Thank you for trying Sticky AMP!!

লোকটা বিশ্রী ভঙ্গিতে আমার দিকে এগোচ্ছে

ছোটবেলার যৌন নির্যাতনের স্মৃতি তাড়া করে তাহেরা তমাকে। ছবি: সংগৃহীত

আমার বয়স তখন আট। যৌন নির্যাতনের শিকার হলাম আমার গ্রামেরই একটা মক্তবের ভেতর। সে সময় আচমকা দেবদূত হয়ে আমার বয়সী এক ছোট শিশু মক্তবে ঢুকলে পিশাচ লোকটির হাত থেকে বেঁচে যাই। তবে ফিসফিস করে পিশাচটি বলেও দেয়, এই ঘটনা কাউকে বললে আল্লাহ গুনাহ দেবে। হঠাৎ করে মারা যাব।

কৈশোর পাড়ি দিয়ে বুঝতে পারলাম, এই ঘটনার সঙ্গে আল্লাহর গুনাহ অথবা মরে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তখন থেকেই ছোট বোনকে আগলে রেখেছি। রাস্তায় কোনো অপরিচিত মেয়েকে বখাটে যৌন নির্যাতন বা হয়রানি করছে, সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছি। 

 আমি মা-মরা সংসারে বড় হয়েছি। এসব বিষয় শেয়ার করার মতো তেমন কেউ ছিল না। তবে এটুকু বুঝতাম, এই ঘটনা মুখ ফুটে বললে সমাধান হতো– মেয়ে বিয়ে দিয়ে দাও অথবা বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। 

নিপীড়নের ঘটনার পর থেকে অস্বস্তিকর কোনো পরিস্থিতিতে পড়লেই আমার বমি হতো। বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে এসে একবার মেডিসিনের চিকিৎসক দেখাই। উনি আমার সব রিপোর্ট দেখে কোনো অসুখ বা সমস্যা ধরতে পারলেন না। পরে মনোচিকিৎসক দীর্ঘক্ষণ আলাপের পর জানতে চাইলেন ঠিক কবে থেকে এবং কখন এমন অস্বস্তিকর বমি হয়? চিকিৎসক আবার প্রশ্ন করলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলি...বলি খুব মানসিক প্রেশারে থাকলে ঘুমে/জাগরণে প্রায়ই দেখি লোকটা বিশ্রী ভঙ্গিতে আমার দিকে এগোচ্ছে, আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি প্রাণে বাঁচার, ছুটে যাওয়ার। 

সেই ছোটবেলার ঘটনা আমার পিছু ছাড়েনি। দাম্পত্য জীবনেও এই ট্রমার প্রভাব টের পাই। ঘুমের ঘোরে অথবা আচমকা প্রিয় মানুষের স্পর্শও কেমন ভড়কে দেয়। 

আমার এই মানসিক শঙ্কা কাটিয়ে উঠতে সবচেয়ে বেশি সহায়ক ছিল আমার আত্মবিশ্বাস, অপ্রতিরোধ্য মানসিক শক্তি। আর পরে পাশে পেয়েছি আমার স্বামীকে। তাঁর নির্ভরতা আমাকে আরও সাহসী করেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে শিখিয়েছে। আমি ভাবতে শিখেছি, মানুষের সম্ভ্রম আর সম্মান নির্ভর করে তার মগজে, মননে। মানুষের সম্মান কখনোই যোনি অথবা কোনো মাংসপিণ্ডতে লুকিয়ে থাকতে পারে না। সম্ভ্রমহানি বলে কিছু হয়ে থাকলে তা হবে নিপীড়ক ধর্ষকদের। 

‘টাচ হ্যাজ মেমোরি’ বলতে একটা কথা আছে। ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের বেলায় চিকিৎসায় বাহ্যিক ক্ষত হয়তো লাঘব হয়। কখনো কখনো ন্যায়বিচারও পায়। কিন্তু বীভৎসতার স্মৃতি কখনোই স্থায়ী ভাবে মুছে যায় না। পদে পদে তাকে এই ভয় বীভৎসতার ট্রমা পিছু টেনে ধরে!

নিপীড়নের শিকার নারীর ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়োজন পরিবার-পরিজন আর কাছের মানুষদের মানসিক সহায়তা। কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হলে যেমন বলে, ‘আমি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছি’ ঠিক তেমন কেউ ধর্ষণের শিকার হলেও যেন বলতে পারে ‘আমি ধর্ষণের শিকার হয়েছি।’ এমন পরিস্থিতি, পরিবেশ সমাজকেই তৈরি করে দিতে হবে। 

তাহেরা তমা
পিএইচডি গবেষক
ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটি
সাংহাই, চীন