Thank you for trying Sticky AMP!!

মা হওয়ার পর

মা ও সন্তান। অলংকরন: সোহাগ পারভেজ

আরও একজন মানুষের দৈনন্দিন দায়িত্ব। তা–ও আবার এমন একজন, যে কিনা নিজের ভালোমন্দ বুঝতে শেখেনি, নিজের কাজগুলো করতে শেখেনি। এই মানুষ তো আর কেউ নয়! নিজের শিশুসন্তান। মা হওয়ার পর জীবনটাই যেন অন্য রকম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নার্গিস আক্তার জানালেন, স্বাভাবিক প্রসবের পর মা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন দ্রুতই। প্রসববেদনায় জর্জরিত মায়ের প্রসবের পরপরই একটু বেশি বিশ্রাম প্রয়োজন হয়। ব্যথামুক্ত পদ্ধতিতে প্রসব করানো হলে তা-ও প্রয়োজন হয় না। মোটামুটিভাবে ২৪ ঘণ্টা পর রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করানো হলে অবশ্য স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে আরও অনেক বেশি সময় লেগে যায়, বাসায় ফেরার পর স্বাভাবিক নিয়মে ফিরতেও সময় লাগে বেশি। সেলাইয়ের অবস্থা বুঝে তাঁদের জন্য দৈনিক রুটিন ঠিক করা হয়ে থাকে।

মায়ের পুষ্টিতেই সন্তানের পুষ্টি

মায়ের জন্য চাই সুষম পুষ্টি। নইলে তার সন্তানও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। গর্ভাবস্থায় যতটা ক্যালরি গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তার চেয়ে ৩০০ ক্যালরি বেশি যোগ করতে হবে প্রতিদিন। আমিষজাতীয় খাবার খেতে হবে পর্যাপ্ত। শাকসবজি, ফলমূল তো খাবেনই। প্রচুর পরিমাণে পানি ও অন্যান্য তরল গ্রহণ করুন নিয়মিত। এতে মায়ের দুধ তৈরি হবে পর্যাপ্ত, মায়ের প্রস্রাবের পরিমাণ ঠিক থাকবে, মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকিও কমবে।

চাই মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি

প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। মায়ের মানসিক প্রশান্তির ব্যবস্থা করতে হবে পরিবারের সদস্যদেরও, বিশেষত প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে মায়ের নানা ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হয় পরিবারের কাছ থেকে। প্রত্যেক মা তাঁর নিজস্ব কাজগুলো করার সময় তাঁর সন্তানকে যত্ন করে রাখাটাও পরিবারের দায়িত্ব, যাতে তিনি নিশ্চিন্তে সময়টুকু কাজে লাগাতে পারেন। মায়ের অন্তত ছয় মাস ভারী এবং পেটে চাপ লাগিয়ে বসে কাজ করা যাবে না।

সুস্থতায় ব্যায়াম ও দেহভঙ্গি

● সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে চার-পাঁচ দিন পর থেকে কিছু হালকা ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। পেট ও পিঠের পেশি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এসব ব্যায়াম কাজে দেবে। ৪০ দিন বা এর বেশি সময় পর্যন্ত এসব ব্যায়াম করা যায়। উপুড় হয়ে শুয়ে দুই হাত দুই দিকে রেখে (হাতে ভর দিয়ে) মাথা ওপরের দিকে ওঠান। আবার চিত হয়ে শুয়ে পা ওপরের দিকে ওঠান (হাত থাকবে শরীরের পাশে)। এ দুটি ব্যায়ামের প্রতিটি ১০ বার করে (সম্ভব না হলে ৫ বারও করতে পারেন) নিদেনপক্ষে একবেলা করার অভ্যাস করুন। ২-৩ বেলা করলে আরও ভালো। তবে চাপ দিয়ে ব্যায়াম করবেন না। ব্যথা হলে ব্যায়াম করবেন না। অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে এসব ব্যায়াম শুরু করতেই অন্তত দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন, এমনকি মাসখানেকও লাগতে পারে।

● এ সময় থেকে যোনিপথের আশপাশের পেশির স্বাভাবিক দৃঢ়তা বজায় রাখতে একটি ব্যায়াম করা উচিত। মল ধরে রাখার জন্য মলদ্বারের পেশি যেভাবে সংকোচন করা হয়, সেই নিয়মে পেশি সংকোচন করতে হবে। যতক্ষণ জেগে আছেন (শোয়া, বসা, দাঁড়ানো, এমনকি হাঁটার সময়) এই ব্যায়াম করা ভালো। অস্ত্রোপচার হলেও এ ব্যায়ামে বাধা নেই। ৪০ দিন তো বটেই, ৩ মাস পর্যন্ত এ ব্যায়াম করা ভালো।

● হাঁটাচলা এবং ১ সপ্তাহ পর থেকে স্বাভাবিক হালকা কাজকর্ম করতে বাধা নেই (স্বাভাবিক প্রসবে)। বরং স্বাভাবিক জীবনে থাকলে নিজের খাবার আগ্রহ বাড়বে (সন্তানও ঠিকঠাক খাবার পাবে), কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানো যাবে। নিজেকে রোগী ভাববেন না।

● শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় নিজের দেহভঙ্গি সোজা রাখতে হবে। ঘাড় বাঁকিয়ে দুধ খাওয়ালে ঘাড়ের ব্যথায় ভুগতে পারেন। এ ছাড়া দুধ খাওয়ার সময় শিশুকে সঠিক অবস্থানে ও ভঙ্গিতে ধরার নিয়ম এবং অন্যান্য নিয়মকানুন জেনে নিন নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে। ভুল ভঙ্গির কারণে মায়ের সন্তানবৃন্তে ব্যথা হতে পারে। এ কারণে মা-ও কষ্ট পাবেন, আবার শিশুকে খাওয়াতেও পারবেন না।

পরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবনা?

● গর্ভাবস্থায় পেট ভারী হয়ে যাওয়ার কারণে মায়ের মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে হাঁটতে হয়। এ কারণে পরে ব্যথা হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই এ ব্যথা কমে আসে।

● ৬ মাস পর শিশুর জন্য মায়ের দুধের চাহিদা কমতে থাকে। এ সময় থেকে মা নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বাড়তি কিছু করতে পারেন। শর্করাজাতীয় খাবার একটু কমিয়ে দিলে ক্ষতি নেই। ভারী ব্যায়ামও করতে পারবেন (অস্ত্রোপচার হলে এক বছরের আগে নয়)।

● তবে ৪০ দিন পরই পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে জেনে নিন।