Thank you for trying Sticky AMP!!

ফ্রেমে বাঁধা গল্প

বুয়েট ফিল্ম সোসাইটির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম সোসাইটি পার করেছে প্রায় এক যুগ। প্রতিবছর বাড়ছে চলচ্চিত্রপ্রেমী শিক্ষার্থীদের এ সংগঠনের সদস্যসংখ্যা। ক্লাবের সদস্যদের জন্য কর্মশালা আয়োজনের পাশাপাশি চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনও করে বুয়েট ফিল্ম সোসাইটি। এই যেমন কিছুদিন আগেই আয়োজিত হলো বুয়েট ফিল্ম ফিয়েস্তা: আন্তবিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা ২০১৮। প্রতিযোগিতা না বলে একে বোধ হয় উৎসব বললেই মানায়। এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে মেতেছিল বুয়েট ক্যাম্পাস। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের তৈরি ছবি নিয়ে এসেছেন, দর্শক হিসেবেও এসেছেন অনেকে।

২৫ ও ২৬ জুন—দুই দিনব্যাপী আয়োজিত হয় এ উৎসব। ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জমা পড়েছিল প্রায় ৬৮টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নির্বাচিত ১৫টি চলচ্চিত্র নিয়ে আয়োজিত হয় চূড়ান্ত পর্ব। আর এ চূড়ান্ত পর্বে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (সমালোচক), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (জনপ্রিয়), শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য, শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা, শ্রেষ্ঠ শব্দবিন্যাস—এ ছয় বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়। বিচারক হিসেবে ছিলেন সাদ রিদওয়ান, কিঙ্কর আহ্সান ও মাহদী হাসান।

উৎসবের উদ্বোধন করেন ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বাংলাদেশের পরিচালক মোহাম্মদ আবীর ফেরদৌস। এরপর বুয়েট মিলনায়তন কেন্দ্রে বুয়েটেরই সাবেক ছাত্র তৌকীর আহমেদ পরিচালিত হালদা চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। এত মানুষের উপস্থিতি বুয়েট মিলনায়তন কেন্দ্র বোধ হয় খুব কমই দেখেছে। দ্বিতীয় দিনও দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

দ্বিতীয় দিনে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত ১৫টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়। অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক সুমন রহমান ‘বাজারি সিনেমার সাংস্কৃতিক রাজনীতি’ শিরোনামে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সমসাময়িক বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের নানা মোড় নিয়ে কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার ও বুয়েট ফিল্ম সোসাইটির (বিএফএস) মডারেটর ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী উপস্থিত ছিলেন। ‘হাউসফুল’ মিলনায়তনে দর্শক ছাপিয়ে গিয়েছিল একতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত। দাঁড়িয়ে থেকেও চলচ্চিত্রগুলো উপভোগ করেছেন অনেকে।

বিএফএসের সভাপতি যন্ত্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র পার্থ প্রতীম দাসের ভাষায়, ‘ওয়ার্ল্ডকাপ চলছিল তখন। সত্যি বলতে আমরা তেমন একটা দর্শক পাব বলে আশা করিনি। কিন্তু দেখলাম অডিটরিয়াম পুরোটা ভরে গেছে। মাঝখানে একবার এসি বন্ধ হয়ে গেল। জুন মাসের অসহ্য গরমে টিকে থাকা দায়। সেখানে সবাই গাদাগাদি করে ফিল্মগুলো দেখছিল। সবার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিই বোধ হয় এ উৎসবে আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’ চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত প্রতিটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রই ছিল দারুণ, চমকপ্রদ। কাহিনি থেকে পরিচালনা, অভিনয়, সম্পাদনা—সবকিছুই দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

উদাহরণ হিসেবে একটি ছবির গল্প বলা যাক। শুতি ভি এম পাইলট মডেল স্কুলে চলছে আন্তজেলা প্রমীলা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। অন্য স্কুলের মেয়েরা সবাই চলে এসেছে, কিন্তু মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান হাইস্কুলের মেয়েদের দেখা নেই। শেষ পর্যন্ত তারা যখন এল, মেয়েদের এই দলটার খেলোয়াড়দের দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ! দলের ফুটবলাররা মাঠে হাজির হয়েছে কনের সাজে! কেন? তাদের দলের একজন খেলোয়াড়কে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কনের সাজে খেলতে আসাই হলো তাদের প্রতিবাদ। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির নাম অনূঢ়া। বুয়েট ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত আন্তবিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য, শ্রেষ্ঠ শব্দবিন্যাস ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (জনপ্রিয়)—এ চার বিভাগে পুরস্কার জিতে নেয় ছবিটি। অনূঢ়া-এর পরিচালক যুথিকা দেউরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের স্নাতকোত্তর পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী। সবাইকে মুগ্ধ করে দেওয়া চলচ্চিত্রনির্মাতার সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেল, ভীষণ আনন্দিত তিনি। বললেন, বুয়েটের মতো জায়গায় পুরস্কার জেতাটা খুবই সম্মানের ব্যাপার। আর এ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বলতে গেলে কোনো আন্তর্জাতিক মানের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের চেয়ে কম ছিল না।

তবে বিচারকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজমের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফুয়াদুজ্জামান ফুয়াদের চলচ্চিত্র ইজ ইট গুড টু রান অ্যাওয়ে। মোবাইলে বানানো চলচ্চিত্রটিতে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক নানা সমস্যা। ফুয়াদ বলছিলেন চলচ্চিত্র নিয়ে তাঁর আগ্রহ আর স্বপ্নের কথা, ‘আসলে ফিল্মটা যখন বানাই, পুরস্কার জেতা আমার লক্ষ্য ছিল না। সবাইকে দেখানোর জন্যই বানিয়েছি। ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে খুব ভালো লাগে। এ নিয়ে আরও পড়ালেখা করতে চাই। যে ছবি নিয়ে সব ধরনের দর্শকের সামনে দাঁড়ানো যায়, অন্তত এমন একটা ছবি বানাতে চাই।’

বিচারকদের রায়ে নির্বাচিত সেরা তিন চলচ্চিত্র হলো ইজ ইট গুড টু রান অ্যাওয়ে, অনূঢ়া ও বিপ্রতীপ। বিপ্রতীপ ছবিটির পরিচালক বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্র সাইয়েদুল আবরার। এ ছবিগুলো অংশ নেবে ভারতের আসামের নওগাঁ আন্তর্জাতিক শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টারি শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। বুয়েটের মঞ্চে যাঁরা সাফল্য পেয়েছেন, এবার আসামেও সাফল্যের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।