Thank you for trying Sticky AMP!!

ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে, তারপর...

প্রতীকী ছবি

ধর্ষকের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত নারী অথবা মেয়েশিশুর তথাকথিত বিয়ের উদ্বেগজনক খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। আর এ ধরনের বিয়েতে সম্পৃক্ত হচ্ছে থানা, পুলিশ, আদালতের কর্মী, আদালত চত্বর, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সমাজপতিসহ বিভিন্ন পেশা–শ্রেণির মানুষ।

ধর্ষণের অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে অভিযোগকারী নারীকে থানায় এনে বিয়ে করিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পাবনায় পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়। তবে এ সংবাদ পুরোনো হতে না–হতেই লালমনিরহাটে সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ধর্ষকের সঙ্গে জোর করে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর বিয়ে দিয়ে সমাজ উদ্ধারের খুশি উদ্‌যাপনে মত্ত হয়েছেন। ঠিক করে দিয়েছেন যৌতুকের পরিমাণ।

চাঁদপুরে গণধর্ষণের শিকার কিশোরীকে বলা হয়, চিহ্নিত চার ধর্ষকের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে বিয়ে করতে। গত মে মাসের ঘটনা এটি। এই রায়ে সায় ছিল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ওহিদুল ইসলাম এবং খোদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বাচ্চুর। বলা বাহুল্য, চার ধর্ষককে আশকারা দেবে এ রকম সর্বনাশা সালিস।

 কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন কারারক্ষী মৃদুল হাসান চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ছুটিতে রূপগঞ্জে বেড়াতে গিয়ে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মৃদুলসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্র ধরে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা মৃদুলকে ২৭ জানুয়ারি সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। একই দিন আইনজীবীদের মধ্যস্থতায় ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে আদালতেই কারারক্ষী মৃদুল ও ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েশিশুটির বিয়ের কাগজপত্র তৈরি করা হয়। জামিনে বেরিয়ে যান কারারক্ষী মৃদুল। অবশ্য তার আগে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্কুলছাত্রীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আদালতে এত দ্রুত কোনো ধর্ষণের ঘটনার নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানা নেই বলে জানালেন মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ইউ এম হাবিবুন্নেছা।

  চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ফেনী সদর উপজেলায় ছাত্রলীগের এক নেতা এক মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে যান। আটক অবস্থায় শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার এই মেয়েটিকে ৯ দিন পর উদ্ধার করা হয়। জানাজানি হলে ছাত্রলীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ওই নেতাকে। এরপর ৪ মার্চ আদালতে মামলা দায়ের করে ওই কিশোরী। ফেনীর ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় ১৩ মার্চ। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত ধর্ষণের অভিযুক্ত ওই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ‘অনেক খোঁজাখুঁজি’র পর ২৩ মার্চ ফেনীর মহিপাল এলাকা থেকে নেতা ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সাত লাখ টাকার দেনমোহরে ‘ধর্ষক’ ওই নেতার সঙ্গে ওই কিশোরীর বিয়ে পড়ান নিকাহ রেজিস্ট্রার। কথিত বিয়ের সময় বাদীপক্ষ বিবাদীপক্ষের আইনজীবীসহ ফেনী বারের অন্য আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি গণমাধ্যমের টক শোতেও গুরুত্ব পায়।

এসব জুলুমের বিয়ের পরিণতি কী হয় সব ক্ষেত্রে তা জানা যায় না। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও আর তেমন ফলোআপ হয় না। দু–একটি আলোচনায় আসে।

 হবিগঞ্জের বাহুবলে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের চার মাসের মাথায় ১৮ বছর বয়সী এক নারী আত্মহত্যা করেন। চার মাসও টেকেনি এই জুলুমের বিয়ে। ২০১৬ সালে ওই নারীর মা মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। পরে আপসরফার মাধ্যমে ‘বিয়ে’ হয়। ধর্ষণের অভিযুক্ত আবদুন নুর রেহাই পান ধর্ষণের মামলা থেকে।


গওহার নঈম ওয়ারা: লেখক ও গবেষক