Thank you for trying Sticky AMP!!

সততা ও সম্মান একই মুদ্রার দুই পিঠ

>

মাইকেল ব্লুমবার্গ

মাইকেল ব্লুমবার্গ একজন মার্কিন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ। তিনি ব্লুমবার্গ এলপি নামের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। গত ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন বক্তা ছিলেন তিনি। বলেছেন মানুষের জীবনে সততার গুরুত্বের কথা

আজ তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোচ্ছ। এই সীমানার বাইরে তোমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, কে জানে! রাইসের সাবেকদের মধ্যে নোবেলজয়ী আছেন। আছেন সংসদ সদস্য, মহাকাশচারী, শিল্পপতি, পুরস্কারজয়ী শিল্পী, বিজ্ঞানী, আরও অনেকে। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, তোমাদের একজন সহপাঠী এরই মধ্যে আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে ব্লুমবার্গ এলপিতে রাইসের সাবেকের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩। আমি নিশ্চিত, আমার মতো উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনাও তোমাদের কারও কারও আছে।

আমি যখন এখানে বক্তৃতা করার কথা ভাবছিলাম, আমার মনে পড়ছিল রাইসের একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতির কথা। তা হলো অনার কোড (বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিয়ম কানুন, যা শিক্ষার্থীদের মেনে চলতে হয়)।

তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে, প্রথম সপ্তাহেই তোমাদের সামনে অনার কোড উপস্থাপন করা হয়েছে। অনার কোডের ওপরে হয়েছে তোমাদের প্রথম কুইজ পরীক্ষা। ভাবলাম, যেভাবে তোমরা শুরু করেছ, শেষটাও একইভাবে হোক। আজ আমি ‘অনার’ (সম্মান) সম্পর্কে কিছু কথা বলব। ভয় নেই, এবার কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না।

এই ক্যাম্পাসে পা রাখার পর থেকে তোমরা যত পরীক্ষা দিয়েছ, সব পরীক্ষার শুরুতেই তোমাদের একটি বিবৃতিতে সই করতে হয়েছে। যার শুরুতেই লেখা থাকে, ‘অন মাই অনার’ (আমার সম্মানে)। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছ, এই কথাটার মানে কী? তোমাদের মধ্যে যারা ভাষাতত্ত্বে ‘মেজর’ করেছ, তোমরা হয়তো জানো, সম্মান ও সততা শব্দ দুটি একই মুদ্রার দুই পিঠ। এমনকি লাতিন শব্দ ‘অনেসটাস’-এর দুই রকম অর্থ হয়। সৎ ও সম্মানিত।

সম্মানিত হতে চাইলে তোমাকে অবশ্যই সৎ হতে হবে। এর অর্থ হলো সততার সঙ্গে চলা, কথা বলা। সততা বজায় রাখতে গিয়ে যদি তোমাকে কোনো মাশুল দিতে হয়, তবু তা-ই কোরো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুমি সৎ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছ। যারা দেশকে ভালোবাসে, এই দায়বদ্ধতা তাদেরও।

ছোটবেলায় আমরা সবাই আমেরিকার ইতিহাস পড়তে গিয়ে জর্জ ওয়াশিংটন আর সেই চেরিগাছের গল্পটা শুনেছি। (খুব ছোটবেলায় জর্জ ওয়াশিংটন একবার একটা চেরিগাছ কেটে ফেলেছিলেন। ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা। ছোট্ট ওয়াশিংটন তখন বলেছিলেন, ‘আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না। হ্যাঁ, আমিই গাছটা কেটেছি।’ বাবা তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘তোমার এই সততার দাম হাজারটা গাছের চেয়ে বেশি।’ —বি. স.) এই গল্পটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আমরা বহন করেছি, কারণ গল্পের পেছনে একটা অনেক বড় সত্য আছে।

গল্পটা কেবল জর্জ ওয়াশিংটনের বলেই কিন্তু আমরা এটা মনে রাখিনি। মনে রেখেছি কারণ জাতি হিসেবে এটা আমাদের গল্প। সন্তানদের কাছে, নেতাদের কাছে আমাদেরও একটাই চাওয়া—সততা।

স্নাতকেরা, আজকের পর তোমাদের আর রাইসের অনার কোড দিয়ে বেঁধে রাখা যাবে না। তোমাদের জীবনের অনার কোড তোমরা নিজেরাই ঠিক করবে। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় তোমাকে অনার কোডের সত্যিকার অর্থ বোঝার একটা অসাধারণ সুযোগ দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তোমরা তোমাদের কাজের জায়গায়, সম্প্রদায়ে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার সময়, সর্বত্র সততা বজায় রাখবে।

আজই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট লিব্রোনকে বলছিলাম, আমি রাইসের জন্য কিছু দান করতে চাই। শুনে তাঁর চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল। তখন আমি বললাম, ‘না, আমি আর্থিক দানের কথা বলছি না।’ আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা গাছ দান করতে চাই। যে গাছের সামনে লেখা থাকবে, ‘২০১৮ সালের ক্লাসের সম্মানে’। তোমরা যখন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে ক্যাম্পাসে আসবে, এই গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবে; আমি আশা করি তোমাদের মনে পড়বে কেন এই গাছটা লাগানো হয়েছে, আমাদের দেশের জন্য এই গাছের কী মানে। জীবনভর, তুমি যেখানে যখনই কোনো চেরিগাছ কেটে ফেলবে, স্বীকার করবে। তাহলেই যাঁরা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁদের কাছেও একই রকম সততা দাবি করতে পারবে।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ

সূত্র: স্পিকোলা ডট কম