Thank you for trying Sticky AMP!!

নওরোজের নারী মডেলদের চেহারা থাকে ঢাকা

পোশাক, স্ট্যাটাস, প্রত্যাশা পূরণে নারীর ভেতরে যে সংঘাত বা নিজেকে হারিয়ে ফেলার যে গল্প, তা-ই ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন হাবিবা নওরোজ। তাঁর মতে, নারীর ‘আমিত্ব’ বলে তেমন কিছু থাকে না। প্রতিনিয়ত মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে নারী যে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে, তা-ও অনেক সময় বুঝতে পারে না সে। এই জায়গাতেই পরিবর্তন আনতে চাইছেন নওরোজ। তাঁর ফটোগ্রাফিতে মডেলদের চেহারা ঢাকা থাকে নানা প্রক্রিয়ায়। এসব ফটোগ্রাফির মূল আকর্ষণ নারীর চেহারা না, নারীর জীবন।

নওরোজ বললেন, ‘চেহারা দিয়ে নারীকে চিনতে হয়। অথচ চেহারা ঢাকা থাকলে এই আস্ত মানুষটারই আর কোনো পরিচয় থাকে না। মুখ ঢেকে ছবি তুলে আমি এক ধরনের প্রতিবাদ করছি। আস্তে আস্তে নারীর জীবনের গল্পের প্রয়োজনে পুরুষ চরিত্র আসবে।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শেখেরটেকে বাসার একটি ঘরে ছবি তোলার সরঞ্জাম, মডেলদের সাজানোর জন্য বিভিন্ন কাপড়সহ সব আছে। ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে এ পর্যন্ত তোলা বিভিন্ন ছবি। নওরোজের মডেল হন মূলত তাঁর বন্ধুরাই।

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে নওরোজ বললেন, ‘মাস্টার্স পাস করার পর মা-বাবার প্রত্যাশা ছিল মেয়ে ভালো একটি চাকরি করবে। বিয়ে করবে। সন্তানের মা হবে। ফটোগ্রাফি পেশার কোনো গ্যারান্টি নেই, মেয়ে কেন এই পেশা বেছে নেবে? অন্যদিকে ফটোগ্রাফি সোসাইটিতেও শুধু মেয়ে বলেই বাড়তি কাজ করে যোগ্যতা দেখাতে হচ্ছিল। একসময় মনে হলো, অন্যদের প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলছি। তখনই সিদ্ধান্ত নিই নিজের যা ভালো লাগবে তা-ই করব।’

নওরোজ জানালেন, নিজের তোলা ছবি নিয়ে সিঙ্গাপুরে এক প্রদর্শনীতে অংশ নিলে ভালো স্বীকৃতি মেলে। সাড়ে তিন হাজার ডলারে ছবি কেনেন একজন। তখন উৎসাহটা বাড়ে।

নিজের ফটোগ্রাফির সঙ্গে নওরোজ। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন

নওরোজ ২০১৪ সাল থেকে ‘কনসিলড’ নামের একটি ছবির সিরিজ করছেন। রেনেসাঁ সময়ের পেইন্টিং ভিনাসকে নিয়ে কাজ করেন তিনি। ভিনাসের সৌন্দর্য নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণাই বেশি থাকে। কিন্তু এই সৌন্দর্যের জন্য কত নারী যে নির্যাতনের শিকার হয়, তা চিন্তা করা হয় না। এই ভিনাসের সঙ্গে আশপাশের নারীর কী ধরনের মিল আছে, তা-ই ফটোগ্রাফিতে তুলে ধরার কাজ করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ থেকে এমএ করেছেন নওরোজ। ২০১০ সালে ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট পাঠশালায় ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণে অংশ নেন। ভয়েস অব আমেরিকা, সিএনএন অ্যারাবিক, বিবিসি নিউজ (বাংলা ও ইংরেজি), বিবিসি উর্দুসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছে নওরোজের ছবির গল্প।

নওরোজের একমাত্র ভাই দেশের বাইরে থাকেন। তাই পরিবারের সব আশা-প্রত্যাশা পূরণ নওরোজকে কেন্দ্র করেই ঘুরতে থাকে। ফটোগ্রাফির পেছনে বেশি সময় দেওয়া মা-বাবা এখনো ততটা মেনে নিতে পারেন না। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে নওরোজের কাজ প্রকাশ ও প্রচারের পর ততটা আপত্তিও করেন না।