Thank you for trying Sticky AMP!!

মিঠুনের রিজিনাপর্ব

সংবাদমাধ্যমে হরহামেশাই দেখা যায়, বাংলাদেশি তরুণের ভালোবাসার টানে ছুটে এসেছেন ভিনদেশি কোনো নারী। তাঁদের কারও পরিচয় হয় কাজের সূত্রে, কারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সে পরিচয় একসময় গড়ায় ভালোবাসায়। দেশ-জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশি তরুণদের কাছে ছুটে আসেন তাঁরা, বিয়েও করেন অনেকে। কিন্তু তারপর? গত তিন বছরের এমন ১৫টি ঘটনার খোঁজ পেয়েছে ‘ছুটির দিনে।’ অনেকের সম্পর্কই অবশ্য ভেঙে গেছে, কয়েকজনের শুধু যোগাযোগটুকু আছে, কেউবা প্রতারিত হয়ে ফিরে গেছেন নিজের দেশে। আবার বাংলাদেশি তরুণেরাও বিদেশে গিয়ে হয়েছেন প্রতারিত। ব্যতিক্রমও আছে, দূরে থাকলেও যাঁদের সম্পর্ক এখনো আছে অটুট। এমন দম্পতির কথাই পড়ুন এবার।
এলিজাবেথ রিজিনা এসলিক ও মিঠুন বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

জীবনগল্পে ডুবে গিয়েছিলেন মিঠুন বিশ্বাস। নিজের বেড়ে ওঠা, পরিবার, এনজিওকর্মী হিসেবে পেশাগত জীবনের গল্প বলতে বলতে মেলে ধরলেন এলিজাবেথ রিজিনা এসলিকপর্ব। জীবনের যে পর্বটির জন্য তাঁর কাছে আমাদের যাওয়া।

এলিজাবেথ রিজিনা এসলিক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি গ্রামের মিঠুন বিশ্বাসের স্ত্রী। দুজনের পরিচয় ফেসবুকে। মিঠুন বিশ্বাস যোগ করেন, ‘২০১৫ সালের ২৭ মে ফেসবুকে আমরা বন্ধু হই। সে বন্ধুত্ব অনেকটা কৌতূহলের বশে। তাই তখনো জানতাম না সে কোন দেশের নাগরিক।’

পরিচয় থেকে রিজিনার সঙ্গে বন্ধুত্ব, একসময় মন দেওয়া-নেওয়া। কিন্তু যোজন যোজন মাইল দূরের দুই প্রাণ অনলাইন দুনিয়ার বাইরেও স্বপ্ন বুনেছিল। সেই স্বপ্নের যখন বিস্তার ঘটল, তখনই দেখা দিল বিপত্তি।

মনের সাধ থাকলেও মিঠুনের যে আর্থিক সাধ্য নেই সাত সাগর পাড়ি দেওয়ার, ভালোবাসার মানুষ রিজিনার কাছে ছুটে যাওয়ার। তখন অভয় দিলেন এলিজাবেথ রিজিনা এসলিক। মার্কিন এই নারীর কাছে ব্যাপারটা যেন এমন, ‘তুমি মানেই তো আমি। মিঠুন তুমি আসতে পারছ না, আমিই চলে আসছি।’

এলিজাবেথ রিজিনা এসলিকের বেড়ে ওঠা ওয়াশিংটনের ওরিয়েন্ট শহরে। রিজিনা তাঁর শহর, পরিবার আর ২১ বছরের পরিচিত ভুবন ফেলে চলে আসেন অচেনা বাংলাদেশে। তখন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি গ্রামের মিঠুন বিশ্বাসই যেন তাঁর পুরো দুনিয়া, সবচেয়ে চেনা মানুষ।

ঘটনাটি তাঁদের পরিচয়ের প্রায় দুই বছর পর, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে। রিজিনা-মিঠুন বিয়ে করেন ৯ ফেব্রুয়ারি। সে সংবাদ চাউর হলো সংবাদমাধ্যমে। আশপাশের এলাকার মানুষ ছুটে এলেন তাঁদের দেখতে। ভালোই কাটছিল নবদম্পতির দিন। কিন্তু তাঁদের বেশি দিন একসঙ্গে থাকা হলো না। রিজিনার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে এল। ভৌগোলিক সীমারেখা দুজনকে আলাদা করল। কিন্তু মনটা তো পড়েই রইল রাখালগাছি গ্রামের মিঠুন বিশ্বাস নামের ২৬ বছর বয়সী তরুণের কাছে, ঠিক দুই বছর পরও এখন যেমন রয়েছে।

রিজিনা আবারও এলেন।

পরিবারের অনুমতি নিয়েই রিজিনা এসেছিলেন বাংলাদেশে। তবে তাঁদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি তাঁর পরিবার। তাঁর ব্যবসায়ী বাবা-মা চাননি রিজিনা বাংলাদেশে এসে থাকুন। এখন কী করবেন তিনি? মিঠুন বলছিলেন, ‘তাই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়েও আলাদা থাকছে রিজিনা। চাকরি করছে। থাকছে আমার এক আত্মীয়ের বাসাতেই।’

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার পর থেকেই রিজিনা চেষ্টা করছেন মিঠুনকে সে দেশে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু নিয়ম মেনে সে প্রক্রিয়া এখনো চলমান। এর মধ্যেই রিজিনা আবার ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ফিরে আসেন মিঠুনের কাছে। তখনো দুই মাস থেকে চলে যান।

কথার ফাঁকে মিঠুন বিশ্বাস বলছিলেন, ‘গত বিবাহবার্ষিকী আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি। রিজিনাই চলে এসেছিল আমার কাছে। এবার আলাদা থাকতে হচ্ছে। আর তো কয়েক মাস...!’

মিঠুনের শেষ শব্দে একধরনের আনন্দ ভর করে। মিঠুন খোলাসা করেন সেই ‘কয়েক মাস’ শব্দটি—‘চাইলেই তো যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে যাওয়া যায় না। যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। হয়তো কয়েক মাসের মধ্যে আমি যেতে পারব।’

৩০ জানুয়ারি মিঠুন বিশ্বাসের বাড়িতে বসেই জানতে পারি, মিঠুন বিশ্বাস আর এলিজাবেথ রিজিনা এসলিকের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী আজ ৯ ফেব্রুয়ারি। জীবনের আনন্দময় দিনটিতে তাঁরা আলাদা, দুজন-দুজনের কাছ থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে। তবে ভৌগোলিক সীমারেখার দূরত্ব থাকলেও মনেপ্রাণে তাঁরা তো এক। আর সে ভালোবাসার শক্তিই হয়তো ঘোচাবে ভৌগোলিক দূরত্বও।