Thank you for trying Sticky AMP!!

মা-বাবা সঙ্গে থাকলে বাসা ভাড়ায় ছাড়!

নির্দেশনা বাক্যটি একটি সাইনবোর্ডের। ভবনের গায়ে সাঁটানো নির্দেশনা-সংবলিত সেই সাইনবোর্ডের ছবি সম্প্রতি ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ছবিটি শেয়ার করে বাড়ির মালিকের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানান, কেউবা করেন অকুণ্ঠ প্রশংসা।

একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায় সাইনবোর্ডের লেখায়, ‘অত্র বিল্ডিং-এ অবস্থানরত সকল ভাড়াটিয়াদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে যে, যে সকল ভাড়াটিয়া তার বাবা-মাকে নিয়ে অত্র বিল্ডিং-এ অবস্থান করবেন তাদের বাড়ি ভাড়া মাসিক ৫০০/– টাকা করে কম নেওয়া হবে। এই নির্দেশনা আজীবনের জন্য বলবৎ থাকবে।’

সেই ছবিতেই পাওয়া গেল বাড়িটির ঠিকানা। নির্দেশনাদাতার নাম। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মাটিকাটা সড়কে বাড়ির অবস্থান। ৪৪/৪ নম্বর ওই বাড়ির মালিক আবদুল জলিল দেওয়ান। পেশায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক। এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। তবে সেই উদ্যোগটা তাঁর ছেলে জহিরুল ইসলামের। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী।

২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কথা হচ্ছিল জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। নির্দেশনাটির কথা পাড়তেই তিনি বলে উঠলেন, ‘আমি কিন্তু প্রচারের উদ্দেশ্যে করিনি। এটি কীভাবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ল তা–ও জানি না। এখন অনেকে যোগাযোগ করছেন। সাধুবাদ জানাচ্ছেন।’

জহিরুল ইসলাম

এমন উদ্যোগের পেছনের কারণ জানতে চাই জহিরুলের কাছে। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদেরই এক প্রতিবেশীর বাবা-মা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু এ নিয়ে ওই প্রতিবেশী ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়। এরপর উনি বাবা-মায়ের চিকিৎসা না করিয়ে বাড়িতে রেখে আসেন। এ ঘটনা আমাকে খুব কষ্ট দেয়।’

সেই মনঃপীড়া থেকেই নাকি তিনি ভাবছিলেন, তাঁদের বাড়িতে যেন এমন কোনো ঘটনা না ঘটে। এ জন্য এমন কিছু করতে হবে, যে কারণে সন্তানেরা বাবা-মা নিয়ে একসঙ্গে থাকার উৎসাহ পান। এরপরই মাথায় আসে বাড়িভাড়া কমানোর ব্যাপারটি। কিন্তু পরিবারের অন্যরা কি রাজি হবে? সংশয় নিয়েই বাবা-মা ও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন জহিরুল। তাঁর সংশয় ভুল প্রমাণ করে পরিবারের সদস্যরা আরও উৎসাহ দেন। তাই আর সময় নেননি ঘোষণাটি দিতে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাসার সামনে টাঙিয়ে দেন সাইনবোর্ডটি।

তাঁদের ১৭ ইউনিটের বাড়িতে বাবা-মা নিয়ে থাকেন এমন পরিবারের সংখ্যা এখন দুটি। সেই বাড়িরই ভাড়াটে ইমরাদ তুষার। তিনি বললেন, ‘জহিরুল ভাই ঘোষণা দেওয়ার আগে আমার মতো অন্য ভাড়াটিয়াদের সঙ্গেও আলাপ করেছিলেন। উদ্যোগটা সত্যি প্রশংসনীয়।’

প্রশংসনীয় তো বটেই। নগরজীবনে যেখানে একক পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেখানে মা-বাবার সঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকার যে প্রয়াস জহিরুল ইসলাম দেখিয়েছেন, সত্যিই তা প্রশংসার দাবি রাখে।