Thank you for trying Sticky AMP!!

ভুল যদি হয়েই যায়

দাম্পত্যে ভুল হলে মিটিয়ে নিন এই সুযোগে। মডেল: রিয়াদ ও আইরিন, ছবি: অধুনা

ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল

গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।

আর ছোট ছোট ভুল ভরে তোলে বিদ্বেষ, বিচ্ছেদ। ছোট একটি সংসার, মা-বাবা, ভাই-বোন, সঙ্গে শ্বশুর-শাশুড়ি বা একান্নবর্তী পরিবারও থাকতে পারে; খুঁটিনাটি সেন্টিমেন্টের বিষয়ে এখানে যেমন অসন্তোষের বীজ সহজেই বোনা যায়; তেমনি সেসব বিষয়ে একটু ধৈর্য ধরে নজর দিলে, সময় দিলে সন্তোষ, সবুজ বাগান, নদীর কলকল শব্দ অন্তর থেকে অনুভব করতে পারবেন।

একজন ভদ্রমহিলা এলেন। তিনি জানালেন, বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গেছে; একটা সন্তান হয়েছে। স্বামী সারা দিন খিটখিট করতে থাকেন; সবকিছুতে খুঁত ধরেন; তরকারির স্বাদ হেরফের হলে রক্ষা নেই, তুলকালাম কাণ্ড। স্বামী তাঁকে সময় দিতে পারেন না। তাই আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গে ভদ্রমহিলা যোগাযোগ রাখতেন। তাতেও বাধা। কেন এত কথা! সংসারের দিকে কোনো খেয়াল নেই। ফেসবুকে সময় দেন। জন্মদিনে সবাই তাঁকে শুভেচ্ছা জানায়। ভালোই লাগে। কিন্তু তাঁর স্বামী ভুলে যায় কি না, তিনি জানেন না। আজ এত বছর হলো কোনো বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন, কিছুই উদ্‌যাপন করেন না তাঁর স্বামী। বাচ্চার জন্মদিনও জোর করে আয়োজন করতে হয়।

ভদ্রমহিলা বললেন, বছরের বিশেষ উৎসবের দিনগুলোতে সবাই একসঙ্গে সময় দেব ভেবে রাখি। দেখা যায়, আমার স্বামী অফিসের জমানো কাজ ঘরে করছে। হানিমুন শব্দটা সবাইকে বলতে শুনি। কিন্তু আমার জীবনে এটা কখনোই ঘটেনি। এখন এতটা বিরক্ত লাগে যে ওর বাসায় থাকাটা অসহ্য লাগছে। করোনাভাইরাসের ভয়ে সবাই বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু ওর অত্যাচারে আমি, আমার সন্তান সবাই আতঙ্কে আছি। আমার শাশুড়িও বাদ যায় না। আমার স্বামী অসম্ভব রাগী। উত্তেজিত হলে যেকোনো জিনিস ছুড়ে মারে। গায়ে হাত তোলে। ইদানীং ব্লিচিং পাউডার, হাত ধোয়া, সাবান ব্যবহার নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করে।’

কেন এই দায়িত্বহীনতা

কিছু কিছু মানুষ থাকেন, তাঁরা হইচই, গল্প-আড্ডা, পারিবারিক সুন্দর সময় কাটানো পছন্দ করেন না। আত্মকেন্দ্রিক হয় তাঁদের জীবন।

* কারও কারও কাজের নেশা, মাদকাসক্তি পারিবারিক দায়িত্ব পালনকে বিঘ্নিত করে। ঘরের কাজ মনেও রাখতে পারেন না। কোনো একটি কাজ, যেমন অফিস; সেটা সুন্দরভাবে করেন হয়তো। বাকি সব ভুলে যান।

* কারও থাইরয়েড, বিষণ্নতা, ডিমেনশিয়া রোগ থাকলে তাঁরাও অনেক সময় ভুলে যান।

* কেউ নিজের জীবনের অপ্রাপ্তির কারণে পরবর্তী জীবনের উৎসব আয়োজনে সাড়া দেন না। বিমর্ষ থাকেন। মনেই রাখতে চান না।

মানসিক নানা প্রভাব

সি-ওসিডি: ‘করোনা-ওসিডি’ টার্মটি করোনাভাইরাসের আতঙ্কিত সময়টা কেটে গেলে অনেকের জন্য দরকার হতে পারে। যাঁদের ওসিডি ছিল না, তাঁদের নতুন করে দেখা দিতে পারে। আর যাঁদের ছিল, তাঁদের তীব্রতা বাড়তে পারে। উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা, ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত টেনশন হরমোন ক্ষরণে শরীরের ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

এ সময়ে বিভিন্ন পরিবারে কী কী সমস্যা চলতে পারে:

সামাজিক দূরত্ব (সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং) বজায় রাখার চেষ্টা চলছে সারা দেশে। কিন্তু পরিবারগুলো লোকজনে গমগম করছে। দূরত্ব কোথায়। বরং নৈকট্য চলছে। বেলায় বেলায় রান্নাবান্না চলছে। বিশ্রামের সময় নেই। অনেকের গল্প–আড্ডা বেড়ে গেছে। তেমনি খুনসুটিও বেড়েছে।

ধোয়ামোছায় কেউ বেশি সাবধান। আবার অনেকে বেশি শৈথিল্য দেখাচ্ছেন। গৃহকর্মীর ছুটির কারণে পুরুষেরাও কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে গৃহবন্ধন মজবুত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা নানা সংকট তৈরি করছে। দৈনন্দিন বাজার চাহিদামতো পাওয়া যাচ্ছে না। খুনসুটিও সেখানে। বাচ্চাদের খাবারদাবার নিয়েও নানা বাহানা, যা জোগাড় করা যাচ্ছে না। বয়স্ক ব্যক্তিদের দিকে প্রয়োজনীয় নজর দেওয়া যাচ্ছে না।

যে সুবিধা মিলছে

সবাই সবার চাহিদা, মেজাজ–মর্জি বোঝার সুযোগ পাচ্ছেন। পারস্পরিক সহযোগিতা, বোঝাপড়া বাড়ানোর সুযোগ বেড়েছে। দায়িত্ববোধ বোঝার সুযোগ এখন। পরিবারের প্রতি এখন আমরা আরও যত্নশীল হওয়ার ফুরসত পাচ্ছি। এটা চর্চার ব্যাপার। নিজেদের দোষ, ভুলত্রুটি বোঝার ও মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। বয়স্ক আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়িত্ববোধ উপলব্ধি করার সময় এখন। অবহেলা দূরত্ব বাড়ায়। উপলব্ধি ভুলকে শুধরে দেয়। মনে রাখতে হবে, ভুল কখনো ফুল বিছানো পথ তৈরি করে না। পরিবারের সদস্যদের দূরত্ব ও ভুল–বোঝাবুঝি ত্বরান্বিত করে। বাড়ে মনোবিচ্ছেদ ও তীব্র যাতনা।

কী করণীয়

রাগ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হতে হবে। নিজেদের মধ্যে মোটিভেশন চাই। সবার চাহিদার দিকে নজর দিতে হবে। বছরের বিশেষ দিনগুলো গুছিয়ে লিখুন। ক্যালেন্ডার বা মুঠোফোন পেজে জমিয়ে রাখুন। সরি বলতে শিখুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ফেসবুকে ও অন্যান্য ইন্টারনেট সঙ্গ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে সম্পর্ককে উষ্ণ করতে পারেন।

সিরোটোনিন বাড়ায় যেসব খাবার যেমন কলা, শাকসবজি, ডিম, দুধ, বাদাম, ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন, যা উদ্বেগ ও রাগ কমাবে। পরিবারের একজন আরেকজনের কাছাকাছি থাকুন—সেটা পথের দূরত্বের মতো মনের ক্ষেত্রেও। প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।