Thank you for trying Sticky AMP!!

পোস্টার কুড়িয়ে খাতা বর্জ্যের বিনিময়ে বই

>

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়টাতে শহরজুড়ে টাঙানো হয়েছিল লাখ লাখ পোস্টার। নির্বাচন শেষে সেগুলো সংগ্রহ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য লেখার খাতা বানিয়েছে শিক্ষাবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বিদ্যানন্দের স্টলেও দেখানো হচ্ছে তাদের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

নির্বাচনী পোস্টার সংগ্রহ করছেন বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকেরা। ছবি: সংগৃহীত

‘আমরা মনে করি, আপনার জন্য যা বর্জ্য, অন্যের জন্য তা–ই হতে পারে সম্পদ,’ মুঠোফোনের ওপাশ থেকে কথাগুলো বলছিলেন ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’–এর স্বেচ্ছাসেবক মিজানুর রহমান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্যানন্দের একটি উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সারা শহর ছেয়ে গিয়েছিল পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে, নির্বাচন শেষে যা হয়ে ওঠে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য। সচেতন নাগরিকেরা পরিবেশবিরোধী এই অসচেতনতায় সমালোচনাও করেন বেশ। এ সময়ে এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। নানা স্বেচ্ছাসেবী কাজের পাশাপাশি ‘শিশু নিকেতন’ নামের বিদ্যালয়ে শিশুদের পড়াশোনার সার্বিক দেখভাল করে থাকে এই সংগঠন। সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা শহর ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতে থাকেন এই পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও রশি। উদ্দেশ্য, এসব বস্তুকে ব্যবহার্য শিক্ষা–উপকরণে রূপান্তর করে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহার করা।

শিক্ষার্থীদের হাতে পোস্টার দিয়ে বানানো খাতা

পোস্টার যখন লেখার খাতা
পোস্টারের ছাপাহীন উল্টো পিঠকে লেখার খাতা হিসেবে ব্যবহারের ভাবনা থেকেই মূলত নির্বাচনী পোস্টার সংগ্রহ করা হয়। সেই সঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয় রোধের ভাবনাটিও বিবেচিত হয় প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক দল এসব সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেন, অধিকাংশ পোস্টারই লেমিনেটিংয়ে আবৃত। আবার অনেক পোস্টারের উভয় পাশই ছাপানো। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পিভিসি ব্যানার, ফেস্টুনও রয়েছে প্রচুর। তবে বিদ্যানন্দ এসব বিষয়কে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করেনি, বরং প্রতিটি বস্তুর বহুমুখী পুনর্ব্যবহারের পরিকল্পনা করে তখনই। পোস্টার, লিফলেটের সাদা পাশ শিক্ষার্থীদের লেখার খাতা হিসেবে কিংবা ফাউন্ডেশনের দাপ্তরিক লেখার কাজে ব্যবহৃত হবে। উভয় পাশে ছাপানো পোস্টার ব্যবহৃত হচ্ছে ঠোঙা বানানোর কাজে। আসছে রমজান মাসে শুকনা ইফতার বিতরণের কাজে ব্যবহার করা হবে এই ঠোঙা। লেমিনেটিং ছাড়িয়ে সেই প্লাস্টিক পরিষ্কার করে তা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন প্যাকেট, শীতার্ত মানুষের হাতে বিতরণের সময় যা ব্যবহৃত হবে শীতবস্ত্রের প্যাকেট হিসেবে। রশিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে নানা রকম বাঁধাইয়ের কাজে।

শুধু নির্বাচনী পোস্টারই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা-অভিসন্দর্ভপত্রের উল্টো সাদা পাশও একইভাবে হয়ে উঠতে পারে ব্যবহারের উপযোগী। কাজ শেষে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাওয়া এসব কাগজ ফেলে না দিয়ে বিদ্যানন্দের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।

বইমেলায় বিদ্যানন্দের স্টল

বাস্তবায়নে সাম্প্রতিক, ভাবনায় পুরোনো
দৈনন্দিন ব্যবহার্য নানা উপকরণ-উপাদান ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে পরিবেশদূষণ কিংবা পরিবেশ নোংরা না করে সেসব বস্তু কীভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়, তা নিয়ে অনেক দিন থেকেই ভাবছিল বিদ্যানন্দ। কিছুদিন আগে পুরোনো শীতবস্ত্র সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে ভাবনার বাস্তবায়ন শুরু হয় তাদের। মানুষের অব্যবহৃত অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরিষ্কার করে শীতার্ত মানুষের হাতে তুলে দেয় সংগঠনটি।

পোস্টার দিয়ে বানানো খাতা

অব্যবহৃত পণ্যের বিনিময়ে বই
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল দিয়েছে বিদ্যানন্দ। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিদ্যানন্দের স্টল সাজানো হয়েছে ফেলে দেওয়া বোতল, ওষুধের শিশি, কম্পিউটারের নষ্ট কি–বোর্ড প্রভৃতি জিনিস দিয়ে। বই বিক্রিতে দারুণ একটি ধারণার অবতারণা করেছে সংগঠনটি। আপনার অপ্রয়োজনীয় ওষুধ, যা হয়তো মেয়াদোত্তীর্ণ নয়, তা জমা দিয়ে স্টল থেকে নিতে পারেন বই। কিংবা নষ্টপ্রায় মুঠোফোন, কম্পিউটার, এ রকম বিভিন্ন অব্যবহৃত জিনিস দিয়েও নিতে পারেন। আপনার দেওয়া এই ওষুধ ব্যবহৃত হবে বিদ্যানন্দের ‘এক টাকায় চিকিৎসা’ কর্মসূচিতে। অল্প ব্যবহৃত কিংবা নষ্টপ্রায় মুঠোফোন, কম্পিউটারসহ আপনার সরবরাহকৃত অন্যান্য বস্তু পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে ব্যবহৃত হবে বিদ্যানন্দের বিদ্যা বিতরণের কাজে।