ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের টিকিট হাতে...
দৃশ্যগুলো অনেকটা স্বপ্নের মতো!
উপস্থাপকের আমন্ত্রণে মঞ্চে উঠলেন ইউনিলিভারের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা লিনা নায়ার। সঙ্গে অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা কেট রবার্টসন ও সানসিল্কের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনাপ কুটলে ওজেকান।
খানিকটা সময় নিয়ে লিনা ঘোষণা করলেন, ‘দিস ইয়ারস ফিউচার লিডারস লিগ চ্যাম্পিয়ন...বাংলাদেশ!’
২৯টি দেশের শ খানেক তরুণসহ লন্ডনের মিলেনিয়াম গ্লস্টারশায়ার হোটেলের বলরুমে অতিথিরা দাঁড়িয়ে গেলেন। পড়ল তুমুল করতালি। মুখ ঘুরিয়ে সবাই তখন দেখছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) ২০তম ব্যাচের তিন ছাত্রকে—আয়মান সাদিক, সাজিদ আলম ও ইশমাম চৌধুরী।
বিজয়ীত্রয়ী তখন ভাবছেন, তিনজন একসঙ্গে একই স্বপ্ন দেখবেন সেটা তো সম্ভব না। অতএব ব্যাপারটা স্বপ্ন নয়, সত্যি! মঞ্চে যখন পা রেখেছেন, সাজিদ আলমের পকেটে থাকা ছোট্ট বাংলাদেশের পতাকাটা ততক্ষণে হাতে উঠে এসেছে। ঝকঝকে সোনালি রঙের চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটার সঙ্গে পতাকাটাও মেলে ধরলেন তাঁরা।
কেমন লাগছিল সেই মুহূর্তে? ‘সত্যি কথা বলতে প্রথম থেকে আমাদের দল অত গুরুত্ব পায়নি। অনেকে বাংলাদেশের নাম জানত না, কেউ কেউ ঠিকমতো “বাংলাদেশ” উচ্চারণও করতে পারছিল না। কিন্তু ঘোষণাটা যখন এল, সবাই দাঁড়িয়ে “বাংলাদেশ, বাংলাদেশ” বলে চিয়ার করছিল। সেই স্মৃতি কোনো দিনও ভোলার মতো না।’ স্বস্তিমাখা কণ্ঠে বলছিলেন বিজয়ী দলের সদস্য আয়মান সাদিক।
এর আগে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাঁদের। গত বছর অক্টোবরে আয়োজিত ‘বিজমায়েস্ত্রো ২০১৫’-তে দেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৯টি দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তবেই পেয়েছিলেন ফিউচার লিডারস লিগে অংশ নেওয়ার সুযোগ। আয়োজক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার। ব্যবসায়িক উন্নতির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের চলমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয় এই প্রতিযোগিতায়। ইউনিলিভারের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আছে যেসব দেশে, সেসব দেশের তরুণদেরই তারা আহ্বান জানায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য। সব পর্ব পেরিয়ে অবশেষে ১০ থেকে ১৩ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে হয়ে যাওয়া ‘ফিউচার লিডারস লিগ’-এর চ্যাম্পিয়নের ট্রফি উঠল বাংলাদেশের তিন তরুণের হাতে।
কী ছিল এবারের সমস্যা, যার সমাধান দিয়ে মিলল এই সাফল্য? ইশমাম জানাচ্ছিলেন সে কথা। ‘দুই ধাপে হয়েছিল এবারের প্রতিযোগিতা। প্রথমে সেমিফাইনাল রাউন্ড, যেখান থেকে সেরা ১০টি দল উন্নীত হয় ফাইনাল রাউন্ডে। দুই রাউন্ডের জন্যই ছিল আলাদা আলাদা সমস্যা।’
সেরা দশে উঠে এক কঠিন ‘জটে’ পড়ে গিয়েছিলেন ইশমামরা। শ্যাম্পুর সঙ্গে যে কন্ডিশনার পাওয়া যায়, সেটা মূলত চুলের জট ছাড়াতে উপকারী। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কীভাবে কন্ডিশনারের জনপ্রিয়তা বাড়ানো যায়, সেটাই ছিল তাঁদের চ্যালেঞ্জ। আয়মান বলেন, ‘আমরা হিসাব করে দেখলাম, একজন নারী যদি প্রতিদিন পাঁচ মিনিট চুলের জট ছাড়াতে ব্যয় করেন, তাহলে এই জটেই কাটবে তাঁর জীবনের মোট ৮২ দিন। তাহলে এক কন্ডিশনার ব্যবহারই একজন নারীর জীবনে ৮২টা দিন যোগ করতে পারে!’ এই চমকপ্রদ ভাবনাকে কেন্দ্র করেই ‘ক্যাম্পেইন’ সাজিয়েছিলেন আয়মানরা। ঠিক করেছিলেন তাঁদের প্রচারণার স্লোগান, ‘আনট্যাঙ্গেল ইয়োর হেয়ার, আনট্যাঙ্গেল ইয়োর লাইফ’। বিস্তারিত হিসাবনিকাশ, পরিকল্পনা, বিপণন ব্যবস্থা—সবকিছুই দেখাতে হয়েছিল তাঁদের পরিবেশনায়। আর এসব কিছুরই বিচার-বিবেচনা শেষে বিজয়ী নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা। জয়ী হওয়ার সুবাদে আসন্ন ‘ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড’ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন এই তিন তরুণ। যেখানে প্রতিবছর বিশ্বের উদীয়মান ও প্রতিষ্ঠিত নেতারা অংশ নেন।
তিনজনই আইবিএ থেকে সদ্য পড়াশোনার পাট চুকিয়েছেন। ইশমাম ও সাজিদ কাজ করছেন দুটি বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। অন্যদিকে আয়মানের ধ্যানজ্ঞান তাঁর অনলাইন স্কুলভিত্তিক ওয়েবসাইট—টেন মিনিট স্কুল। ‘ফিউচার লিডারস লিগ’-এর চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তো পাওয়া হলো, এবার ভবিষ্যৎকে নেতৃত্ব দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।