Thank you for trying Sticky AMP!!

মিলেমিশে তাদের পাশে

‘এক টাকায় শিক্ষা’ সংগঠন শিশুদের কাছে হাজির নতুন জামা নিয়ে। ছবি: সংগৃহীত

আট বছরের জেরিন। এসেছিল চাচার হাত ধরে। পোশাকের দোকানে ঢুকেই তার বিস্ময়মাখা দৃষ্টি। চারপাশে চোখধাঁধানো সব নতুন পোশাক। ইশারা পেতেই বেছে নিল লাল নেটের ঝকমকে ফ্রক। সেটি পরিয়ে দেওয়ার পর সেকি উচ্ছ্বাস তার! ঈদের আনন্দ যেন তার চোখেমুখে খেলে গেল।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি সদরের একটি বিপণিবিতানে জেরিনের মতো আরও অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মধ্যে আনন্দের ফোয়ারা এনে দিয়েছেন একদল তরুণ। তাঁরা সবাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া। এই তরুণদের সাংগঠনিক রূপ—এক টাকায় শিক্ষা। মূলত শিক্ষা নিয়ে কাজ করলেও ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে বিতরণ করে নতুন পোশাক।

২৯ মে ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকার ৬৫ সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে নিজেদের পছন্দমতো পোশাক কেনার সুযোগ করে দেন সংগঠনটির সদস্যরা। উপজেলা সদরের বাবুনগর গ্রাম থেকে আসে জেরিন। তারা দুই ভাইবোন। জেরিনের বয়স যখন দুই বছর আর ভাই জিসাদের বয়স কেবল এক মাস, তখন মা মারা যায়। কিছুদিন পর বাবা আবার বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। এরপর থেকে দিনমজুর চাচার ঘরে তাদের ঠাঁই হয়। দেখাশোনা করেন দাদি। দিনমজুর চাচার অভাবের সংসার। সেখানে পছন্দমতো নতুন জামা কেনা স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন এই তরুণেরা।

২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। প্রধান কাজ শিক্ষা নিয়ে। সংগঠনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে সব সদস্য দিনে দেবেন এক টাকা করে। তা মাস শেষে দিলেও হয়। এই টাকা খরচ হয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাসহ নানা কাজে।

সংগঠনের মূল উদ্যোক্তা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. রিজুয়ান বলেন, বর্তমানে সংগঠনের সদস্যসংখ্যা দুই হাজারের বেশি, যাঁরা প্রতিদিন এক টাকা করে দিয়ে আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন। আর দুই হাজার জন প্রতিদিন এক টাকা করে দিলে মাস শেষে বেশ ভালো একটা অর্থ আমাদের কাছে আসে; যা দিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গার শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিয়ে থাকি। ইতিমধ্যে আমরা সাতটা স্কুল ইভেন্ট করেছি, যার ১ হাজার জন ছাত্রছাত্রী আমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের চট্টগ্রামের বাইরে ফাউন্ডেশনের আরও দুটি শাখা রয়েছে ‘এক টাকায় আলোকিত ফেনী’ এবং ‘এক টাকায় আলোকিত বরিশাল’। বরিশালের একটি মাদ্রাসার ২০ জনের জন্যও আমরা ঈদের জামার ব্যবস্থা করছি।

ফটিকছড়িতে ২৯ মে বিবিরহাট, নাজিরহাট ও সরকারহাট—তিনটি জায়গায় শিশুদের নতুন পোশাক কিনে দেওয়া হয়েছে। আরও শতাধিক শিশুকে নতুন পোশাক কিনে দেওয়া হবে। মো. রিজুয়ান বলেন, ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নতুন পোশাক কিনে দিতে তহবিল গঠন করা হয়। এতে সংগঠনের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা অনুদান দিয়েছেন। প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার তহবিল হয়েছে।

শিশুদের নিয়ে কাজ করতে কেমন লাগে? এমন প্রশ্নে রিজুয়ানের উত্তর, শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর আনন্দই অন্য রকম।