Thank you for trying Sticky AMP!!

যে কারণে 'প্যারা' খাই

সব কাজই তো করলাম, তারপরও এরা সন্তুষ্ট নয়—প্যারার যেন শেষ নেই। মডেল: মুন, সজীব ও জিম, ছবি: সুমন ইউসুফ

তরুণ প্রজন্ম আজকাল ভাতের চেয়ে বেশি খায় ‘প্যারা’। তাদের আপনি প্যারাভক্ত বলতে পারবেন না কোনোভাবেই। কারণ, এই ‘প্যারা’ সেই প্যাড়া নয়। প্যাড়া সন্দেশ খাবারটি স্বাদে-গুণে অনন্য; তরুণেরা যে প্যারা খাচ্ছে তার স্বাদ তেতো। তরুণেরা প্যারা খাচ্ছে আসলে অন্যের কারণে। যেচে যেচে কি কেউ আর তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়? কিন্তু কেন এবং কখন হতে বাধ্য হয়? আর তা সামলানোর টোটকাই বা কী?

সম্পর্কের প্যারা
বাংলা ব্যবহারিক অভিধান–এ দেখা গেল, ‘প্যাড়া’ শব্দের একটি অর্থ ‘ক্ষীরের তৈরি মিষ্টান্ন’। আগেই বলা হয়েছে, তরুণদের হাতে এখন এই প্যাড়া খাওয়ার ‘টাইম নাই’। অবস্থাটা এমন, তরুণেরা এখন হুমায়ূন আহমেদের নাটকের সংলাপের মতো করে বলতেই পারেন, ‘প্যারা খেয়েই কূল পাই না, প্যাড়া খাব কখন?’
ক্ষীরের তৈরি মিষ্টান্ন দিয়ে কথা শুরু করেছিলাম। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সদ্য সাবেক কর্মী শারমিন অবশ্য ক্ষীরের পুতুল হয়ে বসে আছেন। অথচ তাঁর প্রেমিকের হৃদয় যেন বিশাল এক আইসবার্গ। শারমিনের প্রেমের টাইটানিক যেখানে বারবার ধাক্কা খেয়ে ডুবে যাচ্ছে, ভেসে উঠছে, আবার ডুবে যাচ্ছে...!
কথা বলার সময় ফোনের ওপাশ থেকে শারমিনের কণ্ঠটা খুব আর্দ্র লাগছিল, ‘আমি ওকে পাগলের মতো ভালোবাসি। কিন্তু দেখুন, আমি শখ করে একটা পোশাক পরলে ও বলে, “এটা পরলে কেন? এটা কোনো পোশাক হলো? কালারটা কী খ্যাত!” এটা যে কী প্যারা, বলে বোঝাতে পারব না।’
পুরোটা না হলেও কিছুটা আঁচ করা গেল খানিকক্ষণ কথা বলার পর। সব শুনে মনে হলো শারমিন এখন আর ‘আমি তো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো’ গানের নীতিতে চলার অবস্থায়ও নেই। সম্প্রতি কী হয়েছিল শুনুন, শারমিন চেয়েছিলেন প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করবেন। প্রেমিকের তাতে প্রবল আপত্তি। অনেক জোরাজুরির পর রাজি অবশ্য হলেন, শারমিনও নাচতে নাচতে ঢাকার ধানমন্ডিতে গিয়ে হাজির। তারপরের এক ঘণ্টায় তাঁকে হাঁটতে হলো সাত মাইল রাস্তা! তাঁর উচ্চারিত প্রতিটি শব্দে স্পষ্ট অসহায়ত্ব, ‘ও ইচ্ছে করে, জেদের বশে আমাকে অত দূর পথ হাঁটিয়েছিল সেদিন। আমি আসলে খুব অসহায়, ওকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াও কঠিন। ছয় বছরের সম্পর্ক আমাদের, তারপরও এই প্যারাগুলো মেনে নিচ্ছি ওকে ভালোবাসি বলে।’
যেভাবে সামলাবেন: প্রথমত দেখুন, সম্পর্কে আপনার ভূমিকা কেমন। আপনার আচরণে প্রেমিক বা প্রেমিকা এ রকম করছে কি না, তা বোঝা দরকার। আচরণগত সমস্যা থাকলে নিজেকে বদলাতে হবে। অন্যদিকে আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকা কী চায়, কেন চায়, তার চাওয়া যৌক্তিক কি না, তা বিবেচনা করুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন, সম্পর্কটা কীভাবে এগোবে।

কর্মস্থলের প্যারা
সম্প্রতি হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ একটি গবেষণা করেছিল অফিসের বসদের নিয়ে। সেখানে দেখা গেছে, কিছু বিষয়ে কর্মীর চেয়ে পিছিয়ে থাকলে বসদের মধ্যে দুই ধরনের ঈর্ষার উদ্ভব হয়। এক ধরনের ঈর্ষায় থাকে জিঘাংসা, আর আরেক ধরনের ঈর্ষায় থাকে অনুপ্রেরণা।
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত এক তরুণ শোনালেন তেমনই এক প্যারাময় গল্প। তখন তিনি সদ্যই চাঁদপুর থেকে পুরোনো চাকরিটা ছেড়ে ঢাকায় এসে নতুন অফিসে যোগ দিয়েছেন। বস বেশ দৌড়ের ওপর রেখেছেন, দম ফেলার ফুরসত নেই। তিনি চেষ্টাও করছেন বসের নির্দেশমতো সব কাজ গুছিয়ে করতে, কিন্তু কোনোভাবেই বসকে সন্তুষ্ট করতে পারছেন না।
যেভাবে সামলাবেন: বস কেবল আপনার ওপরেই নাখোশ হলে নিজের কোনো ত্রুটি আছে কি না, খেয়াল করুন। অফিসের সবার সঙ্গে এমন আচরণ করলে বুঝতে হবে, এতে আপনার দায় নেই, বসের স্বভাবই এ রকম। চাকরি করতে চাইলে এসব অনেক সময় মেনে নিতে হয়। নিজেকে দোষ দিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকা কাজের কথা নয়।

পরিবারের প্যারা
আক্ষরিক অর্থেই ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা চলছে আজহারুল ইসলামের জীবনে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্কের ইনিংস শেষ করে প্রেমিকার সঙ্গে হাসিমুখে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ার ছক কেটে বসে আছেন। সদ্যই তাঁর ‘বেলা বোস’কে ফোন করে বলেছিলেন, ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা, শুনছ?’
আজহারুলের বেলা অবশ্য অঞ্জন দত্তের বেলার মতো নীরব থাকেননি। হাসিমুখে, চুলে খোঁপা বেঁধে পরিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। বোঝাতে পেরেছেন, আজহার নতুন ইনিংসের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু সমস্যা যে এই সীমান্তে! আজহারের মা বেঁকে বসেছেন। ছেলের জন্য তিনি নিজেই পাত্রী ঠিক করে রেখেছেন বেশ কিছুদিন আগে এবং মনে মনে।
আজহার বলছিলেন, ‘বাবাকে হারিয়েছি খুব বেশি দিন হয়নি। মা-ই আমার সব, বড় দুই ভাই মাথার ওপর ছায়া। তাঁদের কথা অমান্য করিনি বলতে গেলে। কিন্তু জীবনের এই পর্যায়ে এসে মায়ের পছন্দ মানতে গেলে দীর্ঘদিনের সম্পর্কটার কী হবে?’
এ তো গেল মায়ের চাওয়া। ভাইদের আশার পারদও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। তাঁদের হয়েছে বিসিএস-জ্বর, পারদ ওপরে না উঠে কোথায় যাবে! আজহারের ভাষায়, ‘তাঁরা চাইলে আমি বিসিএস দিতে পারি। কিন্তু আমি তো জানি, কী আমার ভালো লাগে। যে চাকরিটা শুরু করেছি, তা বেশ ভালো। কিন্তু ভাইদের কথা, বেসরকারি চাকরিতে চলবে না। মাঝে তো এমন সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম যে বাসা থেকে চলে যাব।’
যেভাবে সামলাবেন: সম্পর্ক গড়ে উঠলে একটা অঙ্গীকারও দেওয়া হয়ে যায়। ফলে সঙ্গী নির্বাচনের বেলায় হুট করে পরিবারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কঠিন। সম্পর্ক এবং পেশার বেলায় নিজের মনের ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিন। আপনার সঙ্গী বা চাকরিটি কেন ভালো, কোন কোন কারণে আপনার জন্য উপযুক্ত তা পরিবারের বড়দের বোঝাতে হবে আপনাকেই।

যে প্যাড়া খেতে ভালো
প্যাড়া সন্দেশ খেতে তোফা। দেশের অনেক জেলাতেই তৈরি হয়। এর মধ্যে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীর কালাচাঁদ মিষ্টান্ন ভান্ডার এবং নওগাঁর কালীমন্দির সংলগ্ন কয়েকটি মিষ্টান্নের দোকানের প্যাড়া সন্দেশের খ্যাতি দেশজোড়া। নওগাঁর এই দোকানগুলো ‘ভোগের দাকান’ হিসেবে পরিচিত।
প্রায় ১০০ বছর আগের কথা। দেবী আরাধনার জন্য নওগাঁর কালীতলার মহেন্দ্রী দাস প্রথম প্যাড়া সন্দেশ তৈরি করেন। এই তথ্য জানা গেছে স্থানীয় ব্যক্তি ও মিষ্টান্নের দোকানের প্রবীণ পরিচালকদের কাছ থেকে। মহেন্দ্রীর সেই দেবী-ভোগ পরে জনসাধারণেরও প্রিয় খাবার হয়ে ওঠে। ‘মা নওগাঁ প্যাড়া সন্দেশ’-এর মালিক বৈদ্য রতন দাস বললেন, ‘পুরোনো কারিগরদের রেসিপিতেই প্যাড়া সন্দেশ বানানো হচ্ছে। এখনকার কারিগরদের মধ্যে নারায়ণ চন্দ্র প্রামাণিক সবচেয়ে পুরোনো।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকারের পরামর্শ নিয়ে লেখাটি লিখেছেন মাহফুজ রহমান