Thank you for trying Sticky AMP!!

বইয়ের ব্যাগ, সঙ্গে গাছের ব্যাগ

ক্যাম্পাসে বিনা মূল্যে গাছ বিতরণের আয়োজন করেছিল মিরাজুলের অক্সিজেন বুক। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় বই-খাতার ব্যাগ ছাড়াও মিরাজুল ইসলাম মৃধার হাতে থাকে আরও একটি ব্যাগ। যেই ব্যাগ ভর্তি থাকে বিভিন্ন গাছের চারায়। গাছপ্রেমী মিরাজুল মানুষকে বিনা মূল্যে এই গাছের চারাগুলো বিতরণ করেন।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের নবম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মিরাজুল। ক্যাম্পাসের বন্ধুমহলে গাছবন্ধু নামেই তিনি সবার কাছে পরিচিত।

মিরাজুলের শৈশব কেটেছে গোপালগঞ্জের সবুজ এক পরিবেশে। তখন থেকেই গাছপালার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব। ২০১২ সালে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। ইট-কাঠের এই প্রাণহীন নগরজীবনের সঙ্গে ঠিক যেন খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। হোস্টেলে থাকার কারণে গাছ লাগানোর কোনো সুযোগ ছিল না সে সময়।

২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মিরাজুল। হোস্টেল ছেড়ে বড় ভাইয়ের বাসায় ওঠেন। এরপর ওই বাসার বারান্দা সাজিয়ে ফেলেন গাছে গাছে। মিরাজুল তখন নার্সারি থেকে গাছের চারা কিনতেন। তারপর কলম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছ পেলেন। অতিরিক্ত গাছটি তিনি তো অন্য কাউকে দিয়ে দিতেই পারেন। এতে আরেকজন বিনা মূল্যে একটি গাছ পেয়ে যাবেন।

তাই তিনি গাছটি অন্য কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করতে থাকলেন। কিন্তু গাছ নিতে আগ্রহী কাউকে পেলেন না। কোনো কোনো গ্রুপে তাঁর এই পোস্ট অনুমোদনও পায়নি। তারপর ঠিক করলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে অপরিচিত কাউকে গাছ উপহার না দিয়ে বন্ধুদের গাছ দেবেন।

এরপর থেকে নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসে ব্যাগে করে গাছ নিয়ে যাওয়া শুরু করলেন। মিরাজুল বলেন, ‘প্রথম দিকে একটু লজ্জা লাগত। বাজারের ব্যাগে গাছ নিয়ে ভার্সিটি যাচ্ছি, কেউ যদি হাসাহাসি করে!’

কিন্তু কেউই হাসি-ঠাট্টা করেননি। বরং ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে মিরাজুলের গাছের চাহিদা বাড়তে লাগল। এরপর মিরাজুলের সঙ্গে যোগ দেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের সায়মা ওবায়দা ও কামরুল হাসান। তিনজনের এই দল নিয়ে বিনা মূল্যে গাছ বিতরণ করতে থাকলেন  তাঁরা।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ‘অক্সিজেন বুক’ নামে মিরাজুল নিজের একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে ফেলেন। গাছের চাহিদা তখন এতটাই বেড়ে গেল যে মিরাজুল কোনো কোনো দিন তিন ব্যাগ ভর্তি করে গাছ নিয়ে যেতেন। তবে সবারই ক্লাস, পরীক্ষা আর ল্যাবের ব্যস্ততা আছে। তাই প্রতিদিন এভাবে গাছ দিতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় হয়ে যাচ্ছিল মিরাজুল ও তাঁর দলের অন্য সদস্যদের।

তখন মিরাজুলকে একজন বুদ্ধি দিলেন, প্রতিদিন এভাবে গাছ বিতরণ না করে, কয়েক দিন পরপর দিনব্যাপী ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে গাছ বিতরণ করতে। এই পরামর্শ মনে ধরে গেল মিরাজুলের।

এরপর জুলাই মাসে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তাতেই আয়োজন করলেন বিনা মূল্যে গাছ বিতরণের কার্যক্রম। বেশ ভালো সাড়া পেলেন প্রথম ক্যাম্পেইনে। এরপর অক্সিজেন বুকের ব্যানারে আরও তিনটি ক্যাম্পেইন করেছেন তাঁরা। তাঁদের সর্বশেষ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৮ জানুয়ারি। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখন মানুষ তাঁদের কাছ থেকে গাছ সংগ্রহ করতে আসেন।

মিরাজুল বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজারের ওপর গাছের চারা বিতরণ করেছি। এমন অনেকে আছেন যাঁরা কখনো একটি গাছও লাগাননি, অথচ আমাদের কাছ থেকে গাছ নিয়ে অনেকের বারান্দায় ছোটখাটো একটি বাগান করে ফেলেছেন।’

মিরাজুলের স্বপ্ন একদিন ঢাকা শহরের প্রতিটি বাড়ির বারান্দা গাছে গাছে পরিপূর্ণ থাকবে। তাঁর ভাষায়, ‘প্রতিটি বাড়ির বারান্দা যদি সবুজে ভরে যায়, তাহলে ভাবুন তো আমাদের এই ঢাকা শহরকে কত সুন্দর লাগবে!’