Thank you for trying Sticky AMP!!

বন্দিজীবনে অনবদ্য যে পাঁচটি বই পড়তে পারেন

দেকামেরন। জোভান্নি বোকাচ্চিও ১৩৪৮ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে ছড়িয়ে পড়া প্লেগ মহামারি থেকে বাঁচতে গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সে সময়ই তিনি এ বই লেখেন। ছবি: সংগৃহীত

সবকিছু থেকে দূরে থাকার এই সময়টিতে কেমন আছেন আপনি? একেবারে খুব দরকার না হলে বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভালো—এ কথা প্রতিদিনই শুনতে হচ্ছে আপনাকে। কোনোভাবে বেঁচে থাকার একটা পথ হয়তো পেয়ে গেছেন কেউ কেউ, কেউ কেউ আবার একাকিত্বকে সামাল দিতে পারছেন না।

এ রকম একটা সময়ে বই আর সিনেমা হতে পারে খুব ভালো সঙ্গী। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন প্রচুর সাহিত্যের বই পড়তে হতো। পড়াশোনার বিষয়ই ছিল সাহিত্য আর ভাষা। আজ হঠাৎ মনে হলো, সেই সাহিত্যের সাগরে ডুব দিয়ে কয়েকটি মোক্ষম বই যদি তুলে আনি, তাহলে এই বন্দিজীবনেও লাগতে পারে নান্দনিক রং। সে রকম কয়েকটি বই নিয়ে কথা হবে আজ।

বইগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো, ঘটনার প্রধান চরিত্রেরা এখানেও কাটাচ্ছে বন্দিজীবন। সব কটি বইয়েরই মূল জায়গা সেটা। আর এ কারণেই বইগুলো বেছে নেওয়া।

দেকামেরন

শুরুতেই বলা যাক দেকামেরনের কথা। জোভান্নি বোকাচ্চিওর দেকামেরন বইটি রেনেসাঁ যুগের এক অনবদ্য সৃষ্টি। যাঁরা পড়েননি এখনো, তাদেঁর জন্য বলি, এই বইটি আজও প্রাসঙ্গিক। আমরা তো পেত্রার্ক, দান্তের কথা খুব ভালোভাবে জানি। সে তুলনায় ইতালিরই আরেক প্রতিভাবান বোকাচ্চিও একটু কম পরিচিত এ দেশে।

দেকামেরনের কাহিনিতেও রয়েছে মহামারির কথা। সে সময় মহামারি ধেয়ে এলে কয়েকজন তরুণ-তরুণী ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে পালিয়ে যায় এবং মফস্বলের একটি প্রাসাদে বন্দিজীবন যাপন করতে শুরু করে। একাকিত্বের যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য তাঁরা একে অন্যকে এক–একটা গল্প বলতে শুরু করে। নানা স্বাদের, নানা বিষয়বৈচিত্র্যের সেসব গল্প। কোনোটা হাসির, কোনোটা কান্নার। এখন অন্তর্জালে খুঁজলে বইটা পাওয়া যাবে এবং অনায়াসে পড়ে ফেলা যাবে। তাতে এই বইয়ের আলোয় নিজেদের বন্দিদশা একটু হালকা হয়ে উঠতে পারে।

আবলামোভ। স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা এক জমিদারের গল্প। ছবি: সংগৃহীত

আবলামোভ

এরপর আসতে পারে রুশ লেখক ইভান গনচারোভের 'আবলামোভ'। এটি এক অলস রুশ অভিজাত তরুণের কাহিনি। সে রয়েছে নিজের ঘরেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে। দিনের পর দিন। অভিজাত তরুণের যে সামাজিক জীবনযাপন করার কথা, সেটা সে করে না। ইলিয়া ইলিচ আবলামোভ থাকে পিতেরবুর্গের এক গলিতে। ডিভানে শুয়ে শুয়েই সে কাটিয়ে দিচ্ছে সারা জীবন। তার জীবনের মূল সুরই হচ্ছে কল্পনা করা। এই মর্ত্যধামের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। কারও সঙ্গে যে সম্পর্ক রাখছে না, তাতে তার কিছুই আসে যায় না। এমনকি খাওয়ার জন্যও সে খাবার ঘরে যেত না। খেত সেই ডিভানে বসেই।

এ রকম জীবনেই কোনো এক অবিশ্বাস্য উপায়ে গৃহপরিচারিকাকে বিয়ে করে বসল আবলামোভ। কিন্তু তাতে তার জীবনযাত্রার ধরনে এল না কোনো পরিবর্তন। এসব কারণে ৩২ বছর বয়সেই ওর হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হতে শুরু করে এবং এর দুই বছর পর শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়ায় জমিদার আবলামোভ মারা যায়।

রাপুনজেল। ইউটিউবে শিশুতোষ কার্টুন হিসেবে ভীষণ বিখ্যাত এ গল্প। শিশুরা যেমন আনন্দ পায় রাপুনজেল দেখে, আপনিও আনন্দ পেতে পারেন এ গল্প পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

রাপুনজেল

ইতালি, রাশিয়া ঘুরে এবার আমরা আসি জার্মানিতে। গ্রিম ভাইয়েরা লিখেছিলেন রাপুনজেল নামের রূপকথাটি। ছোটবেলায় রূপকথার বই হাতে এলে এই কাহিনি পড়েনি, এমন কেউ কি আছে? ওই যে সেই মেয়েটির কথাই হচ্ছে, যে বসে থাকত বিশাল উঁচু এক কেল্লার ওপরের এক ঘরে। সৎমা রাক্ষসী ওকে বন্দী করে রেখেছিল এখানে। এখানে আসার অধিকার ছিল শুধু ওই রাক্ষুসীর।

সেই কেল্লায় কোনো দরজা ছিল না। রাক্ষসী এলে রাপুনজেল ওর দীর্ঘ বেণি নামিয়ে দিত নিচে। সেই বেণি বেয়ে বেয়ে রাক্ষসী উঠে আসত রাপুনজেলের কাছে। রাপুনজেল সেভাবেই একাকিত্বে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছিল। একদিন ও দেখতে পেল বনে হারিয়ে যাওয়া এক রাজপুত্রকে। আর তখনই কেল্লার বাইরের জীবন নিয়ে আগ্রহ জন্মাল রাপুনজেলের মনে। রাজপুত্র প্রথম সাক্ষাতেই রাপুনজেলকে বিয়ের প্রস্তাব দিল। প্রতিদিন আসতে লাগল কেল্লার কাছে। এরপর কী ঘটল, সেটা এতটাই মজার যে যাঁরা পড়েননি এখনো, তাঁদের পড়ার আগ্রহ নষ্ট করতে চাই না। তাঁরা গল্পটা খুঁজে নিয়ে পড়ে ফেলুক। শুধু এটুকু বলে রাখি, রাজপুত্র অন্ধ হয়ে যায়। এরপর সারা জীবন তাকে অন্ধ থাকতে হয় কি হয় না, রাপুনজেলের সঙ্গেই সে সারাটা জীবন কাটাতে পারে কি না, সেটাই খুঁজে নিন বইয়ে।

গ্রিগর সামসা। কাফকার সৃষ্টি করা অনবদ্য চরিত্র এটি। গল্পটিও বিশ্বসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। ঘরবন্দী সময়ে পড়তে পারেন। ছবি: সংগৃহীত

রূপান্তর

ফ্রানৎস কাফকার গ্রেগর সামসা এক অনবদ্য চরিত্র। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে, সে একটা বিশাল কদাকার প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়েছে। বাড়ির লোকেরাও তার এই পরিবর্তনে বিরক্ত, ভয়ার্ত। একটি ঘরে বন্দিজীবন শুরু হয় গ্রেগর সামসার। এ ধরনের একটা বিড়ম্বনার সঙ্গে একই বাড়িতে থাকার ব্যাপারে নিস্পৃহ হয়ে ওঠে তার পরিবারের লোকেরা। একসময় বাবার ছুড়ে দেওয়া এক আপেলের আঘাতে ওর উপাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর তা নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। একসময় মারা যায় গ্রেগর সামসা। পরিবারের কাজে লাগবে বলে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল সে। কিন্তু পেল এই পরিণতি।

অ্যান্ড দেয়ার ওয়্যার নান। শিউরে ওঠা গল্প। এ গল্পের ছায়া অবলম্বনে সারা বিশ্বে প্রচুর গল্প, উপন্যাস তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে প্রচুর সিনেমাও। পড়তে পারেন এই অবসর সময়ে। ছবি: সংগৃহীত

অ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়্যার নান

আগাথা ক্রিস্টির এক অনবদ্য রচনা এটি। এরকুল পুয়ারো কিংবা মিস মার্পল এখানে নেই। কেউ এসে রহস্যের জট খুলে দেয় না। কিন্তু তারপরও এমন এক রহস্যে ভরা কাহিনি, যা পড়তে পড়তে বারবার জানতে ইচ্ছে হয়, খুনি আসলে কে? সে উত্তর বইয়ের শেষ ছাড়া পাওয়া যায় না।

কেউ কাউকে চেনে না, এমন আটজন মানুষকে ওয়েন দম্পতি আমন্ত্রণ জানায় এক দ্বীপে। তারা দ্বীপে এসে দেখে, পরিবারের লোকজন সেখানে নেই, দুজন পরিচারকই রয়েছে শুধু। যখন সবাই যে যার ঘর খুঁজে নেয় এবং আয়েশ করে একটি ঘরে সবাই যখন জড়ো হয়, তখনই একটি গ্রামোফোন থেকে ভেসে আসে এক কণ্ঠস্বর। সে কণ্ঠস্বর উপস্থিত প্রতিটি মানুষের দোষ বর্ণনা করে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। জীবনের কোনো না কোনো ক্ষেত্রে তারা এমন কোনো অপরাধ করেছিল, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ডতুল্য। এরপর সত্যিই একের পর এক মানুষ মরে যেতে থাকে। এই বন্দিজীবন থেকে বের হওয়ারও উপায় নেই। ফলে মৃত্যুই ছিল তাদের পরিণতি।


আশা করি, এই উপন্যাস ও গল্পগুলো আপনার একাকিত্বকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।