Thank you for trying Sticky AMP!!

রনন যেভাবে বইপোকা হলো

মুঠোফোনের পর্দা ছেড়ে রননের আগ্রহ এখন বইয়ের প্রতি। ছবি: খালেদ সরকার

রনন হাসান আমাদের একমাত্র ছেলে। ওকে আমরা বাসায় ডাকি রৈনীল নামে। বয়স ২ বছর ১০ মাস। এইটুকুন বয়সেই সে পড়ে ফেলেছে অনেক অনেক বই। সারা দিন তার ঠোঁটে লেগে থাকে সেসব বইয়ের গল্প বা ছড়া। এখন আর ওকে ছড়া বা গল্প বলে ঘুম পাড়াতে হয় না। ও নিজে নিজেই ছড়া বা গল্প বলতে বলতে ঘুমায়। মাঝেমধ্যে আমরা ওকে বলি, ‘একটা গল্প বলে আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দে!’ হাত–পা নেড়ে নেড়ে রনন গল্প বলা শুরু করে। আধো আধো বুলিতে, ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে সেই গল্প হয়ে ওঠে আমাদের জীবনের শোনা শ্রেষ্ঠ কোনো গল্প। তবে এখনকার অনেক শিশুর মতোই রননেরও স্মার্টফোন–ইউটিউবের প্রতি আকর্ষণ ছিল। ওকে বইমুখী করার গল্প শুনুন।

শুরুর কথা

আমরা থাকি ঢাকায়। এ শহরে খেলার মাঠের যে কতটা অভাব, তা কে না জানে! এখানে শিশুরা সব সময়ই চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী। আমাদের রননও তা–ই। ওর ঘরভর্তি খেলনা। এসব নিয়েই ও বেড়ে উঠছিল। তবে ছোটবেলা থেকেই ছড়া বা গল্প খুব পছন্দ করত ও। আমরাও ওকে ছড়া ও গল্প শোনাতাম। একদম চুপ করে শুনত। তখন একটুও দুষ্টুমি করত না। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? একদিন আমাদেরও ছড়া–গল্পের ভান্ডার ফুরিয়ে গেল। তখন ইউটিউবে বাচ্চাদের যে গল্প বা ছড়ার চ্যানেলগুলো আছে, রননকে তা–ই দেখাতে শুরু করলাম। রনন গল্প শুনত মন দিয়ে আর ছড়াগানের তালে তালে নাচত। আমরা হেসে লুটোপুটি খেতাম।

কড়াকড়ি

রনন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আমরাও তাল মিলিয়ে সতর্ক হতে শুরু করি। কারণ, ইউটিউবে একটু বেশি সময় কাটাচ্ছিল ও। তাই সারা দিনে ওর স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করে দিই ২০ মিনিট। দুপুরে ১০ মিনিট। রাতে ১০ মিনিট। অবশ্যই নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব থেকে সে ইউটিউবে ছড়াগান বা গল্প বলা দেখত। ভাগ্য ভালো যে সময় শেষ হয়ে গেলে রননকে বললেই উঠে আসত। কোনো রকম জেদ করত না। তারপর একা একাই সেসব ছড়া বা গল্প বলার চেষ্টা করত। ও তখনো ভালোভাবে কথা বলা শেখেনি। তবে ওর গল্প বা ছড়া বলার চেষ্টার একটা লক্ষণ আমরা দেখতে পেলাম।

বইয়ের সঙ্গে পরিচয়

আগেই বলেছি, রনন ছোটবেলা থেকে বই খুব পছন্দ করত। ওকে প্রথম বই কিনে দিই ওর ছয় মাস বয়সে। তখন ও বইয়ের ছবির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকত। কখনো কখনো পাতা টান দিয়ে ছেঁড়ার চেষ্টাও করত। আমরা বুঝতাম, ওই পাতাটা হয়তো ওর দেখা শেষ, তাই এমন করছে। পরে পাতা উল্টে দিলে আবার গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকত।

পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন

আমরা একদিন ঠিক করলাম, রননের যেহেতু বইয়ের প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ আছে, সেহেতু ওর স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আরও বেশি বেশি করে বই কিনে দিতে হবে। গত বছরের বইমেলায় ওকে কিনে দিলাম ১৫টি গল্প ও ছড়ার বই। উপহার পেয়ে মোবাইল ফোন ফেলে ও বইয়ে ডুবে গেল। এ ক্ষেত্রে ওর সঙ্গী হলো ওর দাদি, মানে আমাদের মা। মা গল্প–ছড়া পড়েন, রনন মন দিয়ে শোনে। কখনো কখনো আমরাও ওকে গল্প পড়ে শোনাই। দেখতে দেখতে রীতিমতো খুদে বইপোকা বনে গেল ও। এবারের বইমেলা থেকে ৩০টির বেশি বই ওকে কিনে দিয়েছি। এখন ও বই নিয়েই ব্যস্ত থাকে। স্মার্টফোন ও ইউটিউবের জন্য মোটেও বায়না ধরে না। তবে সময়ের সঙ্গে চলতে গেলে এসবেরও তো দরকার আছে। তাই দিনের নির্দিষ্ট সময়ে আমরা ওসব ব্যবহার করতে দিই।

সবাই জানেন, প্রত্যেক শিশুই আলাদা। একেকজনের একেক রকম চাহিদা ও আচরণ। রননের আকর্ষণ ছিল বইয়ের প্রতি। আমরা তা গুরুত্ব দিয়ে ওর স্ক্রিন টাইম ঠিক করে দিতে পেরেছি। যখন শুনি রনন আনমনে কোনো ছড়া কাটছে কিংবা গল্প বলছে, তখন মনে হয়—যাক, একটা ভালো কাজ করতে পেরেছি আমরা।