Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশুদের অনলাইন ক্লাস

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কয়েক মাস ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু তাই বলে পুরোপুরি থেমে নেই শিক্ষাদান কর্মসূচি। এই নতুন অবস্থায় পাঠদান অব্যাহত রাখতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা।

স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন ইত্যাদি ডিভাইস ব্যবহার করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যবস্থা ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকার জন্য নতুন। আর দীর্ঘ মেয়াদে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের রয়েছে কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। যত দিন করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমে না আসে ততদিন অনলাইন শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অভিভাবকদের জানতে হবে কীভাবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে শারীরিক ক্ষতি না করে শিশুদের এতে অভ্যস্ত করা যায়।

দীর্ঘ সময় ধরে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের হাড়, সন্ধি ও পেশির সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এসব সমস্যার মধ্যে ঘাড় ব্যথা অন্যতম। দীর্ঘসময় ঘাড় নুইয়ে মোবাইল বা ল্যাপটপ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার দরুন শুরু হয় ঘাড় ব্যথা। এ ক্ষেত্রে ঘাড়ের সামনের দিকে যে ফ্লেক্সর গ্রুপের মাংসপেশি রয়েছে সেগুলো সংকুচিত হয়ে থাকে এবং পেছনের দিকের এক্সটেনসর গ্রুপের মাংসপেশি অস্বাভাবিক ভাবে টান টান এবং দুর্বল হয়ে পরে।

দীর্ঘ সময় ধরে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের হাড়, সন্ধি ও পেশির সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এসব সমস্যার মধ্যে ঘাড় ব্যথা অন্যতম।

দুই গ্রুপের মাংসপেশিতে অস্বাভাবিক টানের ফলে তাদের দৈর্ঘ্যে পরিবর্তন আসে এবং মেরুদণ্ডের উত্তল-অবতল বক্রতা বজায় থাকে না। কখনো কখনো এই মাংসপেশিতে ট্রিগার পয়েন্ট তৈরি হয়, যার ফলে ব্যথা ঘাড়ের আশপাশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পরতে পারে।

যেসব শিশু থুতনি সামনের দিকে রেখে কাজ করে (পোকিং চিন) তাদের মাথার ভর ঘাড়ের কশেরুকাগুলোর মাঝখানে থাকা ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক বরাবর এসে পড়ে। ফলে মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা বাড়তে থাকে। আবার স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ব্যথা হতে পারে। চোখের পেশি দুর্বল হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ হেডফোন দিয়ে কথা বলায় বাড়ছে কানের নানা ধরনের সমস্যা। তাই বিরতি দিয়ে কথা শুনতে হবে। অনলাইন ক্লাসের মাঝে বিরতি দিতে হবে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের। মাঝে মাঝে স্ক্রিন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দূরে দিতে হবে।

পেশ ও হাড় সন্ধির সমস্যা প্রতিরোধে প্রয়োজন সঠিক দেহ বিন্যাস এবং আরগোনমিক পরিবর্তন। আমাদের বাসার ডেস্কটপ বা ল্যাপটপগুলো বড়দের উচ্চতা আর প্রয়োজন অনুযায়ী বসানো। শিশুদের উচ্চতার ওপর নির্ভর করে এগুলোর উচ্চতা পুনর্বিন্যাস করতে হবে।

বর্তমানে বাজারে মোবাইল বা ল্যাপটপ এর বিভিন্ন রকম স্ট্যান্ড পাওয়া যায়। এই স্ট্যান্ডগুলো ব্যবহার করে মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের উচ্চতার পরিবর্তন এমনভাবে করতে হবে যাতে শিশুর ঘাড় সোজা থাকার সঙ্গে সঙ্গে তার চোখের অবস্থান স্ক্রিনের মাঝ বরাবর থাকে। দরকার হলে টেবিলের উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে উঁচু চেয়ারের বন্দোবস্ত করতে হবে।

মোবাইল বা ল্যাপটপ স্ট্যান্ড ব্যবহার করে মোবাইল বা ল্যাপটপের উচ্চতা পরিবর্তন করে শিশুর উপেযাগী করে নিতে হবে।

উচ্চতা পরিবর্তন করা যায় এমন চেয়ারও বাজারে পাওয়া যায়। ছোট মোবাইল স্ক্রিন থেকে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখের আরাম বেশি হয়। এ ছাড়া ঘাড় ব্যথা প্রতিহত করতে দুই ঘণ্টা পর পর সার ভাইকাল এক্সটেনশন এবং রিট্রাকশন এক্সারসাইজ করতে হবে। বসে থাকার সময় অবশ্যই মেরুদণ্ডের ‘রাইট অ্যাঙ্গেল’ পজিশন বজায় রাখতে হবে। এর জন্য হিপ জয়েন্ট থেকে মাথা ৯০ ডিগ্রি পজিশন এবং হিপ জয়েন্ট থেকে হাঁটুর অবস্থান ৯০ ডিগ্রি পজিশনে রাখতে হবে। যদি শিশুদের ঘাড় ও মাথা ব্যথার সমস্যা তীব্র হয়ে দাঁড়ায় তবে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন।

লেখক: এহসানুর রহমান, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট, সি আর পি, সাভার, ঢাকা।