Thank you for trying Sticky AMP!!

মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে রে

আবহমান সময় থেকেই মানুষ তার মনের সঙ্গে যুঝছে। তাই হয়তো মানুষ বলে, ‘অবুঝ মন’। এই অবুঝ মনকে বোঝানো সত্যিই এক কঠিন কাজ। একেবারে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ যাকে বলে। সেই যুদ্ধে যে জিততেই হবে, এমন কথা নেই। তবে সব সময় নিঃশর্ত আত্মসমর্পণও কাজের কথা নয়।

প্রতিটি মানুষের মধ্যে একটি সমালোচক সত্তা বাস করে। সেই সত্তাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘ইনার ক্রিটিক’ বা ‘সেলফ ক্রিটিক’। এর কাজ হলো ব্যক্তির বিভিন্ন কাজের মূল্যায়ন করা। আমরা যেমন অনেক সময় বলি, ‘অমুক করতে মন সায় দিচ্ছে না।’ এই সায় না দেওয়ায় বাদ সাধে ব্যক্তির আত্মসমালোচক সত্তা। এ ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে নিজের আলোচনা চলে। এই ব্যক্তিগত আলাপন একজনকে মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। আবার কখনো কখনো সমালোচনার তোড় যুক্তিযুক্তভাবে সামলাতে না পারলে নেতিবাচক মনোভাবের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে যেতে হয়। 

নিজের এই সমালোচক সত্তাকে তাই সামলাতে হবে কৌশলে। সমালোচক সত্তা ব্যক্তির সমালোচনায় মুখর হতেই পারে। তা থেকে কতটুকু গ্রহণ করবেন, কতটুকু বর্জন করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ব্যক্তিকে। আত্মসমালোচনার জায়গা থেকে হয়তো মনে হতে পারে, আপনি একজন অপদার্থ, ব্যর্থ, ঠিকমতো করতে পারেন না কিছুই। এখন সেই কথা বিশ্বাস করে যদি হতোদ্যম হয়ে বসে থাকেন, তবে কি জীবন চলবে?

আচ্ছা, লক্ষণগুলো কি চেনা চেনা লাগছে? লাগলে আগেই বলে নিই, এমনতর মানুষ আপনি একা নন। অনেকেই আছেন। বেশির ভাগ মানুষ কখনো না কখনো নিজের বিষয়ে সন্দেহগ্রস্ত হয়েছেন। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল, যে কিনা কখনোই মনের সমালোচনার কশাঘাত সহ্য করেননি। কিন্তু সেই আঘাতে একেবারে মুষড়ে পড়লে চলবে না। বরং নিজের নেতিবাচক ভাবনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে তা সামলানোর চেষ্টা করতে হবে। জেনে নেওয়া যাক, নিজের মনের আত্মসমালোচক সত্তাকে কীভাবে সামলানো যায়।

সমালোচনা নিতে শিখুন 

আত্মসমালোচনা শোনার অভ্যাস গড়া জরুরি। মনের এই দ্বন্দ্ব মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আত্মসমালোচনাকে যদি অবহেলা করেন বা চেপে রাখতে চান, তবেই বিপত্তি বেশি। এই কৌশল কখনো সুফল দেয় না। উল্টো মনের নেতিবাচক ভাবধারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তাই সমালোচনা যৌক্তিক হোক বা অযৌক্তিক, অন্তত শোনার অভ্যাস করুন। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মনোবিদ সুসান ডেভিডের মতে, আত্মসমালোচক সত্তার সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। একে অবহেলা বা এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। আবার এটি যেন ব্যক্তির পুরো সত্তাকে গ্রাস করতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। 

সচেতনতা প্রয়োজন

নিজের ভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলুন। মন আমাদের যে বার্তা দিয়ে থাকে, সেই বিষয়ে আমরা সাধারণত একটু অসচেতন হই। আপনি কী ভাবছেন এবং কীভাবে ভাবছেন—সেই বিষয়ে মনোযোগ দিন। যেটি ভাবছেন, সেটিই যে শাশ্বত সত্য নয়—সেই সত্যটি মেনে নিতে হবে। আমাদের ভাবনা অনেক সময় অতিরঞ্জিত ও পক্ষপাতমূলক হয়। তাতে অসামঞ্জস্যও থাকে। সুতরাং এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আত্মসমালোচনা শুনতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 

জাবর কাটবেন না 

অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা নিজেদের একটি ভুলকে অনেক বড় করে দেখেন। তা নিয়েই কাটিয়ে দেন দিনের পর দিন। মনে রাখতে হবে—একটা দিন খারাপ যেতেই পারে, একটা ভুল হতেই পারে। তা নিয়ে জাবর কাটার কোনো অর্থ নেই। এই কাজে নিজের মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হবে। এতে সমস্যারও কোনো সমাধান হয় না। তাই এমন পরিস্থিতিতে পড়লে নিজেকে অন্য কাজে জড়ান, ভুল থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিন। 

যুক্তির পথে হাঁটুন 

আত্মসমালোচনা আমাদের মনের নেতিবাচক ভাবনাকে উসকে দিতে পারে। এমন ধারণা জন্মাতে পারে যে, আপনাকে দিয়ে হয়তো কিছুই হবে না। নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও মনোবিদ অ্যামি মরিন বলছেন, এ ধরনের নেতিবাচক ভাবনাকে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর এর পক্ষে-বিপক্ষের যুক্তি নিয়ে ভাবতে হবে। বিশ্লেষণ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে খাতা-কলম নিয়ে বসুন। এভাবে বিচার করতে পারলে, আত্মসমালোচনার বিষয়ে একটি যৌক্তিক প্রেক্ষাপট তৈরি হবে এবং আবেগ সরিয়ে রেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। 

আত্মোন্নয়ন জরুরি

নিজের দুর্বলতা মেনে নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি আত্মোন্নয়নে উদ্যোগী হওয়াও প্রয়োজন। আপনি যথেষ্ট ভালো নন এবং আপনি আরও ভালো কাজ করতে পারেন—এই দুই কথার মধ্যে পার্থক্য আছে। তাই নিজেকে বারবার বলার সময়, কোনটি বেছে নিচ্ছেন সেটি সচেতনভাবে খেয়াল করুন। যুক্তির আদালতে প্রমাণিত হলে নিজের দুর্বলতা মেনে নিতে কসুর করবেন না। আবার তাই বলে নিজেকে সব সময় দুর্বল ভাবারও কোনো কারণ নেই। মনে রাখতে হবে, আত্মোন্নয়নের পথ কখনো বন্ধ হয় না। তাই নিজের মান আরও উন্নত করতে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

সবশেষে মনে রাখতে হবে যে মনের সমালোচক সত্তা আপনার পুরো ব্যক্তিত্বের একটি অংশমাত্র। এর সঙ্গে বাদানুবাদের সময় তাই নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। তবে একে কখনোই থামিয়ে দেবেন না। কারণ এটিই আপনাকে নানা বিষয়ে শেখাবে এবং ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

তথ্যসূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ, ফোর্বস, দ্য গার্ডিয়ান ও ওয়েবএমডি