Thank you for trying Sticky AMP!!

রোজায় চাই ক্ষারধর্মী শরবত

রোজা বা যেকোনো ফাস্টিং হলো বডি ডিটক্সিফিকেশন করার সবচেয়ে দ্রুততম ও নির্ভরশীল প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধব্যবস্থা ত্বরান্বিত হয়।

রোজা বা ফাস্টিং করার সময় আমাদের শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত উপাদান (টক্সিন) প্রতিটি কোষ থেকে রক্তপ্রবাহে চলে আসে। এই প্রক্রিয়ায় শরীরের পুরোনো এবং রোগাক্রান্ত কোষ শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

ধর্মীয়ভাবে এক মাসের এই রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা অসুস্থ হলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরের খাবার গ্রহণের আগ্রহ কমে যায়। এই প্রবণতা খুবই প্রাকৃতিক। আমরা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকি এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ঠিক হতে থাকে।

আমাদের শরীর যদি কোনো ভাইরাস বা সিজনাল ফ্লুতে আক্রান্ত হয়, তখন খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। সেই সময় আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধে সহায়তাকারী কোষগুলো স্বয়ংক্রিয় হয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় ইফতারে বা যেকোনো ফাস্টিংয়ের পর প্রথম খাবার কী খাওয়া হচ্ছে তার ওপর। সারা দিন রোজা রাখার ফলে শরীরে জমে থাকা অনেক বিষাক্ত উপাদান আমাদের রক্তে চলে আসে। এসব বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে এমন কিছু পানীয়, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট–সমৃদ্ধ, তাই সেগুলো ইফতারে রাখা আবশ্যক। ক্ষারধর্মী পানীয় আমাদের রক্তের পিএইচ (৭.৪) রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই ইফতারে ক্ষারধর্মী শরবত রাখা যেতে পারে।

এ ধরনের শরবত বানানোর ক্ষেত্রে যেকোনো এক রকম মৌসুমি সবজি, লেবু এবং তিশি রাখুন। সব সবজি ক্ষারীয়, লেবু স্বাদে টক বা ক্ষারধর্মী। তবে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা যাঁদের আছে, তাঁদের পানীয়তে অবশ্যই অ্যামাইনো অ্যাসিড রাখতে হবে। এটি ফ্যাট ভেঙে যে মেটাবোলাইটস তৈরি হয়ে রক্ত প্রবাহে আসে, সেটাকে শরীর থেকে বের করে দেয়। তিসিতে তেল থাকায় ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে পরিমাণে কম দিতে হবে, এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ পরিমাণ। স্বাভাবিকভাবে সব পানীয়তে তিসিগুঁড়া থাকবে ১ চা–চামচ জনপ্রতি। বেশি হলে সমস্যা নেই।

ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য খাবারে তিশির গুরুত্ব দেওয়া হয় অনেক। সেক্ষেত্রে ২/৩ টেবিল চামচ পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে। তিসি আঁশসমৃদ্ধ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সেলেনিয়ামসহ খনিজ পদার্থের একটি অসাধারণ সমন্বয়। এতে রয়েছে ভিটামিন বি-১, ম্যাঙ্গানিজ ও প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। বাড উইক ডাইট প্রোটকলে তিসিকে সুপার ফুড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি আমাদের দেশীয় পণ্য এবং সহজলভ্য।

ডিটক্সিফিকেশন উপযোগী কয়েকটি ক্ষারধর্মী শরবত তৈরির রেসিপি:

তিসি পানি। ছবি: লেখক

তিসি পানি
উপকরণ: তিসি,লেবু, সৈন্ধব লবণ
প্রক্রিয়া: পানিতে তিসিগুঁড়া ও লবণ ভিজিয়ে রাখুন অন্তত ২০ মিনিট। এরপর এতে লেবু মিশিয়ে নিন খাওরার আগ মুহূর্তে।

থানকুনিপাতার জুস। ছবি: লেখক

থানকুনি পানি/জুস
উপকরণ: ৮-১০টি থানকুনিপাতা, তিসিগুঁড়া, অল্প পরিমাণ কাঁচা হলুদ, সৈন্ধব লবণ।
প্রক্রিয়া: ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা তিসিগুঁড়ার সঙ্গে কাঁচা হলুদ, কয়েকটি থানকুনিপাতা ব্লেন্ড করে লেবু ও লবণ মিশিয়ে নিন। এরপর পান করুন।

চালকুমড়ার জুস। ছবি: লেখক

চালকুমড়া জুস
উপকরণ: চাল কুমড়া, তিসিগুঁড়া।
প্রক্রিয়া: চালকুমড়া পানি সহযোগে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিন। এতে তিসিগুঁড়া মিশিয়ে নিন। ফ্লেভারের জন্য পুদিনাপাতা যোগ করা যেতে পারে। মাঝারি সাইজের একটা কুমড়ার অর্ধেক ৩–৪ জনের জন্য যথেষ্ট। না ছেঁকে আঁশসহ খাওয়া ভালো। রোজার পর আরাম হবে না এ জন্য ছেঁকে নিতে পারেন।

পালং জুস। ছবি: লেখক

পালং জুস
উপকরণ: পালংশাক ১ মুঠো, শসা-১–২ পিস, আদাকুচি, লেবু, লবণ স্বাদমতো।
প্রক্রিয়া: সব উপকরণ ভালো করে ধুয়ে সামান্য পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে লেবু ও লবণ মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে পালং জুস।

বিট জুস। ছবি: লেখক

বিট জুস
উপকরণ: বিট রুট, পুদিনা।
প্রক্রিয়া: মাঝারি আকারের বিট অর্ধেক পরিমাণ স্লাইচ করে কেটে নিয়ে তাতে কয়েকটি পুদিনাপাতা দিয়ে ব্লেন্ড করতে নিলেই তৈরি হবে বিট জুস। ছেঁকে বা আঁশসহ খাওয়া যায়।

লেখক: পুষ্টিবিদ (মেইন কনসার্ন ইন লাইফ স্টাইল মেডিফিকেশন), ন্যাচারাল কিউরস।