Thank you for trying Sticky AMP!!

রোগীর বন্ধু অখিল

অখিল সরকার

করোনাভাইরাসের ধাক্কাটা বেশ ভালো করেই আঁচ করেছেন মাদারীপুরের মানুষ। দেশে মোট আক্রান্ত মানুষের অনেকের বাড়ি যে এ জেলাতেই। তাই অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে জেলার শিবচর উপজেলা, কড়াকড়ি আছে জেলা সদরেও। করোনা রোগীর সেবা দিতে পারবে, এ জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছে। আবার সরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী থাকার আতঙ্কে সাধারণ মানুষ হাসপাতালে যাওয়া প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেবা দিতে এগিয়ে এসেছেন অখিল সরকার। তিনি মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)।

অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবার কথা চিন্তা করে তিনি মুঠোফোন আর ইন্টারনেটে সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সংকটময় এই সময়ে তাঁর এ অভিনব চিকিৎসাসেবা শুধু জেলাটির বাসিন্দারা নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা পাচ্ছেন। দৈনিক এক শর বেশি মানুষকে মুঠোফোনের মাধ্যমে তিনি এ চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রোগী ওষুধের নাম শুনে লিখতে না পারলে তাঁকে খুদে বার্তার মাধ্যমেও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওষুধের নাম। এ ছাড়া ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, মেসেঞ্জার ও ইমোর মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি ভিডিওকলের মাধ্যমে রোগীর বর্ণনা শুনে দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্র।

২৫ মার্চ কথা হয় চিকিৎসক অখিল সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। হাসপাতালেও রোগী দেখা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। সেই চিন্তা থেকেই রোগীরা যেন ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা পান, তাই এমন উদ্যোগ।’

২৩ মার্চ নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে সেবা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে একটি স্ট্যাটাস দেন চিকিৎসক অখিল সরকার। জানিয়ে দেন নিজের একটি নম্বর। এরপর থেকেই শুরু হয় সেবা দেওয়া।
২৪ ঘণ্টা যেখানেই থাকেন রোগীকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন তিনি। অখিল বলছিলেন, ‘ভাবতে পারিনি রোগীদের থেকে এত সাড়া পাব। রোগীরা ওষুধের নাম না বুঝলে ফোনে লিখে পাঠিয়ে দিচ্ছি। অনেকে ভিডিওকলেও চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। মানুষ যখন চিকিৎসাসেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হন, তখনই আমি নিজেকে সার্থক মনে করি।’

সেদিন দুপুরে এমন অনেকেই তাঁর কাছে সেবা নিলেন। মুঠোফোনে একসময় কল এল রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা স্বর্ণার। সেবাপ্রার্থী স্বর্ণা বলছিলেন, ‘ফেসবুকে তাঁর নম্বর পাই। ফোন করে আমি আমার বাচ্চার একটা স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কথা বলি। তিনি সব শুনে আমার ইনবক্সে ওষুধের নাম ও বাচ্চাকে ভালো রাখার পরামর্শ দিলেন।’

শুধু স্বর্ণা নন। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন জেলার অন্তত এক হাজার মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন অখিল সরকার। 

অখিল সরকার মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের চৌহদ্দি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ২০০৫ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২০১০ সালে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তিনি এই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

অখিল সরকার বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতেও আমি এই অনলাইন সেবা অব্যাহত রাখতে চাই।’