Thank you for trying Sticky AMP!!

যাঁর হাতে আলোর মশাল

তারাপদ দাস

তারাপদ দাসের বয়স ৮৮ ছুঁয়েছে। বয়সের কাছে তিনি হার মানেননি। এখনো ছুটে চলেছেন যশোরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। শিক্ষাবিস্তার ও সমাজ সংস্কারকের মশাল হাতে তিনি ছুটছেন অহর্নিশ।

১৯৫৭ সাল থেকে ২০০১, টানা ৪৩ বছর ৩ মাস তিনি শিক্ষকতা করেছেন যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে। এই দীর্ঘজীবনে তিনি পড়িয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থীকে। তাঁদের মধ্যে পরে কেউ হয়েছেন অধ্যাপক, কেউ খেলোয়াড়, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্তা। আঁধারে আলো জ্বালিয়ে তিনি যশোরের মানুষের কাছে তারাপদ স্যার হয়ে উঠেছেন সেই কবে থেকে। সরল ব্যক্তিত্ব, বিনয়, আন্তরিকতা তাঁকে সহজেই আলাদা করে তোলে। সরস পাঠদানের ফলে তিনি শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে প্রিয় শিক্ষক হয়ে আছেন।

তারাপদ দাসের জন্ম ১৯৩১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, যশোরের অভয়নগর উপজেলার মাগুরা গ্রামে। ১৯৫২ সালে মনিরামপুর ঢাকুরিয়া প্রতাপকাঠি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৭ সালে যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে আইএ (উচ্চমাধ্যমিক) ও ১৯৬২ সালে বিএ পাস (অনিয়মিত কোর্সে) করেন। পরবর্তী সময়ে পিটিআই বিএড কোর্সের প্রশিক্ষণ নেন। সুরবিতার সংগীত একাডেমি থেকে এক বছর সংগীত শিক্ষাও গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি যশোর শহরের বেজপাড়া নলডাঙ্গা সড়কের বাসিন্দা।

শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করছেন। ১১টি বইয়ের রচয়িতা তিনি। ব্যক্তিজীবনে তিনি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: যশোর কলেজ, অভয়নগরের মাগুরা বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাবখালী মাগুরা ইউনাইটেড কলেজ ও বীরেশ্বর সংস্কৃত কলেজ। পিছিয়ে পড়া হরিজন সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তিনি শহরের লালদিঘির পাড়ে হরিসভা মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন শিশু শিক্ষালয়।

তারাপদ দাসকে সম্মানিত করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে তিনি শ্রেষ্ঠ সমবায়ী সম্মাননা পদক অর্জন করেন। এ ছাড়া গাঙচিল, ধীরাজ ভট্টাচার্য, মনোজ বসু, মুক্তেশ্বরী ও লিরিক সাহিত্য পুরস্কার, শারদ ও শতাব্দী সম্মাননা পদক, যশোর কলেজ প্রতিষ্ঠাতা সম্মাননা, অধ্যাপক শরীফ হোসেন স্মৃতি পদক পুরস্কারেও ভূষিত হন তিনি।

৮৮ বছর বয়সে এসেও এত কর্মোদ্দীপনা আপনি কোথায় পান? জিজ্ঞেস করতেই তারাপদ দাস বললেন, ‘মনের জোরে আমি ছুটে চলি। সংসারের দুঃখ-কষ্ট উপেক্ষা করি। সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখি। এ ছাড়া জীবনভর আমি মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। এ জন্য আমার প্রতি ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।’