Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রেইল

অলংকরণ: তুলি

পুরোনো ধাঁচের একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এক বন্ধুর মাধ্যমে বাড়ির মালিকের সঙ্গে পরিচয়। মালিক তাঁর দূর-সম্পর্কের আত্মীয়। ব্যাচেলরদের বাসাভাড়া না দেওয়ার কালে তিনি এসেছেন আশীর্বাদ হয়ে। আমাদের তাঁর বাসা ভাড়া দেবেন বলে মৌখিকভাবে সম্মত হয়েছেন।
মালিক থাকেন তিনতলায়। চারতলার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। একটা কক্ষ প্রস্তুত হয়েছে। সেখানেই উঠতে হবে। একবার কলবেল চেপে আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম। কোনো সাড়াশব্দ নেই। কারও বাসায় এসে বারবার কলবেল চাপতে নেই। অপেক্ষা করতে হয়। এটা ভদ্রতা। আমরা ভদ্র সাজার সব রকম চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। আবার বেল চাপলাম। নাহ্, কোনো সাড়া নেই। তারপর আবার। তিনবার কলবেল চাপার পর কাজের মহিলা-টাইপের একজন খাঁকারি দিলেন।
-‘কে?’
-‘আমরা। মানে চারতলার রুমটা দেখতে এসেছি। আঙ্কেলের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
-‘ও, আপনারাই নতুন ভাড়াটে! খাড়ান, নামছি।’

দৃশ্যপট থেকে কাজের মহিলা সরে যাওয়ার পর, কেউ একজন সন্তর্পণে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আমাদের তিনজনের দৃষ্টিই সেদিকে আটকে যায়। এমন নিখুঁত সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো দায়। শুধু চাহনিতে কেমন অসহায়ত্ব! সেটাও অন্য ধরনের সুন্দর। মনে হয়, একটু ধমক দিলেই গাল ফুলিয়ে কেঁদে দেবে!
২.
বাসা অপছন্দ করার কারণ নেই। একটাই ঘর। তাতে তিনজনের থাকতে অসুবিধা হবে না। বাসাভাড়ার সব শর্তে রাজি হয়ে উঠে পড়ি। সেদিন বারান্দায় মেয়েটিকে দেখার পর আমাদের মধ্যে উত্কণ্ঠা! আবার কবে মেয়েটিকে দেখব! রাতে বাসার মালিক আমাদের খোঁজখবর নিতে আসেন। তিনি আমাদের খোঁজ নেবেন কি, উল্টো আমরাই তাঁকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে থাকি। একটুও বিরক্ত না হয়ে তিনি নিজের কথা বলেন। তাঁর ছেলে নেই, একটাই মেয়ে। মেয়েটির জন্মের সময় ওর মা মারা যায়। তিনি আর বিয়ে করেননি। নিজের সবটুকু উজাড় করে মায়ের অভাব পূরণের চেষ্টা করেছেন। কতটুকু পেরেছেন তা নিয়ে ভাবেন না। তবে মেয়েটির জন্য কষ্ট হয়। জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী!

লোকটির কথায় আমরা তিনজনই থ হয়ে যাই। তিনি পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখের কোণের অশ্রু মুছে বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছা ছিল ওকে উচ্চশিক্ষিত করব। তা আর হলো কই? মেয়েটিরও পড়াশোনার প্রবল ইচ্ছা। কিন্তু বাসায় এসে কেউ ব্রেইল শেখাতে চায় না। একজন শিক্ষক রেখেছিলাম। কিছুদিন পড়ানোর পর তিনি আর আসেননি। নতুন শিক্ষকও পাচ্ছি না। তোমাদের পরিচিত কেউ থাকলে আমাকে জানিও।’

‘আঙ্কেল, এ নিয়ে আপনি ভাববেন না। ব্রেইলের ওপর আমার প্রশিক্ষণ আছে। আগামী মাসের ব্যস্ততা শেষ হলে আমিই ওকে পড়াতে পারব।’ আমার কথায় দুই রকম প্রতিক্রিয়া হয়। বাসার মালিক আশ্বস্ত হয়ে খুশি মনে বিদায় নেন। আর দুই বন্ধুর চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া হয়ে যায়।

-তুই ব্রেইল শেখাবি? আগে তো তোকেই ভালো করে শিখতে হবে!

-কিছুদিন ব্রেইল নিয়ে পড়াশোনা করতাম বলে তোরাই উপহাস করতিস। সেটাই কাজে লেগে গেল! যেটুকু শেখার বাকি, এক মাসে শিখে নেব।