Thank you for trying Sticky AMP!!

বলেছিলে গো, ভালোবাসি গো

‘বলেছিলে গো, ভালোবাসি গো/ আজ কেন গো, এমন হলো....’। সম্প্রতি ফেসবুকে গানটি ভাইরাল হয়েছে। আলোচিত এই গান চার মাসে শুধু একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকেই দেখা হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ বার। গানটি গেয়েছেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের বাউল সুকুমার মহন্ত। ৬৫ বছর বয়সী এই বাউল সুকুমার বৈরাগী নামেই বেশি পরিচিত। তাঁর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন আনোয়ার পারভেজ

গানে হাতেখড়ি কীভাবে?

সুকুমার বাউল: আমরা চার ভাই ও তিন বোন। অভাব-অনটনে শৈশব কেটেছে। পড়াশোনা করতে পারিনি। গানের প্রতি শৈশবেই অনুরাগ জন্মায়। আমার দাদু প্রভু বৈরাগীও গ্রামে গ্রামে জারিগান করতেন। ছোটবেলায় দাদুর সঙ্গে এ–গ্রাম ও–গ্রাম ঘুরে জারিগান শুনতাম। জারিগানে হাতেখড়ি আমার দাদুর কাছে। ১৭ বছর বয়সে দাদুর সঙ্গে জারিগান আর কবিগান গাওয়া শুরু করলাম।

কাউকে না পাওয়ার বেদনা থেকেই গানটা বেঁধেছেন?

সুকুমার বাউল: কৈশোরে এক মেয়ের সঙ্গে ভাব হয়েছিল। তাকে খুবই ভালোবাসতাম। তিন বছর আমাদের ভাব-ভালোবাসা চলল। কিন্তু গানের মানুষ সংসারী হই কেমনে? ২২ বছর বয়সে মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল। আমাকে ছেড়ে গেল। ভালোবাসা হারানোয় খুব কষ্ট পেলাম। দোতারা হাতে নিলাম। গানকে ভালোবেসে পথে নামলাম। সেই কণ্ঠ আজও থামেনি। দোতারাও হাত থেকে নামেনি। কুষ্টিয়ার লালন আখড়া ছাড়াও সিলেট, ঢাকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাজারে মাজারে গান করেছি, বছরের পর বছর সেখানেই কাটিয়েছি। এক যুগ ভারতের পথে পথে ঘুরে গান করেছি। গান আর সুরে মগ্ন থেকেছি। কিন্তু অন্তরের সেই ভালোবাসা হারানোর কষ্ট-বেদনার আগুন আজও নেভেনি। ধিকি ধিকি জ্বলছে।

বছর দু-এক আগে একটি মাজারের পাশে শুয়ে আছি। মনের আয়নায় ভেসে উঠল ৪৮ বছর আগে হারানো ভালোবাসার সেই প্রিয় মুখ। আনমনে গেয়ে উঠলাম, ‘বলেছিলে গো, ভালোবাসি গো/ আজ কেন গো, এমনই হলো/ বলব না গো, আর কোনো দিন/ ভালোবাসো তুমি মোরে’। কয়েক দিন চেষ্টার পর সুর তুললাম। এরপর অনেকবার গেয়েছি সেই গান।

আপনার গাওয়া গানটা তো এখন অনেক আলোচিত, জানেন?

সুকুমার বাউল: জেনেছি। এখন প্রতিদিনই অসংখ্য ফোন আসছে। ভক্ত-শ্রোতারা গানের প্রচুর প্রশংসা করছেন। গান গাওয়ার বায়না আসছে।

ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া গানটি কবে গাইলেন?

কিছুদিন আগে। বগুড়া শহরের পরিচিত একজনের বাসায় গিয়েছিলাম। সঙ্গী দোতারা তো ছিলই। সেখানে দুটি গান শোনানোর আবদার করা হলো। এই গানটা দরদ দিয়ে গাইলাম। সেখানেই উপস্থিত একজন গানটা ভিডিও করেছিলেন। সম্ভবত তিনিই ইউটিউবে ছেড়েছেন।

ঘরসংসার আর করা হয়নি?

সুকুমার বাউল: মেয়েটির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ঘরছাড়া উদাসী বাউলজীবন বেছে নিলাম। পায়ে দড়ি বাঁধতে বাবা-মা বিয়ে দিলেন। কিন্তু সংসারে মন টিকে না। বিয়ের এক বছরের মাথায় ছেলেসন্তান হলো। কিন্তু ঘরসংসারের মায়া আমাকে আটকাতে পারল না। ঘর থেকে বের হলাম। পথে প্রান্তরে ঘুরে একদিন ভারতের বালুঘাট পৌঁছে গেলাম। সেখানে এক যুগ পরবাসী বাউলজীবন কেটে দিলাম। ১২ বছর পর দেশে ফিরলাম। সংসারী হওয়ার চেষ্টা করলাম। আরও এক মেয়ে হলো। কিন্তু বাউলের মন, সংসারী হতে পারলাম না। এখন ৬ সদস্যের একটা বাউল দল করেছি। সঙ্গীরা ঢোল, খঞ্জনি, সারিন্দা ও বাঁশি বাজান।
সারা দেশ থেকে ফরমাশ আসে, সদলবলে বাউলগান করি। গান গেয়েই সংসার চলে।