Thank you for trying Sticky AMP!!

বৈষম্যহীন পৃথিবী চাই : নিকোল কিডম্যান

নিকোল কিডম্যান

অস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারজয়ী অস্ট্রেলীয়-আমেরিকান অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান। জন্ম ১৯৬৭ সালের ২০ জুন। ২০০২ সালে দ্য আওয়ার্স সিনেমার জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অ্যাকাডেমিক পুরস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জয় করেন। কিডম্যান ১৯৯৪ সালে ইউনিসেফ ও ২০০৬ সাল থেকে জাতিসংঘের নারী উন্নয়ন তহবিল ইউএনইউমেনের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নিকোল এ বক্তব্য দেন।
আমি নারী। এটা আমার গর্ব, আমার পরিচয়। নারী বলেই যে আমি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করি তা নয়। আমি নির্যাতিত মানুষের জন্য কাজ করি। নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। আমি জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংগঠন ইউএন উইমেনের হয়ে কাজ করতে পেরে গর্বিত। আমার কাজ মানুষ নিয়ে। মানবসভ্যতার অর্ধেক যারা, সেই নারীর জন্যই আমার কাজ। তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য আমি কথা বলি। এখন নারীরা কিছুটা হলেও আগের চেয়ে পুরুষের মতো অধিকার ও সুযোগ লাভ করছেন। এটা নিশ্চয়ই আমাদের মানবসভ্যতার জন্য অনন্য এক কীর্তি।
নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য কথা বলতে কিংবা লড়াই করতে আমি হঠাৎ করে রাস্তায় আসিনি। ছোটবেলা থেকেই নারী অধিকার আদায়ের সঙ্গে অবচেতন মনে যুক্ত আমি। আমার মা ছিলেন অসাধারণ এক নারী। নারীদের অধিকার আর স্বকীয়তা নিয়ে জোরে কথা বলেন, প্রতিবাদ করেন এমন একজন মানুষ ছিলেন তিনি। আমার বেড়ে ওঠা ছিল এমনই এক পরিবেশে। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই আমার নারী অধিকার নিয়ে কথা বলা। আমার মা নারীদের পুরুষের চেয়ে আলাদা, কম বা বেশি অধিকার সহ্য করতে পারতেন না। সমান অধিকারের জন্য তিনি কথা বলতেন। মা আমাকে স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘সব সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবে। যা ন্যায় তার জন্য কোনো ছাড় দেবে না।’
জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হওয়ার পরেও কেন নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য? নারীরাও তো মানুষ। আমরা দেখি, যখন নারীরা শুধু নিজের জন্য অর্থ আয় করেন না। যখন নারীদের অর্থ আয়ের সুযোগ থাকে, তখন তাঁরা সেই অর্থ তাঁদের সন্তানদের পেছনে ব্যয় করেন। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সেই অর্থ খরচ করেন তাঁরা। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে নারীরা ভূমির মালিক হতে পারেন না। তাঁদের মালিক হওয়ার অধিকার নেই। কাজের মাধ্যমে অর্থ আয়ের কোনো সুযোগই দেওয়া হয় না নারীদের। সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের দেখা পান নারীরা। প্রতিটি দেশেই নারীরা পুরুষের মতো কাজ করেও কম মজুরি পান।
আমরা আরও দেখি, সব দেশে নারীরা রাজনীতি করার সুযোগ পান। সেখানকার রাজনীতি অন্য দেশের চেয়ে আলাদা। এসব দেশের রাজনীতিতে সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু গুরুত্ব পায় বেশি। শিক্ষা আর পরিবেশের মতো বিষয়গুলো তখন আলোচিত হয়। কিন্তু পৃথিবীজুড়ে প্রতি পাঁচজন সাংসদের একজন মাত্র নারী। নারীরা প্রশাসনিক কাজকর্মেও বেশ দক্ষ। পৃথিবীর যেসব কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানে নারীরা প্রধান নির্বাহী, সেসব প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমাণ অন্য সবার চেয়ে বেশি দেখা যায়। সেসব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা নারীর হাতে বলেই তাদের আয় বেশি এবং কর্মদক্ষতা অন্য সব কোম্পানির চেয়ে ভীষণ অন্য রকম। কিন্তু পৃথিবী সেরা ৫০০ কোম্পানির মধ্যে মাত্র ২১ জন নারী নির্বাহীকে আমরা দেখতে পাই।

জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছে। আমি সে জন্যই এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছি। আমাদের কাজ নারীর উন্নয়ন আর ক্ষমতায়ন। নারীরা যেন রাজনীতিতে আসতে পারেন, যে কাজ করেন, তার জন্য পুরুষের সমান মজুরি পান, সে জন্য তাঁদের সচেতন করাই আমাদের কাজ। যেসব অঞ্চলে যুদ্ধ-সংঘাত চলছে, বিশেষ করে সিরিয়ার মতো অঞ্চলে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। নারীদের যুদ্ধকালীন অধিকার ও সহযোগিতার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। নারীর কণ্ঠ যেন সমাজে শোনা যায়, সে জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা প্রয়োজন।
সারা বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানি, বা নির্যাতনের শিকার হন। এই নির্যাতন রোধ, হয়রানি প্রতিরোধের জন্য সারা বিশ্বে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীদের অধিকার রক্ষার চেষ্টা চলছে। তরুণেরা যেন এ বিষয়ে সচেতন হন, তার জন্য অনেক ধরনের কাজ করা হচ্ছে।
আমি প্রত্যাশা করি, নারীর অধিকার নিয়ে সবাই সচেতন হবেন। আপনি যে-ই হোন না কেন, যা-ই করুন না কেন, আপনার জায়গা থেকে নারীর অধিকার আদায়ের জন্য কথা বলুন। আমরা এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেই পারি, যেখানে নারীদের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈষম্য আর সংঘাত থাকবে না।
সূত্র: ইউএনউইমেন ডটঅর্গ, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: ফিরোজ জামান চৌধুরী