Thank you for trying Sticky AMP!!

শত কীর্তিমানের জন্ম দিয়েছে যে বিদ্যালয়টি

১৭১ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় l প্রথম আলো

নিখিল ভারত কংগ্রেসের সভাপতি যাত্রামোহন সেন, কবি ও সাহিত্য-সমালোচক শশাঙ্ক মোহন সেন, ইতিহাসবিদ শরৎচন্দ্র দাশ, কবি নবীনচন্দ্র দাশ, পুঁথি গবেষক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কিংবা গবেষক ও লেখক অধ্যাপক ড. আহমদ শরীফের মতো মনীষী ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জন্মেছেন। তবে তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা মিল রয়েছে। আর সেটি হলো, তাঁরা সবাই পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র।
পটিয়া সরকারি কলেজ ও এএস রাহাত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঝে বিশাল এলাকাজুড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ঘেঁষে পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের অবস্থান। বিদ্যালয়ে ঢুকতেই নজরকাড়া ফুলের বাগান। ৯ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এই বিদ্যালয়ে রয়েছে দুটি খেলার মাঠ। মাঝারি আয়তনের একটি মাঠের তিন দিকে বিদ্যালয়ের চারটি একাডেমিক ভবন। সুবিশাল আরও একটি মাঠ রয়েছে সীমানাপ্রাচীরের বাইরে।
এ বছর ১৭১ বছর পূর্ণ হলো এই বিদ্যালয়ের। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা ১২ শ। আটজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক রয়েছেন ২১ জন। পুরোনো এই বিদ্যালয়ে রয়েছে ১০ হাজার বইসমৃদ্ধ পাঠাগার। তবে এত বছরেও জাতীয়করণ হয়নি বিদ্যালয়টির। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দান করা সম্পদ ও অর্থ দিয়েই এটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে দুর্গা কিঙ্কর দত্ত যখন এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, তখন দক্ষিণ চট্টগ্রামে টেকনাফ পর্যন্ত কোনো বিদ্যালয় ছিল না। শুরুতে এটি ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুর্গা কিঙ্কর দত্ত নিজেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।

বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ। এখানেই নিয়মিতই খেলাধুলা করে শিক্ষার্থীরা l প্রথম আলো

১৮৫০–এর দশকে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বিদ্যালয়টিকে মাধ্যমিক ইংরেজি বিদ্যালয়ে উন্নীত করে। ১৮৫৯ সালে এটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের রূপান্তরিত হয়। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এন্ট্রান্স (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশ নেন। ওই বছর পরীক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে মাত্র একজনই পাস করেছিলেন। তিনি হচ্ছেন সুচক্রদণ্ডী গ্রামের উমাচরণ খাস্তগীর।
বিদ্যালয়ের পাশে বিশাল খেলার মাঠটিরও আছে নানা ইতিহাস। এই মাঠে ১৯৪৩ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু ভাষণ দেন। ১৯৭০ ও ৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও দুবার এই মাঠে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন।
তবে বহু ইতিহাস বুকে ধারণ করা এই বিদ্যালয়কে এখনো জাতীয়করণ করা হয়নি। বিজ্ঞান গবেষণাগার ও কম্পিউটার ল্যাব চলছে খুঁড়িয়ে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টি নিয়ে গর্ব করলেও এসব সমস্যা দূর না হওয়ায় তারা হতাশ। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সঞ্জয় বড়ুয়া বলে, ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ে মিলনায়তন নেই। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষেরও অভাব রয়েছে। বিশাল মাঠ থাকলেও তাতে গরু-ছাগলের হাট বসে। বিজ্ঞান গবেষণাগার এবং কম্পিউটার ল্যাবেও নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটার।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সারা দেশে ছড়িয়ে আছে আমাদের বিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় ভালো লেখাপড়ার এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করছি আমরা। উপজেলার একটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় সরকারি হলেও এই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়নি। কিন্তু বর্তমানে এ প্রাচীনতম বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ করা সময়ের দাবি। সরকারি হলে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টির বিদ্যমান সমস্যাগুলোর নিরসন হবে।’