Thank you for trying Sticky AMP!!

বৃষ্টিভেজা দিন

.

আশপাশের কোথাও হয়তো বৃষ্টি হয়েছে। খোলা জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে। বাতাসে টেবিলের কাগজপত্র এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এলোমেলো কাগজগুলো গুছিয়ে ওপরে একটা পেপারওয়েট দিয়ে রাখা দরকার। পেপারওয়েট দিতে হলে আমাকে নিজের ডেস্ক ছেড়ে পাশে জলিল সাহেবের ডেস্কে যেতে হবে। জলিল সাহেবের টেবিলে একাধিক পেপারওয়েট থাকে।

অ্যাকাউন্ট্যান্ট জলিল সাহেব। সব সময় তাঁর মুখ ভার থাকে। বিমর্ষ-বিষণ্ন একজন মানুষ। তবে বৃহস্পতিবার দেখি তাঁর চোখমুখ চনমন করে ওঠে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাজকর্মে ঢিলেঢালা ভাব বাদ দিয়ে কাজের গতি বাড়িয়ে দেন। ঘড়ির কাঁটা চারটা ছুঁতেই টেবিলের পাশে রাখা ভারী ব্যাগটা নিয়ে উঠে পড়েন। এক ঝলক হাসি দিয়ে বলেন, গেলাম।

দুদিন পর দেখা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকবেন। আমি এ ধরনের কথাবার্তায় কোনো প্রত্যুত্তর দিই না।

আজ বৃহস্পতিবার। জলিল সাহেব একটু আগে ব্যাগভর্তি জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেছেন। ব্যাগটা নিয়ে বের হওয়ার সময় তঁাকে বেশ কসরত করতে দেখা গেল। হয়তো সারা সপ্তাহের টুকিটাকি যা লাগে, সবই সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ভারী ব্যাগ বহন করার মধ্যেও হয়তো একধরনের আনন্দ আছে। এ আনন্দ প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য পাওয়ার আনন্দ।

এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে একেবারে জোরেশোরে। একজন অফিস থেকে বের হয়ে ব্যাগ বুকে চেপে ধরে রাস্তার উল্টো দিকে দৌড়াচ্ছেন। কেউ কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে গাড়ির আশায় দাঁড়িয়ে আছেন।

করিম আমাকে দেখে একবার চা দিতে চাইল। তার চোখেমুখের অভিব্যক্তি বলছিল, বৃহস্পতিবার এই সময় কেউ অফিসে থাকে! কী আশ্চর্য! আমার কোথাও যাওয়ার তাগিদ নেই, আমার জন্য এ শহরে কেউ অপেক্ষা করে নেই। আমার জন্য সপ্তাহের সব দিনই সমান। করিম আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চৌদ্দ বছরের এই কিশোরেরও বাইরে যাওয়ার তাড়া আছে। অথচ ৩২ বছর পেরিয়েও আমার বের হওয়ার কোনো তাড়া নেই।

আমি চা খেয়ে নিচে নামলাম। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির জলে চশমার লেন্স ঘোলা হয়ে গেছে। চশমাটা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখি অফিসফেরত এক যুবক বৃষ্টিতে ভিজছে। দু হাত ছড়িয়ে দিয়ে, আকাশের দিকে মুখ করে, বৃষ্টির জলে মনের সুখে ভিজছে। দৃশ্যটা দেখে আমার নিজেরও কেন জানি বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হচ্ছে। কত দিন ধরে বৃষ্টিতে ভিজি না!

শাইলা পারভীন

গাজীপুর।