Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশুর জলবসন্তে

জলবসন্ত হলে গোসলের পর আলতো করে শরীর মুছে দিতে হবে। মডেল: আয়ান ও হেমা। ছবি: অধুনা

গরম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্বস্তিকর পরিবেশ বা শুষ্ক আবহাওয়ায় জলবসন্ত বা চিকেন পক্সের সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ—সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, ‘এই রোগ সাধারণত একটু সচেতন থাকলে কয়েক দিনেই ভালো হয়ে যায়। ত্বকের দাগ থেকে যেতে পারে দীর্ঘদিন। শিশুর শরীরে দ্রুত জটিলতা দেখা দেয় বিধায় প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।’
কীভাবে ছড়ায়?
দ্রুত বাতাসের মাধ্যমেই একে অন্যকে আক্রমণ করে। তা ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, কাপড় বা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ছড়ায়।
কীভাবে বুঝবেন চিকেন পক্স?
শুরুর দিকে শরীর ম্যাজম্যাজ করা, মাথা ব্যথা করা, গা-হাত-পা ব্যথা করা এমনকি পিঠেও ব্যথা হতে পারে। একটু সর্দি-কাশিও হতে পারে। এরপর জ্বর জ্বর ভাব হবে। এগুলো রোগের লক্ষণ। এরপর শরীরে ঘামাচির মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। তারপর সেটা একটু পর বড় হতে থাকে এবং ভেতরে পানি জমতে থাকে। খুব দ্রুতই শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। আর এভাবে জলবসন্ত হয়ে গেলে

রোগীর অনেক জ্বর আসবে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে আর সঙ্গে সর্দি-কাশিও থাকবে।

যাদের কখনো হয়নি
সাধারণ ঠান্ডা জ্বর ও জলবসন্তের প্রাথমিক লক্ষণের সঙ্গে অনেক মিল আছে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় ভুল বোঝার আশঙ্কা থাকতে পারে। জলবসন্তের ক্ষেত্রে চার-পাঁচ দিন পর শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিতে থাকে। গর্ভাবস্থায় জলবসন্ত হলে সেটা বাচ্চার জন্য খুব মারাত্মক পরিণতি ডেকে নিয়ে আনতে পারে। বাচ্চার মস্তিষ্কের প্রদাহ, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত বা চর্মরোগ হতে পারে।

শিশুর চিকেন পক্স হলে করণীয় কী?
সাধারণত চিকেন পক্সে আক্রান্ত শিশুর কোনো বিশেষ ওষুধের প্রয়োজন হয় না। চিকেন পক্স প্রতিরোধ ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। শিশুকে ভ্যাকসিন দিয়ে রাখুন। শিশুর শরীরে দ্রুত জটিলতা দেখা দেয় বিধায় প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অভিভাবকের করণীয়
চিকেন পক্স হলে শিশুদের খাওয়ার রুচি কমে যায়। তাই এ সময় শিশুদের খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। চিকেন পক্স হওয়ার পাঁচ-ছয় দিন পর নিমপাতা, হলুদ একসঙ্গে সব শরীরে মেখে পাঁচ-ছয় দিন গোসল করিয়ে দিন। ছোঁয়াচে রোগ বিধায় পোশাক, কাঁথাসহ শিশুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখার চেষ্টা করুন।

প্রতিরোধের উপায় কী?
যতটুকু পারা যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে। বসন্ত প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।

কী খাওয়াবেন?
দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করাবেন। এ সময় রোগীর অনেক পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন হয়। তবে খাবারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, সবজি—সবকিছুই খাওয়া যাবে। আর শরীরের দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে রোগীকে বেশি করে খেতে হবে। চকলেট, বাদাম ও বীজ-জাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তবে মুখের তালু ও অভ্যন্তরে পক্সের গুটি দেখা দেওয়ায় এ সময় ঝালযুক্ত খাবার খাবেন না। অ্যালার্জি বাড়তে পারে এমন খাবার বাদ দিন।

কীভাবে গোসল করাবেন?
জলবসন্ত হওয়ার পরও নিয়মিত গোসল করা যায়। এতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে গোসল শেষে শরীর ঘষে মোছা যাবে না, আলতো করে মুছে নিতে হবে। স্বাভাবিক পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে। আর রোগীর ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর, শোয়ার ঘর অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু এ রোগে শরীরে দাগ হয়, তাই এ সময়ে ডাবের পানি খুব উপকারী। ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া ও গোসল করলেও উপকার পাওয়া যাবে। রোগীকে একগাদা কাপড়চোপড়ে না জড়িয়ে তাকে হালকা সুতির কাপড় পরান৷

চিকিৎসা কী?
এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হলো, ফুসকুড়ি না শুকানো পর্যন্ত রোগীকে আলাদা করে রাখা এবং উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া। শতকরা ৮০ শতাংশ রোগীর বেলায় যদি রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো থাকে, তাহলে ভাইরাসজনিত রোগের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সাবধানতা অবলম্বন করলে কদিন পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।

কীভাবে চুলকানি নিবারণ করা যায়?
চেষ্টা করা যাবে না চুলকানোর। কারণ, চুলকানোর ফলে তার সংক্রমণ হতে পারে এবং ত্বকে স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে৷ চুলকানিকে সব সময় পুরোপুরি উপেক্ষা করা যায় না। সে ক্ষেত্রে আলতোভাবে চুলকানো যেতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে চুলকানির ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তাজা নিমপাতাকে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে গোসল করালে বেশ ভালো উপকার হয়।
লেখক: চিকিৎসক