Thank you for trying Sticky AMP!!

নেতা হওয়ার শর্ত ভালো শ্রোতা হওয়া

বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে সম্প্রতি (১৮ আগস্ট) টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁর জন্ম ১৯৭৭ সালের ২৭ মে। ১৪৯টি টেস্টে ৩৪ সেঞ্চুরিসহ তাঁর মোট রান ১১ হাজার ৮১৪। আর ৪২০টি এক দিনের ম্যাচে ১৬টি শতকসহ রান ১১ হাজার ৬৮১।

মাহেলা জয়াবর্ধনে

আমি বড় হয়েছি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। আমি ছোটবেলা থেকে যা কিছু শিখেছি তা যথার্থভাবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। জীবনে যা কিছু শিখেছি সবই অমূল্য। আমার চারপাশের মানুষদের জন্য আমি আজ এখানে। কোচ, বাবা-মা, পরিবার সবাই আমার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমার ছোট ভাই খুব ভালো ক্রিকেটার ছিল। খুব অল্প বয়সে ব্রেন টিউমারে সে মারা যায়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। আমার চেয়ে মাত্র এক বছরের ছোট। আমাদের পুরো পরিবার তখন ভীষণ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। ভাইকে ইংল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য নিয়ে অপরাশেন করিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি। সে ছিল ওপেনিং ব্যাটসম্যান। তার বয়স যখন ১৪ তখন স্কুল ক্রিকেটে আমি তার দলের অধিনায়ক ছিলাম। আমি সব সময় তার একটা ছবি আমার সঙ্গে রাখি।
আমি প্রচুর ক্রিকেট খেলা দেখি। ক্রিকেট নিয়েও পড়াশোনা করি। সেরা ক্রিকেটারের খেলা দেখে অনেক কিছু শেখা যায়। আমি অর্জুনা রানাতুঙ্গার কথা বলতে পারি। তিনি ছিলেন সাহসী এক নেতা; যিনি নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতেন। তাঁর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল প্রচণ্ড। তাঁর নেতৃত্বেই লঙ্কান ক্রিকেট শীর্ষে ওঠার সুযোগ পায়। বিশ্বকাপ জয় করে।
নেতা হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে ভালো শ্রোতা হওয়া। আপনাকে নিজের কাজ নিয়ে খুব স্বচ্ছ থাকতে হবে। সব সময় সোজা কথা বলতে হবে। কখনো কখনো দলের অন্য সদস্যরা কারও প্ররোচনায় আপনার কথা না-ও শুনতে পারে। নেতা হিসেবে আপনাকে সবকিছু সাহস নিয়ে বলতে হবে। ১০০ টেস্ট খেলা কিংবা মাত্র একটি টেস্ট খেলা ক্রিকেটার সবাইকে নেতা হিসেবে আপনার কথা একই রকম ধৈর্য নিয়ে বলতে হবে। দলনেতা হিসেবে নিজের ভেতরকার কথা বুঝতে হবে। কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। জয়ের জন্য লক্ষ্য আর ক্ষুধাই হলো সবচেয়ে বড় গুণ। আমি আমার দলের সদস্যদের মধ্যে এই গুণটি সব সময় খুঁজে থাকি। আমার কাছে একক নৈপুণ্য দেখানো, ব্যক্তিগত ৫০ কিংবা শতকের চেয়ে কোনো ক্রিকেটারের দলের জন্য ১০ রান বেশি দামী। দলের জন্য কঠিন সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা ভীষণ চ্যালেঞ্জের। দলকে সব সময় চাঙা রাখার মানসিক শক্তি রাখতে হবে। দলে তারকা ক্রিকেটার যেমন দরকার আছে, তেমনি অন্য ক্রিকেটাররাও গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দরকারি পারফরম্যান্স বের করে আনাই দলনেতার কাজ। কিন্তু সবার আগে মনে রাখতে হবে অধিনায়কত্ব পরে, প্রথমে নিজের খেলা। আগে দলের জন্য নিজের থেকে কিছু করতে হবে। আর আমার ডেপুটি হিসেবে আমি সব সময় ‘হ্যঁা’ বলে এমন কাউকে নিশ্চয়ই চাইব না। এরা কোনো কাজের নয়। দলের জন্য অধিনায়কের ভিন্ন চিন্তা করার জন্য অন্য মতামত গ্রহণ করতেই হবে। যারা শুধু হু-হ্যঁা বলে সমর্থন দেয় তারা আপনার কোনো কাজেই আসবে না। আপনি ভুল দিকে গেলেও তারা হ্যাঁ বলে যাবে।
প্রতিটি হার থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন করে এগিয়ে যেতে হবে। সব সময় ঠান্ডা থাকতে হবে। জেতার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় চাবি। আমরা বেশ কবার ফাইনালে গিয়েও হেরে গেছি। সব হতাশা কাটিয়ে কঠিন শ্রম দিয়ে আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছি। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেই কাপ জয় ছিল আমাদের দলের জন্য অনেক বড় কিছু।
ক্রিকেটের বাইরে আমি খুব সাধারণ একটি জীবন কাটাই। আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাই না কখনো। আমি বিশ্বাস করি, যদি কাউকে কষ্ট দিই সেই কষ্ট আমি ফেরত পাব। আমার বন্ধুবান্ধব আর পরিবার আছে। আমি জানি না, ক্রিকেটের বাইরে আমার কী ভবিষ্যৎ। কিন্তু আমি বর্তমানকে সব সময় উপভোগ করি। আমি শিশুদের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে চাই। কিন্তু সেই সঙ্গে পরিবারকেও সময় দিতে চাই। তারা আমার জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করে, আমি কেন সেখানে ফিরব না?
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও ক্রিকইনফোর সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান