Thank you for trying Sticky AMP!!

নিজের আয়ে বিলিয়নিয়ার

এ বছরও বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন ম্যাগাজিন ফোর্বস। এবার ৩০ বছরের নিচে বিলিয়নিয়ারদের (১০০ কোটি ডলারের মালিক) তালিকায় সবার ওপরে আছেন কাইলি জেনার। সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে এ আসন দখল করেছেন এই মার্কিন তরুণী এবং এই সম্পদ তিনি বানিয়েছেন একদম নিজেই। নিজেদের বানানো সম্পদে বিলিয়নিয়ার বনে যাওয়াদের এই তালিকায় আছেন আরও দুজন—আয়ারল্যান্ডের জন কলিসন ও যুক্তরাষ্ট্রের ইভান স্পিগেল। পড়ুন তিন তরুণের কথা।
ইভান স্পিগেল

ইভান স্পিগেল
২০১৩ সালে স্ন্যাপচ্যাট কিনে নিতে চেয়েছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। ইভান স্পিগেল তা থোড়াই কেয়ার করেছেন। মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান ফেসবুক-কর্তা। স্ন্যাপচ্যাটের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম পাল্লা দিতে দিতে ভীষণ হাঁপিয়ে উঠছিল! অবশেষে স্ন্যাপচ্যাট কিনতে না পেরে মোবাইল অ্যাপলিকেশনটির অনেক কিছুই ‘কপি’ করতে বাধ্য হয়েছে ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষ। এই হলো স্ন্যাপচ্যাট, অর্থাৎ ইভান স্পিগেলের বড় শক্তির জায়গা। বর্তমান জমানার জন্য তাঁদের এই অ্যাপের আইডিয়াটি ছিল দারুণ জুতসই। ভিডিও বা বার্তা পাঠালে তা কিছুক্ষণ পরই হাওয়া হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই তরুণেরা লুফে নিয়েছেন এই অ্যাপ। এর সঙ্গে আরও চমৎকার কিছু ফিচার তো আছেই। ইভান তাঁর দুই বন্ধু ববি মারফি ও রেগি ব্রাউনকে নিয়ে স্ন্যাপচ্যাট বাজারে আনেন ২০১১ সালে। তখন এর নাম ছিল ‘পিকাবু’। পরের বছরই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অ্যাপটি। দিনে গড়ে ১ মিলিয়ন মানুষ ব্যবহার করতে শুরু করে সেটি। ইভানের বয়স তখন ২২ বছর, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। ২০১৫ সালে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে বিলিয়নিয়ারদের ক্লাবে ঢুকে যান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এই তরুণ। এখন দিনে গড়ে ১৯১ মিলিয়ন মানুষ তাঁর অ্যাপটি ব্যাবহার করছে।

ডিজাইনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ইভান। এরপর ‘জুতা সেলাই থেকে চণ্ডী পাঠ’ করেছেন। কাজ করেছেন ‘রেড বুল’ থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার বায়োমেডিকেল প্রতিষ্ঠানে। ইভানের দর্শন হলো, নতুন কিছু করতে হলে এমন কিছু অভিজ্ঞতা খুব জরুরি। ইভানের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। স্ট্যানফোর্ডের ড্রপআউট ছিলেন তিনি। তবে সুপার মডেল স্ত্রী মিরান্ডা কেরের কোলজুড়ে পুত্রসন্তান হার্ট কের স্পিগেলের কথা ভেবেই নাকি পড়াশোনা শেষ করেছেন ইভান। এটা জানা গেছে ২০১৮ সালে এনবিসি নিউজকে দেওয়া তাঁর এক সাক্ষাৎকারে। সূত্র: ফোর্বস

জন কলিসন

জন কলিসন
আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক নামের এক গ্রামে ১৯৯০ সালে জন কলিসনের জন্ম। ছড়ার একটি ছন্দের নাম লিমেরিক। বলা হয়, এই গ্রাম থেকেই এসেছে নামটি। ছন্দের মতোই সুন্দর গ্রাম লিমেরিক। সেখানকার একতলা ছিমছাম যে বাড়িটিতে জনের জন্ম, সেটি দেখলে এককথায় বলতে হয়—ছবির মতো সুন্দর। জনের জীবনটাও কি তা-ই নয়? ২০০৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বড় ভাই প্যাট্রিকের সঙ্গে শুরু করেছিলেন ‘শুপা’ নামের এক সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। পরের বছরই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ‘অক্টোম্যাটিক’ নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের কাছে সেটি বেচে দিয়েই দুই ভাই বনে যান কোটিপতি। জন ও প্যাট্রিকের বানানো সফটওয়্যার ইবে-তে টাকাপয়সা লেনদেন করে তোলে অতি সহজ।

২০০৯ সালে কোটিপতি জন ভর্তি হন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে। তবে সফলদের যে ‘ড্রপআউট’ হওয়ার একটা বাতিক আছে! ফলে বছরখানেক পরই সিলিকন ভ্যালির মায়াবী হাতছানিতে ছুটে গেলেন জন। আর গিয়েই বড় ভাইয়ের সঙ্গে গড়ে তুললেন ‘স্ট্রাইপ’। যেটার পেছনে টাকা ঢাললেন এলন মাস্ক, পিটার থিল ও ম্যাক্স লেভচিনের মতো ব্যক্তিরা। ‘স্ট্রাইপ’ও ইন্টারনেটে টাকা লেনদেনের কাজটি করে দেয়।

২০১৬ সালের নভেম্বরে প্যাট্রিক ও জন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠেন এবং সেটা একেবারে নিজেদের আয়ে। ফোর্বস–এর এ বছরের তালিকায়ও জনের নাম আছে। এখন তাঁর বয়স ২৮। সম্পদের পরিমাণ ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। জন খুব ভালো পিয়ানো বাজান। বন্ধুদের মতে, পাইলট হিসেবেও তিনি পাকা। আর অফিসের কর্মকর্তা বা ব্যবসায়ী হিসেবে? প্রায় সবাই বলে, ‘ও বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে সেরা।’

কাইলি জেনার

কাইলি জেনার

‘তারকা’ শব্দটির সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছেন কারদাশিয়ানরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেও যে মহাতারকা হওয়া যায়, তা এরাই দেখিয়ে দিয়েছেন। ফেসবুক-টুইটারের শুরুর কয়েক বছরের মধ্যে কেন্ডাল, কিম, কোর্টনি, ক্লোয়ি ও কাইলি—যুক্তরাষ্ট্রের কারদাশিয়ান পরিবারের এই বোনদের বলা হতো ‘কিছু না করেই তারকা’। কিন্তু আসলেই কি তাঁরা কিছু করেননি? অনেক যুক্তি-তর্ক আছে, বিতর্কেরও কমতি নেই। তবে এটাই এখনকার বাস্তবতা। কারদাশিয়ান বোনদের মধ্যে কিম কারদাশিয়ান এখন মিলিয়নিয়ার এবং কাইলি বিলিয়নিয়ার। ফোর্বস এ বছর ঘোষণা করেছে, বিশ্বের ইতিহাসে এত কম বয়সে (২১ বছর) বিলিয়নিয়ার হওয়ার রেকর্ড কাইলি জেনারের। তাঁর সম্পদের পরিমাণ এখন ১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা)। এই সম্পদ তিনি বানিয়েছেন নিজের আয়ে। রেকর্ডের খাতায় তাঁর পেছনে পড়ে গেছেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ২৩ বছর বয়সে বিলিয়নিয়ারদের ক্লাবে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি।

১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৯০০ মিলিয়ন ডলার এনে দিয়েছে কাইলির প্রসাধন প্রতিষ্ঠান—কাইলি কসমেটিকস। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ‘কাইলি লিপ কিট’ নামের প্রসাধনটি। ২০১৫ সালে কাইলির বয়স যখন সবে ১৭, তখনই এর গোড়াপত্তন। আক্ষরিক অর্থেই তারপর থেকে হু হু করে বিক্রি হয়েছে এই পণ্য। তবে তা তো এমনি এমনি হয়নি। ওই যে শুরুতেই বলা হয়েছিল ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তারকা’। এই তারকাখ্যাতিই ব্যবসার পালে জোর হাওয়া দিয়েছিল। ফেসবুক-টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট আর ইনস্টাগ্রামে জনপ্রিয় হওয়ার আগে কারদাশিয়ানরা একটি টিভি অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ই!’ চ্যানেলে প্রচারিত ‘কিপিং আপ উইথ দ্য কারদাশিয়ানস’ নামের ওই রিয়্যালিটি শো পেয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা।

ব্যস, সেই সূত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কাড়াকাড়ি অবস্থা। ভবিষ্যতে কাইলি আরও কত টাকা আয় করবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। বয়স তো সবে ২১!