Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষায় এগোচ্ছে খুমি তরুণ-তরুণীরা

বান্দরবানের পিছিয়ে থাকা খুমি সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে মূলধারার শিক্ষায়। গত দুই বছরে এই সম্প্রদায়ের ২২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ১৭ জনের ভেতর উত্তীর্ণ হয়েছিল ১১ জন। তবে এবার ১৩ জন খুমি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১ জনই এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন ছাত্রী ও নয়জন ছাত্র। পাসের হার বাড়ায় খুশি এই সম্প্রদায়ের মানুষজন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় ১ হাজার ৭২৯ জন খুমি বসবাস করে। তবে খুমি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (কেএসএ) নেতাদের মতে, জেলায় খুমিদের প্রকৃত সংখ্যা তিন হাজারের মতো হবে। আদমশুমারিতে খুমি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বরাবরই কম উঠে আসে। অনেক খুমি পরিবারের বসবাস দুর্গম এলাকায় হওয়ায় তারা পরিবার ও পাড়া গণনার বাইরে থেকে যায়।

 খুমি সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলেছেন, মূলত দুর্গম এলাকায় বসবাসের কারণে অন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তুলনায় শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে তারা। এখন তাদের ছেলেমেয়েরা নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে ধীরে ধীরে শিক্ষিত হচ্ছে। বর্তমানে ২০ জন খুমি তরুণ-তরুণী এইচএসসি ও পাঁচজন স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। এ পর্যন্ত স্নাতক উত্তীর্ণ হয়েছেন দুজন।

তবে আর্থিক সংগতি না থাকায় অনেক খুমি শিক্ষার্থী লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছে। কেএসএ-এর সভাপতি নাংফ্রা খুমি জানিয়েছেন, দরিদ্র খুমি ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সংস্থার ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করে। এবার থানচি থেকে ছয়জন, রোয়াংছড়ির তিনজন ও রুমা থেকে দুজন এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে কেউ জিপিএ-৫ পায়নি। থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ ছাত্রাবাসগুলোতে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারলেও এইচএসসি পর্যায় থেকে সেই সুযোগ নেই। এ জন্য উত্তীর্ণ ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে কি না, সন্দেহ রয়েছে।

এসএসসি উত্তীর্ণ ছাত্রী সিরি খুমি জানায়, সে আলীকদম উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। তার বাড়ি থানচি উপজেলার দুর্গম তিন্দুতে। বান্দরবান মহিলা কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করলেও তার বাবা খরচ চালাতে পারবেন না। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের সবার একই অবস্থা বলে সিরি খুমি জানিয়েছে।

খুমিদের মধ্যে প্রথম স্নাতক উত্তীর্ণ লেলুং খুমি বলেন, তাঁর স্মরণকালে এ বছর সর্বোচ্চসংখ্যক খুমি ছাত্রছাত্রী এসএসসি পাস করেছে। পাসের হার বৃদ্ধিতে ও বেশিসংখ্যক ছেলেমেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ায় তাঁরা সবাই খুশি। কিন্তু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তারা সবাই দুর্গম এলাকায় বসবাস করে এবং তাদের মা-বাবা খুবই দরিদ্র। লেলুং খুমি বলেন, বিত্তবান ও মানবতাবাদীরা সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এলে পিছিয়ে পড়া খুমি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারবে। না হলে এসএসসি উত্তীর্ণ অধিকাংশ ছেলেমেয়ের ঝরে পড়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।