Thank you for trying Sticky AMP!!

বান্দরবান খাগড়াছড়ি ভায়া রাঙামাটি

আলুটিলার গুহা, খাগড়াছড়ি

কয়েক বছর আগেও ঈদের আগে লোকজন প্রশ্ন করত, এবার কী কিনলেন? এখন প্রশ্ন করে, ঈদে কি বাড়ি যাচ্ছেন, না কোথাও বেড়াতে যাছেন? হ্যাঁ, সময় বদলেছে। এখন তাই ঈদের ছুটিতে অনেকেই দলে-বলে বেরিয়ে পড়েন সুন্দর কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য।
সব সময়ই আমরা বেড়ানোর পাগল। আমরা মানে আমি আর আমার স্বামী। হয়তো এক দিনের ছুটি, আমরা পরিকল্পনা করতে শুরু করি কোথায় যাওয়া যায়? আর সেটা যদি বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হয়, তাহলে তো কথাই নেই। গত বছর ঈদের ছুটিতে আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায়। সঙ্গে আমাদের কয়েকজন বন্ধু। বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—এই তিন জেলা ঘুরে আসার পরিকল্পনা অবশ্য হঠাৎ করেই। ঈদের সকালে আমরা গাড়ি নিয়েই ঢাকা থেকে রওনা হয়ে যাই বান্দরবানের পথে। যেহেতু ঈদের দিন, তাই যানজটের ধকলও ছিল না মহাসড়কে। বিকেল নাগাদ পৌঁছে গেলাম বান্দরবানে। এখানে থাকার জন্য ভালো জায়গা হলো মিলনছড়ির হিলসাইড রিসোর্ট। তবে আগে থেকে বুকিং না দিয়ে এলে বিপদ।

ঈদের আমেজ টের পাওয়া গেল রিসোর্টে পৌঁছেই। লোকে লোকারণ্য। তবে খাবারের মেন্যুতেও দেখা গেল পোলাও-কোরমার নাম। এই রিসোর্টে বেড়াতে আসা এক পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি মজিবুর রহমান জানালেন, সকালবেলা রিসোর্টের গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন বান্দরবান শহরে। সেখানে ঈদের নামাজ পড়েছেন তিনি। অন্য অতিথিদের কাছ থেকে জানা গেল, সকালে নাশতার মেন্যুতে ছিল সেমাই। বাহ্!
ঘরের বাইরে ঈদ, তবু টুকটাক ঈদের আমেজ ছিল সবকিছুতেই। মিলনছড়ির রেস্তোরাঁয় বসে বর্ষার শঙ্খ নদ দেখতে দেখতেই কেটে গিয়েছিল আমাদের বিকেল ও সন্ধ্যা। পরদিন রুমা ও নীলগিরি বেড়িয়ে বান্দরবানের পাট চুকিয়ে রওনা হয়েছিলাম চন্দ্রঘোনা ও কাপ্তাই হয়ে রাঙামাটির দিকে। আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু অপূর্ব পাহাড়ি রাস্তা! নিচে গভীর গিরিখাদ, দূরে কুয়াশা পাকিয়ে ওঠা পাহাড়। মন ভরিয়ে তোলার শতভাগ গ্যারান্টি। মাঝখানে ছোট্ট একটা ফেরি পার হয়ে পৌঁছে গেলাম কাপ্তাই। সেখানে একটা ঘরোয়া হোটেলে কাপ্তাই হ্রদের ছোট মাছের তরকারি দিয়ে সেরে নিয়েছিলাম দুপুরের খাবার।

রুমায় যাওয়ার পথে রংধনু দেখলাম। ছবি: জিয়া ইসলাম

তারপর বিকেলে কাপ্তাই হ্রদে নৌকায় চড়ে রওনা হলাম রাঙামাটির দিকে। সব জায়গাতেই মানুষের ভিড়। বেশির ভাগই পরিবার নিয়ে ঈদের ছুটিতে এসেছেন। রাঙামাটিতে এলে প্যাদাটিংটিংয়ে বাঁশের চোঙায় মুরগি রান্না না খেলে তো হবে না। সেবারও তা-ই করলাম। আর শুভলংটাও দেখে এলাম। ঘোর বর্ষায় এই শুভলং না দেখলে তো মিস। পরদিন আমরা খুব সকালে উঠে রওনা হয়ে গেলাম খাগড়াছড়ির দিকে। রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি দুই ঘণ্টার পথ। বান্দরবান আর রাঙামাটির তুলনায় খাগড়াছড়ি শহরটা বেশ সাদামাটা। তবে শহরের আশপাশের এলাকা বেশ বুনো আর অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ লাগানো। খাগড়াছড়িতে আমরা গিয়েছিলাম আলুটিলার গুহায়। দুর্গম আর অন্ধকার এই গুহার এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট। গুহার ভেতর দিয়ে বইছে একটা ঝরনা, কাজেই পা ভিজবেই, জুতো জোড়া আগেই খুলে নিতে হবে। গুহা-অ্যাডভেঞ্চার শেষ করে শহরের মধ্যে সিস্টেম নামের একটা রেস্তোরাঁয় খেয়ে আমরা রওনা হয়েছিলাম ঢাকার দিকে।

চাইলে ঈদে যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন এই পাহাড়ি অঞ্চলগুলোয়। এ ছাড়া আরও সুন্দর অনেক জায়গা তো দেশে আছেই। বর্ষাকাল এসব জায়গায় বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো সময়। আর ঈদের ছুটি তো এবার বর্ষাতেই পড়েছে!