০ নম্বর থেকে এ বাসটিতে ওঠেন। আনিকার মা রুনা বেগম বলেন, ‘বেশ গরম। হাতে কয়েকটা ব্যাগ। কোনো গাড়িও পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ আনিকা অনেকটা চিৎকার করে বলে “আম্মু দেখ, মহিলা বাস।”’

রাজধানীর নারীদের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমাতে গত ২ জুন মিরপুর ১২ নম্বর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দোলনচাঁপা নামে একটি বাস চালু করে বাংলাদেশের র‍্যাংগস গ্রুপ এবং ভারতীয় ভলভো আইশার ভেহিকেল লিমিটেড। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাসটি চলে।

দোলনচাঁপা বাসের খোঁজখবর নিতে গত শুক্রবার এই প্রতিবেদক মিরপুর ১২ নম্বর যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাসের কোনো কাউন্টার পাওয়া যায়নি। এমনকি বাসটি চলাচলের সময়সূচি জানা যায়নি। তবে অন্য বাসের সুপারভাইজাররা জানান, মাঝেমধ্যে বাসটিকে চলতে দেখা যায়। এভাবে ঘণ্টা দুই এদিক-সেদিক ঘুরে মিরপুর ১০ নম্বরে বাসটির দেখা মেলে। তখন ঘড়িতে চারটা পেরিয়ে।

বেগুনি রঙের বাস দূর থেকেই চোখে পড়ে। ৩৭ আসনের এই বাসে বসার ব্যবস্থাও নগরের অন্য দশটি বাসের চেয়ে ভালো। মাথার ওপরের ফ্যানগুলোও এই গরমে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। এমনটাই মনে করেন গৃহিণী হাসিনা রহমান। তাঁর গন্তব্য মিরপুর ১২ নম্বর থেকে কালশী হলেও বাসটি দেখে ভালো লাগায় তিনি এতে চড়ে বসেন। এ জন্য তাঁকে ভাড়া গুনতে হয়েছে সাত টাকা।

হাসিনা রহমান বলেন, ‘প্রথম দেখায় বাসটি ভালো লেগেছে। তাই উঠে পড়েছি। নারীদের জন্য আলাদা আরও বাসের দরকার। এতে নারীদের ভোগান্তি এবং হয়রানি কিছুটা কমবে।’ বাসায় ফিরতে হাসিনা রহমান ১০ নম্বরে নেমে আবার রিকশায় ওঠেন।

দোলনচাঁপার কয়েকজন যাত্রী জানালেন, গণপরিবহনে ওঠার অভিজ্ঞতা ভয়ংকর। চালকের সহকারীরা ওঠা-নামা করার সময় গায়ে হাত দেন। খারাপ ব্যবহার করেন। আবার যাত্রীর চাপ থাকলে নারী যাত্রীদের বাসে উঠতে দিতে চান না। পুরুষ সহযাত্রীরাও নানান রকম হয়রানি করে থাকেন। নারীদের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা এসব ভোগান্তি-হয়রানি কমাতে পারে বলে জানান তাঁরা।

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দোলনচাঁপা বাসে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং একটি হেল্পলাইন নম্বরও রয়েছে। সিসিটিভির বিষয়টি বেশ মনে ধরেছে বেসরকারি চাকরিজীবী আফরোজা আলমের। তিনি বলেন, এ বাসটি শহরে চলাচলের উপযোগী করে নামানো হয়েছে। তবে একটি বাস দিয়ে নারীদের চলাচলে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

দোলনচাঁপা সকাল ৭টায় মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ছাড়ে। গন্তব্য মতিঝিল। এ জন্য যাত্রীকে দূরত্বভেদে ভাড়া গুনতে হবে ৭ থেকে ৩০ টাকা। বিরতিহীনভাবে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। যানজট বেশি থাকলে চারবার যাওয়া-আসা করা যায় বলে জানালেন বাসটির চালক মো. হাসান শিকদার।  

তবে দোলনচাঁপার কথা এখনো মানুষ তেমনভাবে জানেন না। চলাচলের নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচিও নেই। এখনো কোথাও কাউন্টার বসেনি। সে জন্য যাত্রী এখনো তেমন হয় না বলেও জানান চালক। স্বাভাবিক সময় যাত্রীসংখ্যা ১৫-২০ হলেও ছুটির দিনে এ সংখ্যা ৪-৫ জনে নেমে আসে।

তবে চালকের সহকারী ইভা ব্যাপারী বলেন, নারীদের সঙ্গে পুরুষ সদস্য থাকায় মূলত নারীরা বাসটি কম ব্যবহার করতে পারেন। তবে গাড়িতে প্রায়ই পুরুষ যাত্রী উঠে পড়েন। তখন এটা নারীদের বাস বললে মুচকি হেসে তাঁরা নেমে পড়েন।

র‍্যাংগস মোটরস লিমিটেডের দোলনচাঁপা প্রকল্পের ব্যবস্থাপক তাজরিন জাহান বললেন, যাত্রীদের চাহিদা যাচাই করতে একটি বাস চালু করা হয়েছিল। কিন্তু বাসটি চালুর পরে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় আগামী মাসের ১ তারিখে একই রুটে আরেকটি বাস চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে               এ বছরের মধ্যে ১০টি বাস চালু করা হবে বলে জানান তিনি।

অন্যান্য বিষয়ের আগে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করেন বাস পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে গাড়িতে সিসিটিভি এবং জিপিএস ট্র্যাকার সংযুক্ত করা হয়েছে।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাজধানীতে বর্তমানে ১৭টি বাস চলে। যা শহরের নারী যাত্রীদের তুলনায় অপর্যাপ্ত মনে করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, এই বছরের মধ্যে নারীদের জন্য আরও কিছু বাস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

দোলনচাঁপা বাসটি দূর থেকেই চোখে পড়ে। দেখে ভালো লাগে। দোলনচাঁপা ফুলের  মতো সুন্দর, শুভ্রভাব যেন সব সময়ই থাকে এই বাসে।