Thank you for trying Sticky AMP!!

মজা করতে করতেই বুলিং

রূপম, মুহিব আর সুফিয়ান—তিন বন্ধুর জম্পেশ আড্ডা চলছে। এর মধ্যে সেলিমের প্রবেশ। রূপমের চটজলদি টিটকারি, ‘কি রে, মেয়েদের মতো সাজগোজে সময় লেগে গেল নাকি?’

কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে শাহেদের জ্বর চলে এল, কিন্তু সঙ্গে থাকা ফায়াজের কিছুই হলো না। অসুস্থ শাহেদের নম্বরে  ফোন দিয়ে ফায়াজ বললেন, ‘মেয়েদের মতো শরীর, একটু ধকল নিতে পারিস না! দেখ, আমি ম্যান, আমার তো কিছুই হলো না!’  

হয়তো খেলাচ্ছলে বা মজা করে বন্ধুদের কথাগুলো বলা হয়

এ রকম হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যাবে। হয়তো খেলাচ্ছলে বা মজা করে বন্ধুদের কথাগুলো বলা হয়। কিন্তু কেউ ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেন না, এই কথার কারণে কেউ মনে মনে কষ্ট পেলেন কি না, মানসিকভাবে আঘাত পেলেন কি না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, কেউ অনুভবই করছেন না এই ফান করার কারণে একজন বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। সবটাকেই মনে করা হচ্ছে নিতান্ত স্বাভাবিক দৈনন্দিন ঘটনা।

বুলিং কী?

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, বুলিং হলো অপ্রত্যাশিত ও আক্রমণাত্মক আচরণ, যা সাধারণত স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আচরণের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার অসামঞ্জস্য প্রকাশ পায়। এই আচরণের শিকার শিশু বা কিশোর থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের ব্যক্তিই হতে পারেন। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী বা অফিসের সহকর্মীদের মধ্যেও এমন আচরণ দেখা যায়। এর অর্থ হচ্ছে, কাউকে শারীরিক বা মানসিকভাবে অপদস্থ করা। বুলিং মূলত সচেতন বা অবচেতনভাবে একধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ, ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে অপমান, অপদস্থ বা হেয় করা। বুলিংকে মজা হিসেবে দেখার শিকড় আমাদের সমাজের গভীর পর্যন্ত।

বুলিং হলো অপ্রত্যাশিত ও আক্রমণাত্মক আচরণ, যা সাধারণত স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়

বুলিংয়ের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় স্পষ্ট:

* বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তি বুলিংকে মেনে নিতে পারেন না।
* যিনি বুলিং করছেন এবং যিনি বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন, উভয়ই বুঝতে পারেন এ ধরনের পরিস্থিতিতে বুলিং করা ব্যক্তির ক্ষমতা বেশি।
* যিনি বুলিংয়ের শিকার হন, তিনি বারবারই হতে থাকেন।

যাঁরা ক্রমাগত বুলিংয়ের শিকার হন, তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক ও আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। হীনম্মন্যতায় ভোগা আর আত্মবিশ্বাসহীনতা বুলিংয়ের সবচেয়ে সাধারণ ফলাফল। এ ছাড়া বিষণ্নতা, উদ্বেগ—এগুলোও আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বুলিংয়ের ফলে অনেকে ‘ইটিং ডিজঅর্ডার’-এ আক্রান্ত হতে পারেন। শিশুদের ক্ষেত্রে বুলিং ফেলতে পারে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। বুলিংয়ের কারণে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, অনেক সময় বাইরের কারও সঙ্গে মিশতেই ভয় পায়। মাত্রাতিরিক্ত বুলিং হতে পারে আত্মহত্যার কারণ।

আপনার শিশুর আচরণ লক্ষ করুন

কীভাবে প্রতিরোধ করব বুলিং?

ভিকটিমকে নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ভাঙতে অভিভাবকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

কোনো সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা ঘটে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাচ্চাদের ঝামেলা বাচ্চারাই মিটিয়ে ফেলবে, এই ভেবে অনেক অভিভাবকই কোনো পদক্ষেপ নিতে চান না। এই ধারণা থেকে ভিকটিম বাচ্চারা নিজেদের একা ও অসহায় মনে করে। তাই অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সরাসরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

আপনার শিশুর আচরণ লক্ষ করুন। সে হঠাৎ যদি চুপচাপ থাকে, মন খারাপ করে থাকে, একা একা থাকতে পছন্দ করে ও স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করে, তাহলে তাকে কারণ জিজ্ঞেস করুন।

বুলিং আচরণ করা শিশু বা কিশোরকে একজন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলতে সুযোগ করে দিতে হবে, যাতে সে এই আচরণ পরিত্যাগ করতে পারে।

কোনো বুলিংকেই অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতার বার্তা দিন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিন। আইনের আশ্রয়ও চাইতে পারেন।

বড়রাও হতে পারেন বুলিংয়ের শিকার