Thank you for trying Sticky AMP!!

ভবিষ্যৎ পৃথিবী নিয়ে ভাবুন

তানভীর অপু, ফিনল্যান্ড, ২০১৭। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

এমন করোনাকালে সবার একটাই প্রশ্ন—কেমন কাটছে আমার দিনগুলো? কী করে কাটাচ্ছি এ সময়?

আমি যেহেতু সব সময় ভ্রমণ করি, তাই এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। তবে কি জানেন, ভ্রমণ আমাকে শিখিয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা বড় শিক্ষা। এ সত্য উপলব্ধি করার পর আমার মনে তেমন হা–হুতাশ বা নেতিবাচক চিন্তাচেতনা খুব একটা বাসা বাঁধতে পারে না। আর সে জন্য করোনাকালের এই বন্দিদশাতেও আমি একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলছি এবং চারপাশে যা আছে, সেখান থেকে আনন্দ নিতে চেষ্টা করছি। সে আনন্দগুলোও আজকাল আমার ভ্রমণের মতো সমান আনন্দদায়ক বিষয়।

আমি এখন রাজশাহীতে, প্রতিদিন সকালবেলা হাঁটাহাঁটি করি। আমাদের ছাদে অনেক ফুলের গাছ আছে, সেসব গাছের যত্ন নিই। এক–একটা দিন একটু একটু করে একটা গাছের রূপ কেমন করে বদলাচ্ছে আর রঙিন হয়ে ফুল ফুটছে, সেটা দেখা ও বোঝার চেষ্টা করা এক অপার্থিব ভালো লাগার ঘোর আমার কাছে। নতুন কোনো দেশে গেলে সে দেশের ভাষা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় যেমন হয় একটু ধীরলয়ে, তেমনি এই বন্দী সময়ে ধীরলয়ে আমি গাছের ভাষা, চলার অভ্যাস বুঝতে শিখছি। এটা এক অসাধারণ অনুভূতি আমার কাছে।

আমাদের একটা বড়সড় লাইব্রেরি আছে, সেটা গোছগাছের কাজ করি, মাঝেমধ্যে পড়ার চেষ্টাও করি যে বইগুলো এত দিন পড়া হয়নি, কিন্তু পড়া প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া আমার একটা শখ আছে, ভিডিও করা। সেটাও টুকটাক করছি। এ সময়টায় আমি পুরোনো অ্যালবামগুলো দেখছি। কত শহরের কথা মনে পড়ছে, বন্ধুদের কথা মনে পড়ছে। তাদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করছি, খবর নিচ্ছি।

অ্যারিজোনার হরসুবেনে, আমেরিকা, ২০১৯। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

নতুন করে কিছু ভিডিও করার চেষ্টা করছি। সবার সঙ্গে সেসব ভিডিও শেয়ারও করেছি। খবর জানার জন্য অনলাইনে পেপার পড়ছি। আমি রান্না করতে পছন্দ করি, তাই মাঝেমধ্যে রান্না করে পরিবারের সবাই একসঙ্গে মজা করে খাচ্ছি। সিনেমা দেখছি, চমৎকার পারিবারিক সময় কাটাচ্ছি। আর ইউটিউবে বিভিন্ন ভ্রমণের জায়গা দেখছি আর ভাবছি, নিশ্চয়ই যাওয়া হবে একদিন। আশাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, তবেই হয়তো মানসিক ইতিবাচক চিন্তার পাখা মেলে ভালো থাকা যায়।

এ ছাড়া আমি কিছু স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। সেসব করছি, তাতে মন ভালো থাকছে। আমার পাড়ার নিরীহ প্রাণীদের আমার সাধ্যমতো খাবারের ব্যবস্থা করছি। অনেক দিন আমি এমন খোলা আকাশ দেখিনি দেশে। তাই বাড়ির প্যাঁচানো সিঁড়িতে বসে নীল আকাশ দেখি। প্রায় দূষণমুক্ত ঝকঝকে নীল আকাশ আমার কাছে মাঝেমধ্যে নীল আটলান্টিক সমুদ্রের মতো মনে হয়।

প্রতি গ্রীষ্মে আমি ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। এবার করতে পারিনি। সে জন্য মনে একধরনের অস্বস্তি আছে। সেই অস্বস্তিকে পাশে রেখেই বলব, আমি-আমরা দূষণমুক্ত নির্মল পৃথিবীতে প্রাণভরে শ্বাস নিতে চাই, জমিয়ে আড্ডা দিতে চাই, ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে বের হতে চাই পৃথিবীর পথে। সে জন্য পৃথিবীকে সুস্থ হতে হবে আগে। সে জন্য পৃথিবীর প্রতি আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রচুর ক্ষতি করেছি আমরা পৃথিবীর, সেই ক্ষতি পোষাতে হবে আমাদেরই।

আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, কিছুদিন আমাদের এ কষ্ট স্বীকার করে নিতে হবে। এ সময় আমাদের ভাবতে হবে প্রচুর। ভাবতে হবে আগামী দিন কেমন হওয়া উচিত। আগামী দিনগুলো কি নতুন করে শুরু করা উচিত, নাকি যেমন ছিল তেমনই থাকা উচিত। কষ্টকর এ সময়গুলোতে ভাবার চেষ্টা করুন, কেমন হবে আপনার ভবিষ্যৎ? কেমন হবে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ? তারাও কি আমাদের মতোই আত্মপ্রসাদের জীবন বেছে নেবে, নাকি অন্য কোনো জীবন? কী সেই জীবন? কেমন হবে? ভাবুন। হঠাৎ পাওয়া এ সময়ে ভাবুন বেশি করে ভবিষ্যৎ পৃথিবী নিয়ে।

লেখক: ভূপর্যটক।