Thank you for trying Sticky AMP!!

ভিন্ন পরিবেশের ঈদ পালন হবে যেভাবে

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ বস্তুত বহুমাত্রিক। খুশির আকর ছড়ানো আছে চারপাশে; খুঁজে নিতে হয়। আর নিতে পারলে যে কারওরই মন ভালো হয়ে যাবে। আমরা এবারের ঈদে সেই চেষ্টাটাই করতে পারি। কারণ বিশেষ এক পরিস্থিতিতেই আমরা ঈদ উদ্‌যাপন করছি।

বলা হয়ে থাকে, বিশেষ পরিস্থিতিই নাকি মানুষকে অনেক বেশি অন্যরকম করে ভাবতে শেখায়। এবারের ঈদ অন্যরকম করেই পালন করা হোক। অন্তত অনেক দিন পর সবাইকে বলতে পারার মতো একটা স্মরণীয় ঈদ পালন হোক এবার।

প্রাক প্রস্তুতি

মোদ্দা কথা হলো, ঈদ এসেছে। আমরা আনন্দ করব। আনন্দে থাকব। এর জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। মেয়েদের একটা প্রস্তুতি থাকেই। কিন্তু এবার তো পারলার খোলা নেই। নিদেনপক্ষে পেডিকিওর, ম্যানিকিওর, ফেসিয়াল এগুলো বাসাতেই করে নেওয়া যায়। ছেলেরাও করতে পারেন। মূল কথা পরিচ্ছন্ন থাকা। সেটা নিজেরা করে নিলেই হবে। বাইরে যেতে পারব না; তাই কী দরকার গোছের বিষয় হলে, বিষণ্নতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। বরং তৎপর হয়ে শুরু করে দিন। আর সন্ধ্যার পরে অন্য সব কাজ সেরে নিয়ে বসে যান মেহেদি লাগাতে। নিজে লাগান, বোন থাকলে লাগিয়ে দিন। মাকে দিয়ে দিন। দাদি বা নানিকেও। এমনকি আপনি লাইভ সেশনও করে ফেলতে পারেন। শেয়ার করুন বন্ধুদের সঙ্গে।

আরও একটা কাজ কিন্তু করাই যেতে পারে। প্রতিযোগিতা। নিজেদের মধ্যে। কোনো পরিচিত রূপ বিশেষজ্ঞ থাকলে তাঁকে সবার ছবি পাঠিয়ে দিন। তারপর বিজয়ীকে পুরস্কৃত করুন নিজেরাই। এসবই স্রেফ আনন্দের জন্য।

কেবল মেহেদি নয়, ঈদ সাজ নিয়ে আলোচনা করুন। কী পরছেন তা নিয়েও কথা চলতে পারে। গরম। তাই পরার সময় ভেবে নিন আরামদায়ক পোশাকের কথা। সঙ্গে কেশসজ্জা কী হবে, মেকআপই বা কী করবেন তা নিয়ে ভাবুন। আর এখন তো সবকিছুই ভার্চুয়াল। পরামর্শ নিন আপনার সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে। নিজেকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা, পরিপাটি করে রাখলে মনও ফুরফুরে থাকবে।

রসনার আয়োজন

এই সময় আসলে খাবারের ছবি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বা এ নিয়ে আলোচনা নিয়ে অনেক ধরনের নেতিবাচক কথা হচ্ছে। কিন্তু অনেক কম উপকরণ ব্যবহার করেও তো মজাদার রান্না করা যায়। সেসব অবশ্যই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা দোষের কিছু নয়। এ ছাড়া ঈদে কিছু আয়োজন তো থাকবেই। আর বাঙালির উৎসব তো খাদ্য বিনা হয় না। তাই সবকিছু নেতিবাচকভাবে না দেখাই বোধ হয় ভালো।

নিজেদের সামর্থ্য ও পছন্দ মতো খাবার বানিয়ে ফেলতে কোনো কার্পণ্য করবেন না।

ঈদের নামাজ

এবার আসা যাক এবারের ঈদের নামাজ প্রসঙ্গে। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া অনেক দেশেই নিষেধ। খোদ সৌদি আরবে কারফিউ দেওয়া হয়েছে। তবে মসজিদ থেকে খুতবা প্রচার করা হচ্ছে। ঈদ সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কাতার, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্কসহ অন্যান্য মুসলমানপ্রধান দেশে। তবে বাংলাদেশে মসজিদে যাওয়া যাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কিন্তু কোলাকুলি করা যাবে না।

বিষাদের মধ্যে আমাদের প্রফুল্ল থাকতে হবে। এই ক্রান্তিতে নিজেকে, নিজের পরিবারকে উৎফুল্ল রাখার মধ্য দিয়ে সামাজিক দায়িত্বও আমরা পালন করতে পারব। কারণ সংকট মোকাবিলায় মানসিক স্থৈর্য অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই অন্যবারের মতো সকালেই প্রস্তুতি নিয়ে নামাজ পড়ে নেওয়া যেতে পারে। নিজের বাসার কাছের মসজিদের জামাতের সঙ্গে নিজেদের শরিক করে নেওয়া যেতে পারে অনায়াসে। বাসার সব সদস্যই সেরে নিতে পারেন নামাজ, একসঙ্গে। অবশ্যই নিজের পছন্দের পাঞ্জাবি পরে।

কেনা হয়েছে কি এবার? না হলেও কোনো সমস্যা নেই। অনেক কাপড় তো আমাদের সারা বছর পরাই হয় না। বেছে নিন সেখান থেকে একটি। বাড়ির প্রধান হিসেবে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন। কারণ পছন্দের পোশাক ছোটবড় সবারই থাকে। সেটাই পরা হোক ঈদে।

পারিবারিক আনন্দ

আমরা সবাই বাসায় থাকি বটে কিন্তু অন্যসময় বাইরে বেশি থাকি। এবার বাধ্য হয়েই বাসায় থাকতে হবে। কোনো দাওয়াতে যাওয়া হবে না। ফলে সবার সঙ্গে বসে খাওয়া হবে। জমিয়ে গল্প করা হবে। ছোটরা বড়দের কাছ থেকে জানবে আগের দিনের ঈদের গল্প। হুল্লোড় করবে। তাতেই উড়বে খুশির বুঁদ বুঁদ। ফোনে প্রিয়জনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করার অবকাশ এবার বেশি পাওয়া যাবে। কথা হোক সবার সঙ্গে।

ভার্চুয়াল উদ্‌যাপন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাকালের অবরুদ্ধ জীবনে ঈদ উদ্‌যাপনে শরণ নিয়েছে প্রযুক্তির। সেখানে কমিউনিটি কার্যক্রম অনেক বেশি হয়ে থাকে। ইচ্ছা করলে আমরাও কিন্তু করতে পারি।

সন্ধ্যায় তো এবার আড্ডা নেই। তাতে কী! আমরা না হয় পরিকল্পনা করে ফেলি ভার্চুয়াল আড্ডার। ঘরে বসেই জমায়েত হই সবাই। কত কত উপায় আছে। সেসব মাধ্যম ব্যবহার করে জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে আরাম করে ঘরে বসে দেশের, দেশের বাইরের বন্ধুদের নিয়ে।

বড়রা মেতে উঠলে ছোটদের মন খারাপ হতে পারে। তাই তাদের গেমস খেলা বা অন্য কিছুতে সম্পৃক্ত না করে তাদেরও বন্ধুদের বা কাজিনদের সঙ্গে আড্ডার ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে। তারা তাদের মতো করেই উপভোগ করবে।

ঈদের পরের দিনগুলো

আচ্ছা একটা পার্টি হয়ে গেলে কেমন হয়? কীভাবে? কেন এখন তো চলছে একটাই শব্দ ভার্চুয়াল। হ্যাঁ, ঠিক তাই। বলতে পারেন সেটা কেমন?

হতে পারে আপনারা আত্মীয় বা বন্ধুদের মধ্যে ১০ পরিবার এই পার্টিতে যোগ দেবেন। ঠিক করে নিন পরিবারগুলো। সিদ্ধান্ত নিন পার্টি কী ডিনার নাকি লাঞ্চে? কী থাকবে মেনুতে। ব্যস! এবার লেগে পড়া। সবাই একই মেন্যু রান্না করবে। আর এক সঙ্গে বসা হবে খেতে যার যার বাড়িতে। অন্তর্জালের কেরামতিতে সবাই থাকবে সবার সঙ্গে সংযুক্ত। এভাবে অনেক ধরনের সোশ্যাল ইভেন্টও করা যাবে।

মূল উদ্দেশ্য হলো আনন্দ করা। তবে এখানে বলে রাখি, আমরা বাঙালিরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তাই অনুশাসনের বাইরের আমরা সবকিছুই শেয়ার করে নিতে চাই সবার সঙ্গে। তাহলেই অবরুদ্ধ সময়ের ঈদও হয়ে উঠবে স্বাভাবিক সময়ের সময়ের ঈদের মতোই সমান উপভোগ্য, আনন্দময়।

ঈদ মোবারক।