Thank you for trying Sticky AMP!!

মানুষ বলেছিল, এটা কিছুই হয়নি

নুহাশ হুমায়ূন

এ লেভেল শেষ করার পর আমি যুক্তরাষ্ট্রের ভিলেনোভা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। এক বছর সেখানে পড়েছি, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা একেবারেই ভালো ছিল না। খুব সুন্দর ক্যাম্পাস, মানুষেরা খুব বন্ধুবৎসল, কিন্তু আমি আমার পরিবারকে খুব মিস করতাম। খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। তখন ঠিক করি, বাংলাদেশে চলে আসব।

দেশে ফেরার পর সবাই এমনভাবে তাকাত, যেন আমি একটা বড় অপরাধ করে ফেলেছি। এমনকি বাসার লোকজনও বলত, ‘আচ্ছা বুঝলাম তুমি খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলে। কিন্তু আমরা মানুষকে কী বলব, কেন তুমি ফিরে এলে?’

দেশে আসার পর আরেকটা জিনিসের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। স্কুলে আমি একটা ছোট গণ্ডির মধ্যে ছিলাম। কিন্তু ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বুঝতে পারলাম, আমার একটা আলাদা পরিচিতি আছে। যদি বলতাম আমি পদার্থবিজ্ঞানে পড়ছি, মানুষ বলত, ‘ও, তোমার চাচার মতো।’ আমি কার্টুন আঁকি শুনে বলত, ‘ও, তোমার আরেক চাচার মতো।’ বললাম, আমার লেখালেখিতে আগ্রহ আছে। ফিল্ম বানাতে চাই। শুনে বলে, ‘ও, তোমার বাবার মতো।’ তখন বুঝলাম, এই তুলনার মুখোমুখি হওয়া আমার জীবনেরই অংশ।

তখন ঠিক করি, সিনেমা বানাব। আমার কাছে মনে হয়, অন্যান্য শিল্পের তুলনায় সিনেমা একটু ভিন্ন। কারণ, সিনেমা বানাতে টাকা লাগে। পত্রিকায় কার্টুন এঁকে কিছু টাকা জমালাম। সেই টাকা দিয়ে একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি বানালাম। যখন সিনেমাটা মানুষকে দেখালাম, সবাই বলল এটা কিছুই হয় নাই। অনলাইনে রিলিজ করলাম। তখনো মানুষ বলছে এটা কী? অভিনয় হয় নাই, লাইটিং হয় নাই। খুব মন খারাপ হলো। আমি এক রকম ছবি বানানো ছেড়েই দিয়েছিলাম।

এর এক বছর পর অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয়। আলাপ হওয়ার পর একটু সংকোচ নিয়েই বললাম, আমি তো একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি বানিয়েছি, একটু দেখবেন নাকি? তিনি দেখে বললেন, ‘হ্যাঁ, ভালোই তো।’ কিছু পরামর্শও দিলেন। এর দুই দিন পর তিনি ফোন করে বললেন, ‘নুহাশ, তুমি কি নাটক বানাবা?’ আমি বললাম, হ্যাঁ, বানাতে পারি।’

সেই থেকে শুরু। সিনেমার দুনিয়ায় আমার খুব ছোট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছিল গত বছর। দক্ষিণ কোরিয়ায় বুসান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমাদের ইতি তোমার ঢাকা ছবিটা নির্বাচিত হয়, ছবিটার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় সেখানে। ওখানে নানা দেশ থেকে মানুষ এসেছে। তারা আমাকে চেনে না, আমার পরিবারের কাউকে চেনে না। কিন্তু আমাকে এসে বলছে, ‘নুহাশ, তোমার কাজটা খুব ভালো লেগেছে।’ এরপর আমার জীবনের লক্ষ্যটা বদলে গেছে। সেটা হলো, বাংলাদেশের ছবিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।