Thank you for trying Sticky AMP!!

সমাজের জন্য কাজ করুন

>

জায়থমা ভিক্রমানায়েক। ছবি: সুমন ইউসুফ

আজ আন্তর্জাতিক যুব দিবস। দিবসটি সামনে রেখে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ৫ আগস্ট বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘ মহাসচিবের তরুণ দূত জায়থমা ভিক্রমানায়েক। ঢাকায় গতকাল ১১ আগস্ট শ্রীলঙ্কার এই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন মো. সাইফুল্লাহ

এই প্রথম বাংলাদেশে এলেন?

হ্যাঁ। আমি বিশ্বের নানা দেশে ঘুরে বেড়াই। কোথাও এত দিন থাকা হয় না। একদিক দিয়ে এটা আমার সবচেয়ে লম্বা সফর বলা যায়।

কেমন অভিজ্ঞতা হলো?

বেশ ভালো। আমি যেহেতু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এসেছি, সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেছি। যেসব স্থানীয় তরুণ রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করছেন, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আছেন, তাঁদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা।

আপনি বয়সে একেবারেই তরুণ। প্রায় প্রতিদিন আপনাকে কূটনীতিক, বড় বড় নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলতে হয়, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সামনে বক্তৃতা দিতে হয়। আপনার কখনো নার্ভাস লাগে?

হ্যাঁ, তা তো লাগেই। সব সময়!

কিন্তু আমি আপনার বক্তৃতা শুনেছি। খুব ভালো বলেন আপনি।

আমি নিশ্চয়ই আমার মনের ভয় লুকিয়ে রাখার কাজটা খুব ভালো পারি। (হাসি)

শ্রীলঙ্কায় আপনি ‘হ্যাশট্যাগ জেনারেশন’ নামে একটা সংগঠন গড়ে তুলেছেন। নামটা বেশ চমকপ্রদ।

আমার বন্ধু সেনেল ভানিয়ারাচির দেওয়া নাম। আমরা চার বন্ধু মিলে এই সংগঠন শুরু করেছিলাম। আমি, সেনেল, চাপা পেরেরা ও মাহিশা বলরাজ। আমি জাতিসংঘের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, ওরা সংগঠনটা চালিয়ে যাচ্ছে।

সংগঠন তৈরির পেছনের ভাবনাটা যদি বলেন...

আমাদের প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুবই সরব। আমরা ফেসবুকে আন্দোলন করি, টুইটারে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘হ্যাশট্যাগ’(#) প্রথাকে আমরা বাস্তবের দুনিয়ায় কাজে লাগাতে চেয়েছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষমতাকে আমি ছোট করে দেখছি না। আপনি অবশ্যই ঘরে বসে একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণেরা এসব ব্যাপারে সচেতন, কিন্তু অনেক সময় তাঁরা অনলাইনের হ্যাশট্যাগকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারেন না। শ্রীলঙ্কা এমন একটা দেশ, যারা বিশ্বের প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছিল। কিন্তু এখন আপনি যদি শ্রীলঙ্কার সংসদের দিকে তাকান, সেখানে নারী সাংসদের সংখ্যা মাত্র ৫ শতাংশ। এমনকি আফগানিস্তানেও সংখ্যাটা এর চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে স্থানীয় সরকারে নারী সদস্যের হার ১.২। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিলেন নারী। জাতিসংঘে যোগ দেওয়ার আগে আমি শ্রীলঙ্কার প্রশাসনিক দপ্তরে কাজ করেছি। আমাদের ব্যাচে ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ২০ জন ছেলে ছিলেন। স্কুল, কলেজে, অফিসে এত নারী, তাঁরা এত ভালো করছেন, অথচ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীরা প্রায় নেই বললেই চলে। এ বিষয়টা নিয়েই আমরা কাজ করতে চেয়েছি।

আপনি কি মনে করেন, পরিবর্তন আনতে হলে তরুণদের রাজনীতিতে আসা উচিত?

আমি মনে করি পরিবর্তন আনার দুটো পথ আছে। যেমনটা কিছুদিন আগে আমরা দেখলাম। তরুণেরা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় সবার সামনে তুলে ধরলেন। বন্ধুরা সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে, এটা তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। রাস্তায় নেমে এসে নীতিনির্ধারকদের জানিয়েছেন, আমরা একটা সমাধান চাই। বাংলাদেশ সরকার তাঁদের কথা শুনেছে, নতুন আইন পাস করেছে জেনে আমি খুবই খুশি। এই চিত্র শুধু বাংলাদেশের নয়। আরব বসন্ত থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা প্রান্তেই এমনটা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও হাইস্কুলের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নেমে এসে ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের মতো ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। রাজনীতির বাইরে থেকে আমরা যেমন আমাদের দাবিটা জানাব, তেমনি নিজেরাও নীতিনির্ধারণী জায়গাগুলোতে যেতে চেষ্টা করব। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের তরুণদেরই রাজনীতিতে আসা উচিত। জাতিসংঘে আমার অফিসে আমরা একটা প্রচারণা চালাচ্ছি, ‘হ্যাশ ট্যাগ নট টু ইয়ং টু রান’। বিশ্বের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বয়স ত্রিশের কম, কিন্তু ত্রিশের কম বয়সী সাংসদের হার মাত্র ২ শতাংশ। পৃথিবীতে সাংসদদের গড় বয়স হলো ৫৫ বছর! ফিনল্যান্ডের মতো উন্নত দেশেও তরুণ সাংসদের সংখ্যা মাত্র ৫ জন। তরুণদের রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে সারা বিশ্বেই আইনি ও সাংগঠনিক বাধা আছে। বয়স ৩৫ বা ৪০ না হলে আপনি এত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে পারবেন না, অথচ ১৮ বছর বয়সে ভোটাধিকার পাবেন, এটা তো হতে পারে না। সমাজ বলে, তোমার অভিজ্ঞতা নেই, এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ তুমি করতে পারবে না। কিন্তু সিলিকন ভ্যালির দিকে তাকান। তরুণেরাই তো বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞান, বিনোদন, সব ক্ষেত্রেই তারুণ্যের জয়জয়কার। বিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যেমন তরুণেরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, রাজনীতিতেও আমরা এই প্রতিফলন চাই।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের কয়েকটি তরুণ সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে জায়থমা ভিক্রমানায়েক। ছবি: জাতিসংঘ/মেহের নিগার

বাংলাদেশে কোনো তরুণ যদি আপনার মতো জাতিসংঘের হয়ে কাজ করতে চান, তাঁর জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?

আমি যখন বড় হয়েছি, তখন কিন্তু জানতামও না যে এ ধরনের কাজের কোনো সুযোগ আছে। পাঁচ বছর আগে আমার এই পদটির অস্তিত্বও ছিল না। আমরা এমন একটা পৃথিবীতে বাস করছি, যেটা ক্রমাগত বদলাচ্ছে। জাতিসংঘে কাজ করব, এ রকম কোনো পরিকল্পনা আমার ছিল না। আমার কাছে সব সময় মনে হয়েছে, জীবনের একটা নিজস্ব গতি আছে। প্রতিটা পদে আমি এমন কোনো না কোনো বিষয় পেয়েছি, যেটা নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। যখন যেটা ভালো লেগেছে, সেটাই করেছি। পুরস্কার, স্বীকৃতির জন্য আমি কাজ করিনি। আমার কাজের জন্যই পুরস্কার, স্বীকৃতি এসেছে। কিছু মানুষ ভেবেছেন যে আমি এই কাজটার যোগ্য, তাঁরা আমাকে মনোনীত করেছেন। সৎভাবে, সত্যের সঙ্গে থেকে আপনি আপনার পছন্দের কাজটা করে যান। আমার দেশে আমি বিনা মূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছি। দেশের জনগণ যদি ঠিকমতো আয়কর না দিতেন, তাহলে আমি হয়তো এখানে আসতে পারতাম না। সমাজ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি, কিছু তো ফিরিয়েও দিতে হবে। সমাজের জন্য কাজ করুন। যে জায়গাটা আপনার প্রাপ্য, সেটা আপনি পাবেন।

তরুণদের জন্য জাতিসংঘের নানা রকম প্রকল্প আছে। আন্তর্জাতিকভাবে সভা, সম্মেলন, কর্মশালা আয়োজন করা হচ্ছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বাংলাদেশের সব তরুণের কাছে কিন্তু এই সুযোগের খবর পৌঁছায় না। আমি হয়তো একটা গ্রামের কলেজে পড়ি। কিন্তু আমি আমার ভাবনাটা সারা দুনিয়াকে জানাতে চাই। সে ক্ষেত্রে আমি কী করতে পারি?

জাতিসংঘের মহাসচিবও এ বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন। সত্যি বলতে জাতিসংঘ যে ভাষায় কথা বলে সেটা একটু কঠিন, অনেক সময় তরুণদের জন্য সহজবোধ্য হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা শুধু বলি, অপর প্রান্তের কথাটা শুনতে পাই না। কিন্তু যতটা সম্ভব সহজভাবে কথা বলতে, শুনতে আমরা খুবই আগ্রহী। জাতিসংঘের যোগাযোগপ্রক্রিয়া আমরা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি, যেন আমাদের ভাষাটা তরুণবান্ধব হয়। আশা করছি বাংলাদেশে জাতিসংঘের যে দপ্তর আছে, তারাও এটা নিয়ে কাজ করবে। আর তরুণদের আমি বলব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করুন। যাঁরা একেবারেই প্রত্যন্ত এলাকায় থাকেন, তাঁদের হাতেও কিন্তু মোবাইল আছে, ইন্টারনেট আছে। জাতিসংঘের পেজগুলোতে চোখ রাখুন। আপনার ভিডিও বা বার্তা পাঠাতে পারেন, ভাবনাটা আমাদের জানাতে পারেন।