Thank you for trying Sticky AMP!!

রুবেলের মনের নোঙর

বিয়ের অনুষ্ঠানে ফ্লোডিলিজ এভিলা টপিয়া ও রুবেল আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
সংবাদমাধ্যমে হরহামেশাই দেখা যায়, বাংলাদেশি তরুণের ভালোবাসার টানে ছুটে এসেছেন ভিনদেশি কোনো নারী। তাঁদের কারও পরিচয় হয় কাজের সূত্রে, কারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সে পরিচয় একসময় গড়ায় ভালোবাসায়। দেশ-জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশি তরুণদের কাছে ছুটে আসেন তাঁরা, বিয়েও করেন অনেকে। কিন্তু তারপর? গত তিন বছরের এমন ১৫টি ঘটনার খোঁজ পেয়েছে ‘ছুটির দিনে।’ অনেকের সম্পর্কই অবশ্য ভেঙে গেছে, কয়েকজনের শুধু যোগাযোগটুকু আছে, কেউবা প্রতারিত হয়ে ফিরে গেছেন নিজের দেশে। আবার বাংলাদেশি তরুণেরাও বিদেশে গিয়ে হয়েছেন প্রতারিত। ব্যতিক্রমও আছে, দূরে থাকলেও যাঁদের সম্পর্ক এখনো আছে অটুট। এমন দুই দম্পতির কথাই পড়ুন এবার।

রুবেল আহমেদ তখন সিঙ্গাপুরে একটি গ্লাস তৈরির কারখানার কর্মী। বাংলাদেশি রুবেলের মতো বিভিন্ন দেশের অভিবাসী আরও শ্রমিক সেখানে কাজ করতেন। তাঁদেরই একজন ফিলিপাইনের ফ্লোডিলিজ এভিলা টপিয়া। সহকর্মী এভিলার সঙ্গে রুবেলের পরিচয় কাজের সূত্রে। পরিচয়ের কিছুদিন পর বন্ধুত্ব। একসময় রুবেলের মনের দরজায় কড়া নাড়ে এভিলার প্রতি ভালোবাসা। এভিলারও অমত ছিল না সে ভালোবাসায়।

কিন্তু তাঁদের ভালোবাসার দিনগুলো দীর্ঘ হতে দেয় না রুবেলের চাকরির মেয়াদ। যেমনটি তিনি বলছিলেন, ‘আমার ৮ বছরের চাকরির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালে। বাড়িয়ে নেওয়ার উপায় ছিল না। বাধ্য হয়ে তখন দেশে চলে আসি।’ দেশে ফিরে এলেও ভুলতে পারেন না এভিলাকে। এভিলাও কি পেরেছেন? রুবেল বলছিলেন, ‘ফেসবুকে তখন প্রতিদিন আমাদের কথা হতো। একসময় দুজনে সিদ্ধান্ত নিই বিয়ের।’
কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলেই তো আর বিয়ে করতে পারেন না, কারণ সিঙ্গাপুর আর বাংলাদেশের ভৌগোলিক দূরত্ব দুজনের মধ্যে। তত দিনে এক বছর পেরিয়ে গেছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাস। এভিলা নিজেই জানালেন, তিনিই বাংলাদেশে আসছেন। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের রুবেল আহমেদ ছুটে এলেন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। প্রায় এক বছর পর দেখা হলো দুজনের।
২৫ মার্চ ঢাকায় তাঁরা বিয়ে করেন। বউ নিয়ে চলে যান গ্রামের বাড়ি। রুবেলের বাবা বেলাল হোসেন বলেন ভিনদেশি পুত্রবধূকে প্রথম দেখার কথা, ‘প্রথমে বউ দেখে হতবাক হয়েছিলাম। গ্রামের মানুষ ছুটে আসে বউ দেখতে। বাড়িতে অনুষ্ঠান করে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে বউভাতের আয়োজন করছিলাম।’
কৃষক পরিবারে সন্তান রুবেল আহমেদের বয়স এখন ২৬ বছর। এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, তবে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার আগেই অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে চলে যান সিঙ্গাপুরে। স্ত্রী সম্পর্কে রুবেল বললেন, ‘টপিয়া এখনো সিঙ্গাপুরে থাকে। ছুটি পেলেই চলে আসে আমার কাছে। গত মাসেও সে এসেছিল। তিন সপ্তাহ থেকে চলে গেছে।’ কাজের খাতিরে ভিনদেশে থাকলেও তাঁদের ভালোবাসা এতটুকু কমেনি। যোগাযোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রুবেল চেষ্টা করছেন ফের সিঙ্গাপুরে যাওয়ার, টপিয়ার সঙ্গে সেখানেই সংসারী হওয়ার। সুদূর সিঙ্গাপুরেই যে পড়ে আছে তাঁর মনের নোঙর।