Thank you for trying Sticky AMP!!

মন খারাপ মানেই বিষণ্নতা নয়

মন খারাপ মানেই বিষণ্নতা নয়

কৈশোর থেকে তারুণ্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে জীবনে অনেক কিছু বদলায়। স্কুল-কলেজ, বন্ধুবান্ধব, সম্পর্ক, শরীর ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়। তাই তখন আবেগপ্রবণ হওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। তবে জেনে নেওয়া উচিত অনুভূতির গতি-প্রকৃতি বড় কোনো সমস্যা তৈরি করতে পারে কি না। এ ক্ষেত্রে, নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করা যেতে পারে:
 পছন্দের কোনো কাজ যেমন: খেলাধুলা, নাচ-গান বা কোনো সংগঠনের কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছি? এক ধরনের খেলা ছেড়ে অন্য খেলায় আকৃষ্ট হওয়াটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এ ধরনের আনন্দদায়ক কার্যক্রম বা পুরোনো অভ্যাস একেবারে ছেড়ে দেওয়াটা নিশ্চয়ই অস্বাভাবিক।
 বন্ধুরা একসঙ্গে কোথাও যাওয়ার জন্য ডাকলে ভালো লাগে না? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘না’ বলে দিই?
 পরীক্ষায় অর্জিত গ্রেড ক্রমশ কমে যাচ্ছে?
 মা-বাবার সঙ্গে প্রায় নিয়মিত ঝগড়া হচ্ছে?
 কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই নানা বিষয়ে বিরক্ত হচ্ছি?
 খুব ক্লান্তি লাগে, অথচ ঠিকমতো ঘুমও হয় না?
 বেশি বেশি খাওয়ার ইচ্ছে হয়? অথবা, একেবারেই খিদে পায় না?
 নিজেকে অপরাধী মনে হয়? দুশ্চিন্তা হয়? মনে হয়, আমার প্রতি কোনো ভুল করা হচ্ছে?
 মনে হয়, আমি না থাকলেই বুঝি ভালো হতো?
যদি এসব প্রশ্নের যেকোনো একটি বা তারও বেশির উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, ধরে নিতে হবে সমস্যাটির নাম বিষণ্নতা। মানে, আপনার এখন সাহায্য প্রয়োজন। তাই চিহ্নিত করতে হবে, কী হচ্ছে এবং কী করণীয়। মা-বাবা, চিকিৎসক, পরামর্শক বা বিশ্বস্ত কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে সমস্যাটি নিয়ে কথা বলতে হবে।
বিষণ্নতা কী?
কেবল মন খারাপ হলেই তাকে বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন) বলা যায় না। এটা হচ্ছে মানসিক অবস্থার একটি বিপর্যয়। বিষণ্নতায় আক্রান্তদের কেউ কেউ মন খারাপ করে কান্নাকাটি পর্যন্ত করেন। অন্যরা পৃথিবীর প্রতি একধরনের ঘৃণা অনুভব করেন। তবে আপনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছেন, নাকি হালকা মন খারাপ করেছেন— তা নির্ণয় করা কঠিন। সময়ে সময়ে সবারই একটু-আধটু মন খারাপ হয়। কিন্তু সেটা বিষণ্নতার চেয়ে আলাদা হতে পারে। দু-এক সপ্তাহে মন খারাপ ভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারলে বুঝতে হবে, সেটা বিষণ্নতা ছিল না। কিন্তু সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে যদি কেউ খিটখিটে, রাগি, বা বিষণ্ন আচরণ করে তবেই সেটা বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে।
কারণ:
বিষন্নতায় আক্রান্ত হওয়ার মানে এই নয় যে আপনি দুর্বল এবং পরাজিত মানুষ। কোনো বেদনাদায়ক ঘটনার জেরে বিষণ্নতা তৈরি হতে পারে। কেউ কেউ বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে পারেন। প্রিয়জনের মৃত্যু বা মা-বাবার বিচ্ছেদের মতো সংকটকাল পেরিয়ে কেউ দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতায় পড়তে পারেন।
কী করতে হবে
আপনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছেন, এটা জানতে পারাটা একধরনের ভালো খবর। কারণ, তখন আপনি কার্যকর চিকিৎসার দিকে যেতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে কর্মরত মনোচিকিৎসক গ্রাহাম এমসিল বলেন, বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে হাসপাতালে বন্দী থাকতে হবে, এমনটা ভাববার কারণ নেই।
চিকিৎসা:
থেরাপি: আপনার জীবন থেকে কী কী হারিয়ে যাচ্ছে এবং কীভাবে আপনি পরিস্থিতি পাল্টাতে পারেন তা নির্ণয় করা হয়। যেমন কাজের চাপ দূর করা বা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: শারীরিক ব্যায়াম, পরিমিত খাওয়াদাওয়া এবং সামাজিক সহায়তার মতো কাজকর্ম। অনেক গবেষণায় দেখা যায়, বিষণ্নতা দূর করতে শরীরচর্চার চিকিৎসা বেশ কার্যকর।
ওষুধ: মস্তিষ্কের রসায়নে পরিবর্তন আনতে চিকিৎসকেরা কখনো কখনো ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। বিষণ্নতার চিকিৎসায় এ রকম অনেক ওষুধই প্রয়োগ করা হয়।
রোগী এবং চিকিৎসককে নির্ধারণ করতে হবে, কোন চিকিৎসাটি কার্যকর। থেরাপি ও জীবনযাত্রা বদলানোর মাধ্যমে অনেক সময় ওষুধের চেয়েও ভালো ফল মেলে।
আত্মহত্যার ভাবনা?
কৈশোর-তারুণ্য এবং পূর্ণ বয়সে পৌঁছার পর অনেকেই বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। তবে আত্মহত্যার মতো ভাবনা সবার মধ্যে কাজ করে না। মনে রাখতে হবে:
 এমন কিছু করা যাবে না, যা থেকে আর ফিরে আসার সুযোগ নেই। আত্মহত্যা কখনোই ভালো কাজ নয়।
 বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে আপনি অনেক কিছুই ভাবতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি খারাপ, বোকা বা শেষ হয়ে গেছেন। আসলে আপনাকে পরিস্থিতির কারণেই কারও সাহায্য নিতে হবে। জীবনে সবাই এ রকম পরিস্থিতিতে পড়ে।
সূত্র: ওয়েবএমডি।