Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রশিক্ষণ থেকে পাওয়া প্রত্যয়

এলআইসিটির প্রশিক্ষণে শতকরা ৩০ ভাগ নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

শুরুতে শেরপুরের মিনহাজ উদ্দীনের গল্পটা বলা যাক।

টিউশনির আয়টুকুই ছিল তাঁর সম্বল। মা–বাবা, ছোট বোনকে নিয়ে সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শেষ করে মিনহাজ শেরপুর সরকারি কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। একটা চাকরির জন্য খুব চেষ্টা করেছিলেন। হয়নি। ২০১৭ সালে খবর পেলেন, কলেজে আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যাম্প হবে। কিছু না বুঝেই নিবন্ধন করেন তিনি। সেখানে সফল মানুষদের কথা শুনে মিনহাজ আশাবাদী হন। তারপর?

‘ক্যাম্পেই খোঁজ পেলাম, এলআইসিটি নামে একটা প্রকল্প শুরু হবে। সেখানে বিনা মূল্যে নানা কোর্স করা যাবে। কম্পিউটারের প্রাথমিক ধারণা আমার ছিল। একটা লিখিত পরীক্ষা দিয়ে আমি সফট স্কিল ও গ্রাফিকস শেখার কোর্সে ভর্তি হয়ে যাই,’ বলছিলেন তিনি।

ভর্তি হওয়ার পর কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল মিনহাজ উদ্দীনকে। প্রশিক্ষণে অংশ নিতে গিয়ে প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা চলে যেত। টিউশনিতে আর সময় দিতে পারছিলেন না, কিন্তু টিউশনি না করলে সংসার চলবে কী করে? প্রশিক্ষণ, নাকি টিউশনি? দুটোর মধ্যে প্রশিক্ষণই বেছে নেন তিনি। ধারকর্য করে কোনোমতে চলতে থাকে সংসার। নানাজন নানা কথা বলেছে, কিন্তু মিনহাজ হাল ছাড়েননি। মন দিয়ে শিখেছেন। এভাবে ৩-৪ মাস কাটল। কোর্স শেষ হওয়ার কিছুদিন আগেই একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থায় ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি পেয়ে যান তিনি।

মিনহাজ জানালেন, এখন তাঁর বেতন ৪০ হাজার টাকা। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করেও আয় হয়। ছোট বোনকে কলেজে ভর্তি করেছেন। নিজেদের ঘর তুলেছেন, ধানি জমি কিনেছেন। পরিশ্রম করে পাওয়া সাফল্যের আনন্দ এখন তাঁর চোখেমুখে। মিনহাজ বলেন, ‘এলআইসিটির ট্রেনিং আমার জীবনে একটা বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে।’    

লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি), বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অধীনে পরিচালিত বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের একটি প্রকল্প। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পের প্রসার ও উন্নয়নের মাধ্যমে এই খাতে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, সরকারের সেবার মান উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৩০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় চাকরি মেলা, দেশ-বিদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রচারণা, ডিজিটাল সেবা চালুসহ নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এই প্রকল্পের অংশ।

সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি–সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংকে (ইওয়াই)। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাইকৃত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের আইটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা পেয়েছেন সনদও। 

সরকারি হিসাব বলছে, এলআইসিটির আওতায় সারা দেশে ৩৩ হাজার ৫৬৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চাকরি পেয়েছেন ১১ হাজার ১৩১ জন। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির জন্য প্রশিক্ষণে শতকরা ৩০ ভাগ নারীর অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, বাংলাদেশের (ইউল্যাব) প্রাক্তন ছাত্রী তামান্না ইসলামও এলআইসিটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২০১৬ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি শুরু করেন গ্রাফিকসের কাজ। সেই সূত্রে, চীনা ই-কমার্স সাইট আলিবাবার চ্যানেল পার্টনার ট্রাডেশি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশির (ইন্টার্নশিপ) সুযোগ পান। এখন সেখানেই চাকরি করছেন তিনি। তামান্না বলেন, ‘আমি নিজে যা শিখেছি, সেটা অন্য মেয়েদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে চাই। যেন মেয়েরা স্বাবলম্বী হয়ে নিজের চেষ্টায় কিছু করতে পারে।’

কথা হলো লিভারেজিং-আইসিটি প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল করিমের (এনডিসি, যুগ্ম সচিব) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশব্যাপী এলআইসিটি ট্রেনিং চালিয়েছি। অনেক সাড়া পেয়েছি, একটা বড় পরিবর্তনও এসেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে ডিজিটাল বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেই চেষ্টা অনেকটাই সফল হয়েছে। সারা দেশ থেকে অনেকেই এই প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

জানা গেল, শিগগিরই আবার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখতে পারেন এলআইসিটির ফেসবুক পেজে: facebook.com/lictbangladesh