Thank you for trying Sticky AMP!!

বিয়েও করব ২৯ ফেব্রুয়ারি

জন্মদিনে মা–বাবার সঙ্গে ছোট্ট সাখাওয়াত। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীতে কিছুসংখ্যক মানুষের জন্মদিন ২৯ ফেব্রুয়ারি। সেই অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে একজন হতে পারা নিতান্তই আনন্দের বিষয়। তাই লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষে জন্মদিন নিয়ে কষ্ট থাকলেও এ বিষয়টি ভাবলে একদিক থেকে সুখানুভূতিও কাজ করে।

আমার ক্ষেত্রে লিপ ইয়ারে জন্মগ্রহণ এক শুভ ঘটনা হিসেবেই পরিবার-পরিজন মেনে নিয়েছিল। তাই আমার নাম রাখা হয়েছিল ‘শুভ’। আত্মীয়স্বজন প্রায় সবাই এখনো আমাকে এ নামেই ডাকে। বিশেষ দিন হওয়ায় আমার জন্মদিনের কথা তাদের মনে গেঁথে আছে। তাই জন্মদিন এলে সবাই নিজ থেকেই শুভেচ্ছা জানায়। ২৯ ফেব্রুয়ারি জন্ম হওয়ার কারণে আমি বন্ধুমহলেও বিশেষ সমাদৃত। অনেকের মতে, আমিই নাকি একমাত্র তাদের জীবনে, যার জন্ম অধিবর্ষে।

কিন্তু আমার জন্মের মুহূর্ত ছিল শঙ্কার। ১৯৯৬ সালের উত্তাল এক সময়ে আমার জন্ম। দেশে তখন হরতাল-অবরোধ চলছিল। সড়ক যোগাযোগের সঙ্গে থেমে থেমে রেল যোগাযোগও বন্ধ থাকত। ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার; আমার মা সংকটাপন্ন অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে। জেলা সদরে সে সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন না, তিনি ঢাকায় ছিলেন। ঢাকা থেকে চিকিৎসক এলে তবেই কিছু একটা ব্যবস্থা হবে। হরতালের কারণে সে আশা প্রায় সবাই ছেড়েই দিয়েছিল, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে সেদিন যমুনা এক্সপ্রেস হরতাল উপেক্ষা করেও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসে। রাত ১২টার কিছু আগে ট্রেনে চেপে আসেন ডা. নীলুফা মোশারাত। অনেকটা তাঁর আন্তরিকতার কারণেই আমি আজ লিখতে পারছি। বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটায় অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে আমার জন্ম হয়। আমার জন্মদিনের মতো আমার জন্মের ইতিহাসও নাটকীয় বটে।

যখন এসব ঘটনা জেনেছি—সেই থেকে যমুনা এক্সপ্রেস এখনো আমার প্রিয় ট্রেন। বহু দেশের বহু শহরে আমি ট্রেনে চড়েছি কিন্তু যমুনা এক্সপ্রেসের জন্য আমার হৃদয়ে এক আলাদা স্থান রয়েছে।

জন্মদিন পালন নিয়ে বরং কিছু বলি। ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের বংশে জন্মদিন পালনের তেমন রেওয়াজ নেই। তবে বিশেষ দিবস হওয়ায় আমার প্রথম লিপ ইয়ারের জন্মদিনটাই শুধু ঘটা করে উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্‌যাপন করা হয়েছিল। তখন আমার বয়স ছিল চার। সেই জন্মদিনের উৎসবে আমার সব আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীরা শামিল হয়ে আমার প্রতি যে ভালোবাসার দেখিয়েছিল, তা আজও মনে রেখেছি।

প্রথম অধিবর্ষের সেই জন্মদিন উদ্‌যাপনের পর আজ কেটে গেছে বহু বছর। এর পরের জন্মদিনগুলোতে কখনো অনুষ্ঠান করা না হলেও আমার পরিবার থেকে দুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। লিপ ইয়ার বাদে বাকি বছরগুলোতে জন্মদিন নিয়ে আমার বিশেষ কোনো অনুভূতি কাজ করে না। তবে আমি সাধারণত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৭ ফাল্গুন অন্যান্য বছরের জন্মদিন উদ্‌যাপন করে থাকি।

অধিবর্ষে জন্ম হওয়ার কিছু মজার দিকও আছে। সবাই যখন প্রতিবছর জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে হিসাব-নিকাশ করে, আমি তা করি চার বছর পরপর। আমার কাছে প্রতি চারটি বছর জীবনের একেকটি অধ্যায় আর বাকি বছরগুলো গল্পগুচ্ছ। কেউ বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলি, আগামী লিপ ইয়ারেই হয়তো বিয়ে করব। তবে পাত্রীরও জন্ম হতে হবে ২৯ ফেব্রুয়ারি। এভাবেই হাসি-কান্না আর সুখ-দুঃখের মায়াজালে কেটে যাচ্ছে সময়, বয়স বাড়ছে। অপেক্ষা আরও একটি অধিবর্ষের, নতুন কোনো গল্প লেখার, নতুন কোনো অধ্যায়ের।