Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রিয়াংকার পথচলা

প্রিয়াংকা গোয়ালা

প্রিয়াংকা গোয়ালা চঞ্চল, ছটফটে এক দুরন্ত কিশোরী। বাবা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের এক চা–বাগানের শ্রমিক। তাঁদের পাঁচ সদস্যের সংসারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। এমনও দিন গেছে, কোনো বেলা খাবারও জোটেনি। তাই নবম শ্রেণিতে উঠেই টিউশনি শুরু করলেন। নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে জোগাতে চেষ্টা করলেন।

প্রিয়াংকা স্কুলের গণ্ডি পার করেছেন বেশ ভালো ফল নিয়ে। কলেজেও ভর্তি হলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন বিয়ের প্রস্তাব আসে। প্রিয়াংকা জানতেন পড়াশোনায় ভালো না হলে নাকি বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কথা বলে সবাই। কিন্তু তিনি তো পড়াশোনায় ভালো তাহলে কেন তাকে বিয়ে দেবে? বুঝে উঠতে পারছিলেন না প্রিয়াংকা কিছুই। আত্মীয়দের কথায় মা-বাবা রাজি হয়ে গেলেন। বিয়ের কথাটা এক বান্ধবীকে জানালেন প্রিয়াংকা। সেই বান্ধবীর এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমেই প্রিয়াংকা জানতে পারেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে।

বাড়িতে কাউকে কিছু বলা বা জানিয়ে লাভ নেই। নিজেই উদ্যোগী হলেন। আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে আবেদন করলেন প্রিয়াংকা। যেদিন শ্রীমঙ্গলে লিখিত পরীক্ষা দিলেন সেদিনও বাড়িতে কাউকে না জানিয়েই গিয়েছিলেন ভর্তি পরীক্ষা দিতে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। সাহস করে এ কথা মাকে জানালেন প্রিয়াংকা। এবার পাশে দাঁড়ালেন মা। সাফ জানিয়ে দিলেন, তাঁর মেয়ে পড়াশোনা করবে। তিনি মেয়ের বিয়ে হতে দেবেন না।

বিয়ে ভেঙে দেওয়ায় রুষ্ট হলো ছেলেপক্ষ। বিভিন্নভাবে হেনস্তা করল। কিন্তু নিজের সাহস আর মনোবলে যে এতটা পথ পার করে এসেছেন, তিনি তো দমে যাওয়ার পাত্রী নন। পিছপা হননি প্রিয়াংকা। এরপরের ধাপে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রিয়াংকা এশিয়ান ফর ইউনিভার্সিটি উইমেনে ভর্তির সুযোগ পান। সেই সঙ্গে পেয়ে যান আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্ট ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো পরিবারের প্রথম নারী, যাঁরা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারছেন না, তাঁদের অনুপ্রাণিত করার জন্য ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয় ‘অদ্বিতীয়া’ নামে। পরিবারের প্রথম নারী, অদম্য প্রাণশক্তি নিয়ে যিনি প্রতিকূলতা জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছেন, তিনি আমাদের অদ্বিতীয়া। ২০২০ সালে এই শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া ১০ জনের সবাই মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার চা-শ্রমিকের সন্তান। তাঁদেরই একজন প্রিয়াংকা গোয়ালা।