Thank you for trying Sticky AMP!!

পুরুষের চুল-দাড়ি কাটেন 'নরসুন্দর' শেফালি

ক্ষুর, কাঁচি ও চিরুনি নিয়ে ব্যস্ত শেফালি রানী (৪৫)। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা গ্রামের দোগনা বাজারে বসেই শেফালি পুরুষদের সুন্দর করে তুলতে একাগ্রচিত্তে কাজ করছেন। শত বাধা পেরিয়ে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক যুগ ধরে ‘নরসুন্দর’ পেশাটিতে টিকে আছেন শেফালি। প্রতিদিন সকালে যন্ত্রপাতি নিয়ে হাজির হন দোগনা বাজারে। সেখানে দেলোয়ার হোসেন নামের এক প্রবাসীর বসতঘরের বারান্দায় সারা দিন কাজ করেন শেফালি।

শেফালি কখনো ভাবেননি পুরুষের চুল–দাড়ি কেটে তাঁকে সংসার চালাতে হবে। কিন্তু পাঁচ ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ ও সংসার সামলাতে তাঁকে এ কাজ করতে হচ্ছে। এই কাজ করেই দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ে বিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। অন্যরাও  পড়ালেখা করছে। গ্রামের বাজারে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় হয় শেফালির। হাটের দিন আয় একটু বেশি হয়। আবার কোনো সময় গ্রাহকই থাকে না। গ্রাহক না থাকলে বাজারে বিভিন্ন দোকানে পানি এনে দেওয়ার কাজ করেন বাড়তি আয়ের জন্য।  

 দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় শেফালি পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়তে পারেননি। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার আতরখালী গ্রামের নরসুন্দর বিশ্বনাথ শীলের সঙ্গে মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামীর অবহেলা ও উদাসী জীবনযাপন মেনে নিয়েই সংসার করতে থাকেন। কিন্তু ২০০৭ সালে স্বামী নিরুদ্দেশ হন। বাধ্য হয়ে শেফালি স্বামীর কাজটি নিজে করা শুরু করেন।

ব্যতিক্রমী নরসুন্দর পেশায় একজন নারীকে দেখতে এখন অভ্যস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে শুরুটা ছিল কঠিন এবং শেফালির জন্য বিব্রতকর। অনেক বাধাবিপত্তিও আসে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারাই আস্তে আস্তে এগিয়ে আসেন। 

দোগনা বাজারের পল্লি চিকিৎসক মোশারেফ হোসেন খান জানালেন, শেফালি ২০ বছর আগে তাঁর স্বামীর সঙ্গে এ গ্রামে আসেন। তাঁরা খুব অভাব–অনটনে দিন কাটাতেন। স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার পর শেফালি সংসারের হাল ধরেছেন।

এখন শেফালি আধুনিক স্টাইলের চুলের কাট দিতে পারেন। টাকাও কম নেন। ফলে তাঁর দোকানে ভালোই ভিড় থাকে। গত বছর শেফালিকে জয়িতা সম্মাননা দিয়েছে জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেফালিকে চার শতক জমি ও ঘর তোলার জন্য তিন লাখ টাকা উপহার দিয়েছেন। দোগনা বাজারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান শেফালির হাতে  এ অনুদানের কাগজপত্র তুলে দেন। তখন প্রতিমন্ত্রী জানান, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার একমাত্র নারী নরসুন্দর শেফালিকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। 

শেফালি বললেন, ‘পুরুষের চুল–দাড়ি কাটি বলে প্রথমে মানুষ হাসাহাসি করত। যাদের চুল কাটি, তাদের কেমন দেখাবে, ভালো হয়, না খারাপ হয়, এমন ভয়ও কাজ করত। তবে এখন অনেকেই প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাহায্য করায় আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’