Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রেমে পড়ার বিজ্ঞান

প্রেমে পড়ারও বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। মডেল হয়েছেন অভিনয়শিল্পী রোশান ও তিশা। ছবি: অধুনা

প্রেম সংগীত, রোমান্টিক কবিতা, থইথই আবেগে ভরপুর উপন্যাস, রসঘন চলচ্চিত্র—এসব কিছুর বাইরে প্রেমের অন্য এক ভুবন আছে। শরীরে জটিল সব ক্রিয়া–বিক্রিয়ার শেষে কিউপিডের তির করে বিদ্ধ, এই বিজ্ঞান এখন জানার জন্য উন্মুক্ত। মানুষ একে অপরকে কেউ ভালোবাসে, কেন প্রেমে পড়ে, সে বিজ্ঞানের কথা বলতে হয়।

‘প্রেমের ফাঁদপাতা ভুবন’, শোনা কথা তবু মগজে আছে যে প্রেমে পড়ার যন্তর–মন্তর। মগজে আছে কিছু অংশ, যেগুলো মানুষকে পরস্পরের প্রতি আসক্ত হতে সাহায্য করে। হিপোক্যাম্পাস, মিডিয়াল ইনসুলা, এনটেরিয়ার সিংশুলেট—মগজের এই তিন অংশ পারিতোষিক প্রাপ্তির অনুভূতিকে করে নিয়ন্ত্রণ। প্রেমে পড়াতেও রয়েছে এর অবদান। অন্তঃসাবী গ্রন্থিগুলোর যে কর্ম—একে চালায় যে প্রভু, এর নাম হলো পিটুইটারি গ্রন্থি। এটি নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন, আর দেহে তা নিঃসরণও করে।

আছে হাইপোথ্যালামাস: মগজের এ অংশ সবার নিয়ন্ত্রক। এ থেকে উৎপন্ন হয় ডেপোমিন, অক্সিটোসিন আর ভেসোপ্রেসিন। প্রেমে পড়ার জন্য এদের অবদানও কম নয়।

আছে কিছু উষ্ণ বিন্দু মানব শরীরে: কামোত্তেজক কিছু অংশ আছে শরীরে, এরা উদ্দীপনাতে সাড়া দেয়, যেমন নেত্রপল্লব, কপাল, কর্ণ, গ্রীবাদেশ, করোটি আর ওষ্ঠ। তলপেট আর হাঁটুদেশের পেছনটা।

এবার প্রেমে পড়ার পালা—ধাপে ধাপে

১. প্রথমেই এল ‘হাইপোথ্যালামাস’: নিঃসরণ করতে থাকে শরীরে ‘ডোপামিন’, এতে পরমানন্দ অনুভব, দারুণ রোমান্সের হলো শুরু; কী আনন্দ বইছে শরীরে!

২. এদিকে ডোপামিনের মান যত বাড়তে থাকে, কমতে থাকে আরেকটি রাসায়নিক ‘সেরোটনিন’।

সেরোটনিনের কাজের কমতি নেই, তবে প্রাসঙ্গিক কাজ হলো ব্যক্তির মনমেজাজ আর ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণ করা। সেরোটনিন মান কম থাকে, শুচিবাইগ্রস্ত বা বাতিকগ্রস্ত লোকদের। এ জন্য কি অঙ্গপ্রেমের হয় জন্ম? চোখে হারানো একজন একজনকে।

৩. ডোপোমিনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে উৎপন্ন হয় একটি বস্তু ‘নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর’। নতুন প্রেমে পড়ে যারা, তাদের মধ্যে এই বস্তুটা বড় বেশি। সম্প্রতি প্রেমে পড়েছে যারা, তাদের তুলনায় যারা প্রেমে নেই বা দীর্ঘ সম্পর্কের মধ্যে নেই, এদের মধ্যে নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর (এনজিএফ) থাকে কম। আরেকটি কথা, এনজিএফের পরিমাণের সঙ্গে রোমান্টিক অনুভূতির রয়েছে সরাসরি সম্পর্ক।

৪. হরমোন অক্সিটোসিন ও ভেসোপ্রেসিন কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরস্পর সংযোগ, একে অপরকে অঙ্গীকারে আবদ্ধ করার পেছনে এদের ভূমিকা বেশি। এই দুটি হরমোন আসে ‘হাইপোথ্যালামাস’ থেকে। এরপর এরা সঞ্চিত থাকে পিটুইটারির পশ্চাৎলোকে, সেখান থেকে প্রয়োজনে নিঃসৃত শরীরে। তীব্র আবেগ উত্তেজনা যখন তুঙ্গে ওঠার সীমানায়, এই হরমোন দুটি প্রবেশ করে রক্তস্রোতে।

দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বা প্রেমের পেছনে রয়েছে এ দুটি হরমোনের মূল্যবান অবদান।

৫. এরপর এ দুটি হরমোন মগজের নানা অংশে ফেলে প্রভাব। এর ক্রিয়া, বিক্রিয়া নানান সাড়া পড়ে শরীরে। বাড়ে কাজকর্ম মস্তিষ্কের রোমান্টিক কেন্দ্রে, প্রভাব ফেলে এমগডেলা। বিচারবুদ্ধি যায় কমে—প্রেমে পড়া মানুষ হয় নির্ভার, নির্ভয়। দুটি মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধন, প্রেম পায় পরিপূর্ণতা। রোমিও-জুলিয়েট, লাইলি ও মজনু, সেলিম ও আনারকলি, শাহজাহান ও মমতাজ, মার্ক অ্যান্টোনি ও ক্লিওপেট্রা, অবকিয়াস ও ইউরিবাইস, এসব অসম প্রেমের পেছনে রয়েছে হরমোন আর রাসায়নিকের কর্ম।

কিউপিডের স্বর্ণতির কাকে কখন বিদ্ধ করে কে জানে

উন্মাদের মতো প্রেমে পড়া, প্রিয় মানুষের গুণের বিচার করে না যে অঙ্গ: দুর্নিবার এ প্রেম যে কেবল বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দ্বারা উপলব্ধি করা যায়, তা স্বীকার করে না অনেকে। কিন্তু কী করে সেই বিশেষ একজনের প্রেমে পড়ার ব্যাপার ঘটে, তা দুর্জেয়। প্রেমে পড়া কি আরও জটিল, আরও জটিল রহস্য কি লুকিয়ে আছে অন্যত্র, যা এখনো অনাবিষ্কৃত? কে জানে? সরল অঙ্ক দিয়ে কেবল মেলানো যাবে ভালোবাসার ফল?