Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে যিনি তৃপ্ত

শাহজাহান কবীর

শৈশবেই বুঝতে পেরেছিলেন, সমাজের ছোট-বড় সবাই শিক্ষকদের সম্মান করে। সেই সম্মানই মো. শাহজাহান কবীরকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল শিক্ষকতা পেশায় আসতে। কৃষক ঘরের ছেলে ছিলেন শাহজাহান। প্রচণ্ড কষ্ট করে এত পথ পাড়ি দিয়েছেন। ছেলেবেলার স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়েছে। সমাজের সব বয়সী মানুষের সম্মান অর্জন করেছেন তিনি।

তাঁর শিক্ষকতা জীবনে এখন পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৬টি ব্যাচ বের হয়েছে। সেই শিক্ষার্থীরা যখন এসে দেখা করেন, খোঁজ নেন কিংবা ফোন করেন, তখন শাহজাহান কবীরের মনে হয়, শিক্ষক হিসেবে এটাই জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া ও অর্জন। তাঁর ভাষায়, ‘শিক্ষকতায় বাঁচতে চাই।’

মো. শাহজাহান কবীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর কেজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান পরীক্ষা নিরীক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কুমিল্লার মুরাদনগরের কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি।      থাকেন অবশ্য ফতেহপুর কেজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে।

মো. শাহজাহান কবীর ১৯৮৭ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর ডিআর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৯ সালেকুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৯২ সালে বিএ (সম্মান) ও ১৯৯৬ সালে বিএড সম্পন্ন করেন। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ২০১০ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এর মধ্যে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতেও স্নাতকোত্তর করেন।

১৯৯১ সালের ১ আগস্ট কুমিল্লার মুরাদনগরের কামাল্লা সিনিয়র মাদ্রাসায় প্রথম শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৯৭ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ওই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। পরদিনই যোগ দেন লাকসামের হাতিমারা উচ্চবিদ্যালয়ে, সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে। ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট বিদায় নেন সেখান থেকে। একই বছরের ২৯ আগস্ট যোগ দেন বর্তমান কর্মস্থলে। প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য ২১ জনের মধ্যে তিনিই প্রথম হয়েছিলেন।

শাহজাহান কবীর বলেন, ‘শিক্ষকতা আমার নেশা, পেশা নয়। প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে গেলে শিক্ষার্থীরা নতুন কিছু পায়। তখন শিক্ষক হিসেবে আত্মতৃপ্তি কাজ করে।’

শাহজাহান প্রতিদিন ছুটির পর অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে দেড় ঘণ্টার দুটি বিশেষ ক্লাস নেন। রাশেদুল ইসলাম, মো. সুহান, আরাফাত খান, নাজিম উদ্দিন, কামরুল হাসান, মো. আলভি তাঁর বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তারা বলল, ‘শাহজাহান স্যার যেকোনো বিষয় খুব সহজ করে বুঝিয়ে দেন। দুর্বল ছাত্রদের বেশি গুরুত্ব দেন। তাঁর পড়ানোর পদ্ধতি অনেক সহজ। সমস্যায় পড়লে আমরা তাঁর কাছেই যাই।’

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনও করলেন অকুণ্ঠ প্রশংসা, ‘পাঁচ বছর ধরে স্যারের অধীন কাজ করছি, কোনো দিন বাজে কথা বলেননি। স্যার নিজের কাজটা নিজেই করেন।’

মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘লক্ষ্য থাকলে যেকোনো কিছুই সম্ভব। চেষ্টা মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যায়। আমিও চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো কিছু করার জন্য।’