Thank you for trying Sticky AMP!!

ভুল করলে বই পড়া!

যে বইগুলো পড়তে দেওয়া হয়

পড়াশোনার পাশাপাশি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খণ্ডকালীন চাকরি করেন আলিম হোসেন (ছদ্মনাম)। দায়িত্ব মানি এক্সচেঞ্জ হিসাবরক্ষকের সহকারী, যাত্রীদের অর্থ বিনিময়ে সহায়তা করাই তাঁর কাজ। কিন্তু একদিন দায়িত্বের বাইরে সুবিধা নেওয়ার আশায় যাত্রীদের ডেকে ডেকে মানি এক্সচেঞ্জে আসতে বলেন আলিম। এই কাজ তিনি করতে পারেন না। তাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইন অনুযায়ী শাস্তি দেন। সঙ্গে পড়তে দেন বই! ভুলের জন্য না হয় শাস্তির বিধান, কিন্তু বই পড়ানো কেন?

‘কারণ, তাঁর বিবেককে জাগিয়ে তোলা। এমন লঘু অপরাধ যাঁরা করছেন, প্রচলিত আইনে সাজা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের পড়তে দেওয়া হচ্ছে বই। তিনি যখন বই হাতে ঘর থেকে বেরোবেন, সবাই বুঝবে তিনি কোনো ভুলের মাশুল দিচ্ছেন। আর বইটি পড়া বাধ্যতামূলক, তাই যখন বাড়িতে বই পড়ছেন, তখন নিশ্চয় প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন, হঠাৎ বই পড়া কেন।’ বলছিলেন বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (উপসচিব) মুহাম্মদ ইউসুফ। তিনিই এই অভিনব পন্থার উদ্যোক্তা। ব্যতিক্রমী এই কার্যক্রমের নাম দিয়েছেন ‘প্রজেক্ট টুকিটাকি’।

এই উদ্যোগের নাকি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন যাত্রী হয়রানির জন্য বই পড়েছেন, যাঁদের কেউই দ্বিতীয়বার অপরাধ করেননি। সেই সঙ্গে ভালো কাজের জন্য স্বীকৃতিও দিচ্ছেন মুহাম্মদ ইউসুফ। বই পড়িয়ে আত্মোপলব্ধি সৃষ্টির প্রয়াস সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘দেখুন, পরিবারের সদস্য কোনো ছোট ভুল করলে বা দুষ্টুমি করলে পরিবারের মুরব্বি তাকে ডেকে শাসন করেন কিংবা কান মলে দেন। লঘু কাণ্ডে তাকে গুরু দণ্ড কিন্তু দেন না। তেমনি বিমানবন্দরটাও কিন্তু আমার পরিবারের মতো। এখানে কেউ অপরাধ করলে তাকে আইন অনুযায়ী সাজা দিচ্ছি ঠিকই আর পাশাপাশি যারা ছোটখাটো অপরাধ করছে—আইন অনুযায়ী শাস্তির পাশাপাশি তাকে শোধরানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বই পড়তে দিচ্ছি।’

মুহাম্মদ ইউসুফ

পড়তে হবে বই, বসতে হবে পরীক্ষায়

নির্ধারিত বইটি সাত দিনে পড়ে বসতে হয় লিখিত পরীক্ষার টেবিলে, দিতে হয় মৌখিক পরীক্ষাও। এরপর উত্তীর্ণ হলে পরীক্ষক-নির্ধারিত দুটি বই কিনে জমা দিতে হয় গ্রন্থাগারে। পরে কখনো এমন কাজ করলে আবারও তাকে ওই দুটি বই পড়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। অকৃতকার্য হলে নতুন আরেকটি বইসহ মোট দুটি বই পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে পড়ে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়।

যাঁরা অপরাধ করছেন, তাঁদের জন্য প্রচলিত শাস্তির পাশাপাশি যেমন বইপড়া কর্মসূচি; তেমনি যাঁরা ভালো কাজ করছেন, তাঁদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য রয়েছে পুরস্কার দিয়ে স্বীকৃতির ব্যবস্থা। দৃষ্টান্তমূলক ভালো কাজের জন্য একটি বই ও প্রশংসাপত্র দিয়ে তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়।

দিনে দিনে বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা

মুক্তিযুদ্ধের বই
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট লাগোয়া কক্ষের নাম দেওয়া হয়েছে—রিডিংরুম। এই পড়ার ঘরেই একটি তাকে রাখা হয়েছে বই। বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরাই উদ্যোগী হয়ে কিনেছেন বইগুলো। আর কিছু বই জমা পড়েছে প্রকল্পের আওতায় আসা কর্মীদের মাধ্যমে। তাকে চোখ বুলিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ বই মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা। মুহাম্মদ ইউসুফ অভিব্যক্তি দেখে বললেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ানোর ওপর জোর দিই। কেউ যদি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জানেন, অনুভব করেন শহীদদের আত্মত্যাগের কথা, তখন তাঁর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।’