Thank you for trying Sticky AMP!!

শখের কেক দিয়ে আয়

কেকের কারিগর সাকিয়া সুলতানা। ছবি: প্রথম আলো

থরে থরে সাজানো তিনটি বই, ফুলের তোড়া, সমাবর্তনের টুপি আর লাল ফিতেবন্দী সনদ। অন্য পাশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। এ জিনিসগুলো আসলে পুরোটাই একটা কেক, খাওয়ার যোগ্য। এতটা নিখুঁতভাবে কেক বানানো যায়?

এই কেকের কারিগর সাকিয়া সুলতানা। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনীতে নিজের তৈরি সেই ১১ কেজি ওজনের কেক নিয়ে এসেছিলেন । শখের বশে দুই বছর আগে শুরু করেছিলেন কেক বানানো। এখন সেই কেক থেকেই তাঁর আয় মাসে অন্তত ৬০ হাজার টাকা।

১৯৯৬ সাল। এসএসসি পরীক্ষার পরপরই বিয়ে হয় সাকিয়ার। স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার সময় কোলজুড়ে আসে বড় মেয়ে ফাইরুজ তাহমিনা। স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কয়েক মাস আগেই জন্ম দ্বিতীয় মেয়ে ফারহা তাসনিয়ার। এরপর তৃতীয় মেয়ে ফারিবা তানজিমের জন্ম। মেয়েদের নিয়ে ব্যস্ততায় চাকরিতে ঢোকার সুযোগ হলো না। ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করা বড় ভাই আলিম চৌধুরী সাকিয়াকে জানালেন, তিনি চট্টগ্রাম নগরে একটি কফি শপ দেবেন। সেই শপে কেক সরবরাহের দায়িত্ব পেলেন সাকিয়া। 

সাকিয়া জানালেন, প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চ্যানেল—টিএলসির বিভিন্ন শো দেখে কেক বানানোর কৌশল আত্মস্থ করার চেষ্টা করেন। এরপর মালয়েশিয়া, ভারত ও আরব আমিরাতে গিয়ে বিশ্বের প্রখ্যাত কেক শিল্পীদের কাছ থেকে হাতেকলমে শেখেন। তারপর ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ‘আর্টসি কেকস’ নামের পেজ খুলেন। বাড়তে থাকে পরিচিতি। এখন প্রতি সপ্তাহেই তাঁর কাছে ৩ থেকে ৪টি কেকের ফরমাশ আসে।

যেকোনো একটি নকশা দিলেই হবে—হুবহু সেটি কেকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন সাকিয়া। গত দুই বছরে কয়েক শ কেক বানিয়েছেন। কোনো কেকে উঠে এসেছে বিখ্যাত চরিত্র হাল্ক। কোনোটিতে আবার পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে শিশু, কম্বল মোড়ানো। কোনোটিতে আবার ফুটে উঠেছে গাড়ি, কার্টুন কিংবা মানুষের মুখ। ৫ বাই ১০ হাতের একটি কক্ষে সাকিয়ার স্টুডিও। সেই কক্ষ ঠাসা ছুরি-কাঁচি থেকে শুরু করে নানা আকারের যন্ত্রাংশে। আছে কেক তৈরির নানা উপকরণও। চট্টগ্রাম নগরের নিজাম আবাসিক এলাকার বাসায় গিয়েও প্রায় একই ধরনের দৃশ্যের দেখা মেলে। 

 সাকিয়া বললেন, ‘ শখের বসে কেকও বানাতে শুরু করি। এ থেকে আয় হবে—সেটা কখনো ভাবিনি। আর এই কাজের পেছনে আমাকে সার্বক্ষণিক উৎসাহ দিচ্ছেন বড় ভাই আর আর স্বামী এমরান শওকত।’

সাকিয়ার কাছে আসা কেকের ফরমাশের মধ্যে বেশির ভাগই—বিভিন্ন অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক। অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক বেশ কিছু নকশা করে ক্রেতাদের দেখান। আবার ক্রেতা নিজেরাও নকশা দেন। একটা কেক বানাতে এক থেকে তিন দিন সময় লাগে। কেকের প্রায় সব উপকরণই আসে দেশের বাইরে থেকে।

সাকিয়া সুলতানা স্বপ্ন—একদিন তাঁর ব্যবসার পরিসর আরও বাড়বে। দেবেন একটি বড় কারখানা। সবখানে ছড়িয়ে পড়বে তাঁর কেকের সুনাম।