Thank you for trying Sticky AMP!!

পায়ুপথের সমস্যায় হেলাফেলা নয়

পায়ুপথের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে বিব্রতবোধ করেন অনেকেই। বিশেষ করে নারীরা। এমনকি আপনজনদের কাছে সমস্যার কথা খুলে বলতেও তাঁদের অস্বস্তি। যে কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে গড়িমসি, দীর্ঘদিনের অবহেলায় জটিলতা বাড়ে, সঙ্গে বাড়ে ভোগান্তিও। অথচ পায়ুপথের কিছু কিছু সমস্যা প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করলে অস্ত্রোপচার এড়ানো সম্ভব।

দেশে অনেক নারী সার্জন রয়েছেন, যাঁরা এ ধরনের রোগের চিকিৎসা করেন। তাই সংকোচ ঝেড়ে ফেলে চিকিৎসা নিন। যে চিকিৎসকের কাছে স্বস্তিবোধ করেন, তাঁর শরণাপন্ন হোন।

কী ধরনের সমস্যায় ভোগেন

পায়ুপথে ফিসার (পায়ুপথের অভ্যন্তরে চির ধরা), অ্যাবসেস (ফোড়া), পাইলস ও ফিস্টুলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া রেক্টাল প্রোল্যাপ্স (পায়ুনালি বেরিয়ে আসা) এবং পায়ুপথের ক্যানসারও হতে পারে। তো শুরুতে কীভাবে বুঝবেন যে পায়ুপথে কোনো সমস্যা হয়েছে? লক্ষণ হতে পারে পায়ুপথে ব্যথা (বিশেষত মলত্যাগের সময়), পায়ুপথে রক্তপাত, পুঁজ যাওয়া বা নরম কিছু বেরিয়ে আসা। কিছুদিন পাতলা পায়খানা আবার কিছুদিন কোষ্ঠকাঠিন্য—এমনও হতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে রেক্টাল প্রোল্যাপ্স কিংবা রেক্টাল পলিপ হতে দেখা যায়। এসব সমস্যা হলে শিশু পায়খানা করার সময় কিছু বেরিয়ে আসতে দেখা যায়, রক্তপাতও হয়ে থাকে। নারীদের গর্ভকালে, সন্তান প্রসবের পর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার নারীদের থাইরয়েডের সমস্যা বেশি হয় বলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, পায়ুপথের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকিও তাই বেশি।

কী করবেন

পায়ুপথে যেকোনো ব্যথা, রক্তপাত বা বের হয়ে আসার সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। পায়ুপথের অধিকাংশ সমস্যাই নিরাময়যোগ্য, এমনকি প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার ধরা পড়লে সেটিও। ফিসার ও পাইলসে ভোগেন অনেকেই। প্রাথমিক অবস্থায় অ্যানাল ফিসার ও পাইলসের চিকিৎসা করালে অস্ত্রোপচারেরও দরকার হয় না। তবে ফিস্টুলা, অ্যাবসেস, পলিপ ও ক্যানসার নিরাময়ে অস্ত্রোপচার আবশ্যক। পায়ুপথের সমস্যা সমাধানে ছোট বা মাঝারি ধরনের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। অস্ত্রোপচারের নাম শুনেই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই।

জটিলতা

সময়মতো চিকিৎসা না করালে পায়ুপথের সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। অ্যানাল ফিসার থেকে হতে পারে অ্যানাল স্টেনোসিস বা পায়ুপথ সংকীর্ণ হয়ে আসা। এর ফলে মলত্যাগে কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। সংক্রমণ হলে তা থেকে অ্যাবসেস বা ফোড়া হয়, যা খুবই বেদনাদায়ক। মলত্যাগ তো দূরের কথা, ঠিকমতো বসা বা দাঁড়াতেও তখন কষ্ট হয়। এই ফোড়া ঠিক সময় কাটা ও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা না করা হলে এ থেকে হতে পারে ফিস্টুলা। ফিস্টুলা আরেক বিব্রতকর ব্যাপার। ফিস্টুলা হলে মলমূত্রের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায়, এমনিতেই বের হয়ে আসে।

পাইলসের সঠিক চিকিৎসা না করা হলে মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে হতে রোগীর রক্তশূন্যতা হয়ে যেতে পারে। আবার অনেক সময় পরীক্ষা না করে বোঝা সম্ভব নয় যে পায়ুপথের এসব সমস্যা নিরীহ কিছু, নাকি ক্যানসারের পূর্বলক্ষণ। আর ক্যানসার শনাক্ত করতে দেরি হয়ে গেলে তা শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে আর মৃত্যুঝুঁকি যায় বেড়ে। তাই এসব রোগ কখনো লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়। সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলে সব জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

পায়ুপথের সমস্যা প্রতিরোধে কী করবেন

* খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণে কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনুন।

* দৈনিক অন্তত ৬ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। আঁশ বা ফাইবার টাটকা শাকসবজি, খোসাসহ ফলমূল, গোটা শস্য প্রভৃতিতে পাওয়া যাবে।

* প্রচুর পানি পান করুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।

* পায়খানা চেপে রাখবেন না, পায়খানার চাপ এলে সঙ্গে সঙ্গেই টয়লেটে যান।

* কারও কারও পায়খানা অনিয়মিত। তবে তিন দিনের বেশি পায়খানা না হলে বুঝতে হবে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন।

* কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করা জরুরি। প্রতিদিন কিছু কায়িক শ্রম করুন।

* যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাঁরা প্রয়োজনে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন প্রতিদিন।

* ধূমপান বর্জন করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। গরু বা খাসির মাংস বেশি খাবেন না। অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুডও বেশি খাবেন না। এগুলো বৃহদন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ।

* ৪০ বছর বয়সের পর প্রত্যেকেরই নিয়মমাফিক পায়ুপথ-পায়ুনালির (কোলোরেক্টাল) ক্যানসারের স্ক্রিনিং পরীক্ষা করানো উচিত, বিশেষত যাঁদের পরিবারে এ ধরনের রোগের ইতিহাস আছে।