Thank you for trying Sticky AMP!!

রুমানা যদি সেখানেই থেমে যেতেন?

রুমানা মনজুর । ছবি: সংগৃহীত

স্বামী হাসান সাইদের আক্রমণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রুমানা মনজুর দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান ২০১১ সালে। ২০১৯ সালের খবর হলো, সেই রুমানা বর্তমানে কানাডার বিচার বিভাগে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডিজেনাস’–এর একজন আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশ সময় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে টেলিফোনে কথা হয় রুমানা মনজুরের সঙ্গে। জানালেন, আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন কয়েক মাস হলো। ব্যস্ততা বেড়েছে। জীবনের চ্যালেঞ্জ তো শেষ হয়নি। বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তবে ১৪ বছরে পা দেওয়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মানসিক স্বস্তিতে আছেন। ভালো আছেন।

রুমানা জানালেন, আইন পেশায় ভালো করতে হলে নতুন নতুন বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। গবেষণা করতে হয়। মেয়েকে সময় দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে কোথাও প্র্যাকটিস করছেন না, আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন কানাডা সরকারের সঙ্গে।

২০১১ সালে রুমানা উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় ছিলেন। ছুটিতে দেশে ফিরলে এ উচ্চশিক্ষাকে কেন্দ্র করে স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটে। পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর কানাডার ভ্যাংকুভারের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (ইউবিসি) তাঁর চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়। আবার কানাডায় ফেরা। সেখানে যাওয়ার পর থেকে রুমানা মনজুরের পথচলা থমকে যায়নি ক্ষণিকের জন্যও। ২০১১ সালে কারাগারেই মৃত্যু হয় রুমানার স্বামী হাসান সাইদের।

২০১২ সালে কানাডার অঙ্গরাজ্য অ্যালবের্টার এডমন্টনে ১ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো উদ্‌যাপিত ‘ডটারস ডে’তে অন্যতম ডটার অব দ্য ইয়ার মনোনীত হন রুমানা। ২০১৫ সালে স্থানীয় পর্যায় থেকে বিশ্বব্যাপী মানুষকে প্রভাবিত করার মতো উদ্ভাবনী ও আশাবাদী ধারণা নিয়ে কানাডার গ্র্যান্ডভিল আইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ‘টেডএক্স স্টেনলে পার্ক ইভেন্ট’–এ বক্তব্য দেন রুমানা।

২০১৭ সালে ইউবিসির পিটার এ অ্যালার্ড স্কুল অব ল থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন রুমানা। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারীদের সম্মানে অনুষ্ঠিত চ্যানশুন কনসার্ট হলের অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেন তিনি।

জীবনের তাগিদে ব্রেইল শিখেছেন রুমানা। বর্তমানে কানাডার হ্যান্ডি ডার্টের পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করছেন তিনি। ঘরের দরজা থেকেই এ ট্রান্সপোর্ট তাঁকে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছে দেয়, আবার কাজ শেষে বাড়ি পৌঁছে দেয়। রুমানা বললেন, ঘরের ভেতরে সব পরিচিত হয়ে গেছে। সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

রুমানা জানালেন, তাঁদের মা ও মেয়ের সম্পর্ক দুই বন্ধুর মতো। রুমানা স্বামীর নির্যাতনে যখন দৃষ্টিশক্তি হারান, তখন মেয়ের বয়স ছিল মাত্র সাড়ে চার বছর। রুমানা মেয়ের কাছে পুরো ঘটনাই বর্ণনা করেছেন। মেয়ের মনের সব প্রশ্নের উত্তর দেন। এক বাবার কারণে মেয়ের মনে পুরুষদের প্রতি যাতে বিরূপ কোনো ধারণার জন্ম না নেয়, সে চেষ্টা করেন।

রুমানা মনজুরের আক্ষেপ একটাই, মেয়েটা বড় হচ্ছে, অথচ সেই বড় হওয়াটা চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। মেয়েটার চেহারা কেমন হয়েছে, তা–ই বা কে জানে। তাই অলৌকিক কোনো ঘটনায় যদি তিনি চোখে দেখতে পান, সবার আগে মেয়ের মুখটাই দেখতে চাইবেন।